বিনোদন ডেস্ক: বাংলা চলচ্চিত্রের সাদাকালো যুগে অভিনয় করেছিলেন তিনি। কিন্তু তার জনপ্রিয়তা, প্রভাব বিস্তৃত হয়েছে এই আধুনিক সময়েও। কালের গণ্ডি জয় করে কিংবদন্তি হওয়া সেই নায়কের নাম উত্তম কুমার। তাকে শুধু নায়ক বললে যেন পূর্ণতা পায় না, তিনি তো মহানায়ক।
শনিবার (৩ সেপ্টেম্বর) মহানায়কের জন্মদিন। বেঁচে থাকলে ৯৬তম বছরে পা রাখতেন। তিনি যদিও নেই, তার কাজ চিরভাস্মর হয়ে আছে এখনও। তিনি ও তার কাজ নিয়ে চর্চা হয় নিয়মিত।
উত্তম কুমারের সঙ্গে পাঁচটি সিনেমায় কাজ করেছেন টলিউডের কিংবদন্তি অভিনেতা রঞ্জিত মল্লিক। তাদের মধ্যে চমৎকার সম্পর্ক ছিল। রঞ্জিতকে ভাইয়ের মতো স্নেহ করতেন উত্তম। তাই বছর ঘুরে মহানায়কের জন্ম কিংবা প্রয়াণদিন এলে স্মৃতিকাতর হয়ে পড়েন মল্লিক বাবু।
উত্তম কুমারের শেষ সিনেমা ছিল ১৯৮১ সালে মুক্তি পাওয়া ‘ওগো বধূ সুন্দরী’। সেই সিনেমায় উত্তমের শ্যালকের ভূমিকায় অভিনয় করেন রঞ্জিত মল্লিক। স্মৃতির পাতা হাতড়ে রঞ্জিত বলেন, “উত্তমদাকে নিয়ে বলতে শুরু করলে কোথা থেকে শুরু করব আর কোথায় শেষ করব, খুব মুশকিল। পাঁচটা ছবিতে একসঙ্গে কাজ করেছি। অনেক কিছু শিখেছি প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে।’
‘ওগো বধূ সুন্দরী’ সিনেমার শেষ দিনের শুটিং প্রসঙ্গে রঞ্জিত বলেন, ‘এটাই তার শেষ ছবি হবে, কে ভেবেছিল তখন! তার শেষ দৃশ্যের শুটিংয়ের দিন আমি ছিলাম না ফ্লোরে। আমার শুটিং ছিল না। খবরটা শুনে প্রথমে বিশ্বাসই করতে পারছিলাম না যে, উনি নেই। আগের দিন যে মানুষটার সঙ্গে কাজ করলাম, পরের দিন তিনি নেই। বিশ্বাস করতে পারিনি। আজও খুব কষ্ট হয়, যন্ত্রণা হয়।’
শুটিং না থাকলেও উত্তম কুমারের অভিনয় দেখার জন্য সেটে বসে থাকতেন রঞ্জিত। সেই স্মৃতি মনে করে বললেন, ‘তার সঙ্গে যখন সিনেমার কাজ পড়ত, আমার শট না থাকলেও ফ্লোরে বসে থাকতাম, তার অভিনয় দেখতাম। কত কিছু শিখেছি তখন। সেগুলোই পরবর্তীতে কাজে লাগিয়েছি। আবার সরাসরিও অনেক কিছু শিখিয়েছেন। যেমন, এই ছবির সময়ই হাসির একটি ধরন শিখিয়েছিলেন আমায়। হাসি অনেক রকমের হয়। কোন হাসিতে কী রকম লুক দিতে হয়, সেটা দেখিয়েছিলেন। এর মধ্যে আমার যেটা দরকার ছিল ছবির জন্য, তা হলো অবজ্ঞার হাসি। সেটার কৌশল আমাকে সহজভাবে দেখিয়ে দেন তিনি। কেন আজও মানুষ তার ছবি ছেড়ে টেলিভিশনের পর্দা থেকে সরতে পারেন না, এগুলো থেকেই বোঝা যায়।”
রঞ্জিত মল্লিক জানান, মানুষ হিসেবেও বড় মনের ছিলেন উত্তম কুমার। অভিনয়শিল্পীরা বয়স্ক হয়ে গেলে সেভাবে কাজ পান না। উত্তম তাদেরকে খুঁজে খুঁজে কাজের ব্যবস্থা করে দিতেন। রঞ্জিতের ভাষ্য, ‘বয়স হয়ে গেলে ইন্ডাস্ট্রি মনে রাখুক বা না রাখুক উত্তমদা রাখতেন। ছবির আগে বাবা, মা, চাচা এসব চরিত্রের জন্য কে অনেকদিন কাজ পাচ্ছেন না, সেটা মাথায় রেখে তাদের কাজে নিতে পরিচালক-প্রযোজকদের বলতেন। তার কাছে সব খবর থাকত। ঘুরিয়ে-ফিরিয়ে সবাইকে কাজ দিতেন।’
উল্লেখ্য, ১৯৪৮ সালে ‘দৃষ্টিদান’ সিনেমার মাধ্যমে রূপালি পর্দায় আত্মপ্রকাশ করেছিলেন উত্তম কুমার। পরবর্তী তিন দশকে তিনি দুই শতাধিক সিনেমায় কাজ করেন। প্রথম দিকে তার সব সিনেমাই ছিল ফ্লপ। তবে ১৯৫৩ সালে মুক্তি পাওয়া ‘সাড়ে চুয়াত্তর’-এর মাধ্যমে তার তারকা খ্যাতি আসে। এরপরের স্মরণীয় ইতিহাসটা বাংলা সিনেমাপ্রেমী সকলেরই জানা। ১৯৮০ সালের ২৪ জুলাই হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যান বাংলা সিনেমার এই মহানায়ক।
সূত্র: টিভি৯ বাংলা
টঙ্গীর বস্তি থেকে মস্কোয় গিয়ে ২ পুরস্কার জিতল বাংলাদেশের যে সিনেমা
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।