ধর্ম ডেস্ক : রাসুলুল্লাহ (সা.) অত্যন্ত উচ্চ রুচিসম্পন্ন ব্যক্তি ছিলেন। তাঁর ব্যক্তিগত জীবনের পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা ও পরিচর্যা থেকে সেই রুচি সম্পর্কে ধারণা পাওয়া যায়। বিশেষত তিনি তাঁর চুলের পরিচর্যায় যত্নবান ছিলেন এবং অন্যকেও চুলের পরিচর্যায় উৎসাহিত করতেন।
চুল পরিচর্যায় উৎসাহ : নবীজি (সা.) চুলের পরিচর্যায় উৎসাহিত করে বলেছেন, যার চুল আছে সে যেন চুলের যত্ন নেয়। (সুনানে আবি দাউদ, হাদিস : ৩৬৩২)
কেমন ছিল চুল : কাতাদা (রহ.) বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর চুল কেমন ছিল সে সম্পর্কে আমি আনাস (রা.)-এর কাছে জিজ্ঞেস করেছিলাম। তিনি বললেন, তিনি অত্যধিক কোঁকড়ানো কিংবা একেবারে সোজা চুলবিশিষ্ট ছিলেন না। (শামায়েলে তিরমিজি, হাদিস : ২২)
চুল কতটা লম্বা ছিল : আনাস ইবনে মালিক (রা.) বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর মাথার চুল দুই কানের মধ্যভাগ পর্যন্ত লম্বা ছিল। (শামায়েলে তিরমিজি, হাদিস : ১৯)
বেশি পরিমাণে তেল দিতেন : আনাস বিন মালিক (রা.) বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) মাথায় অধিক পরিমাণে তেল দিতেন, দাড়ি বিন্যস্ত করতেন এবং বেশির ভাগ সময় মাথায় কাপড় বাঁধতেন। তাঁর কাপড় ছিল তেল ব্যবসায়ীর কাপড়ের মতো। (শামায়েলে তিরমিজি, হাদিস : ৩৩)
ডান দিকে সিঁথি করতেন : আয়েশা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) অজু করতে, জুতা পরতে এবং চুল আঁচড়াতে যথাসম্ভব ডান দিক থেকে করা পছন্দ করতেন। (সুনানে নাসায়ি, হাদিস : ৫২৪১)
পরিপাটি থাকা পছন্দ করতেন : রাসুলুল্লাহ (সা.) পরিপাটি থাকা পছন্দ করতেন, কাউকে এলোমেলো দেখলে তাকে সতর্ক করতেন। আতা ইবনে ইয়াসার (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) মসজিদে ছিলেন। তখন এক ব্যক্তি এলোমেলো চুল ও দাড়ি নিয়ে প্রবেশ করল। রাসুলুল্লাহ (সা.) তাকে বের করে দিতে ইশারা করলেন। যেন তিনি তাকে দাড়ি ও চুল ঠিক করার নির্দেশ দিলেন। লোকটি তা-ই করল এবং ফিরে এলো। তখন রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, শয়তানের মতো এলোমেলো চুল নিয়ে আসার চেয়ে এটাই কি উত্তম নয়? (মুয়াত্তায়ে মালিক, হাদিস : ১৪৯৪)
পরিচর্যা নিয়ে পড়ে থাকা নয় : নিজের পরিচর্যা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, তবে তা নিজের মূল লক্ষ্য বা উদ্দেশ্য নয়। সুতরাং পুরুষ পরিচর্যার পেছনে দীর্ঘ সময় ব্যয় করবে না। আবদুল্লাহ ইবনে মুগাফফাল (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) সব সময় চুল আঁচড়াতে নিষেধ করেছেন, তবে এক দিন পর পর (আঁচড়ালে দোষ নেই)। (সুনানে আবি দাউদ, হাদিস : ৪১৫৯)
ইমাম আহমদ (রহ.) হাদিসের ব্যাখ্যায় বলেছেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) এক দিন পর পর চুলে তেল দিতেন। (আল-মুগনি : ১/৬৭)
ইমাম শাওকানি (রহ.) বলেন, হাদিসটি প্রমাণ করে প্রত্যহ চুল পরিচর্যায় ব্যস্ত হওয়া অপছন্দনীয়। কেননা তা একপ্রকার সাজসজ্জায় ব্যস্ত হওয়া। আর রাসুলুল্লাহ (সা.) অধিক পরিমাণ সাজসজ্জা থেকে নিষেধ করেছেন। (সুনানে আবি দাউদ, হাদিস : ৪১৬০; নায়লুল আওতার : ১/১৫৯)
প্রয়োজনে বেশি সময় দেওয়া : মহানবী (সা.) পুরুষদের চুলের পরিচর্যায় প্রতিদিন সময় ব্যয় করতে নিষেধ করেছেন। কিন্তু প্রয়োজন হলে তা করারও অনুমতি দিয়েছেন। আবু কাতাদা (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, তাঁর মাথায় অধিক চুল ছিল। তিনি রাসুলুল্লাহ (সা.)-কে এ সম্পর্কে জিজ্ঞেস করলে তিনি বলেন, চুল বিন্যস্ত রাখবে এবং প্রতিদিন চিরুনি করবে। (সুনানে নাসায়ি, হাদিস : ৫২৪০)
আল্লাহ সবাইকে চুলের সঠিক পরিচর্যা করার তাওফিক দিন। আমিন।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।