আমরা জানি, মহাবিশ্বের সব কিছু গতিশীল। ছুটছে, ছুটছে। একসময় অবশ্য মানুষের ধারণা ছিল, মহাবিশ্বটা নিজে স্থির। একভাবেই রয়েছে আজীবন। কখনো ছোট ছিল না, কখনো বিস্তৃতও হয়নি। এর কোনো শুরু বা শেষ নেই। কিন্তু মার্কিন জ্যোতির্বিদ এডুইন হাবল এই ধারণা ভেঙে দেন।
তিনি পর্যবেক্ষণলব্ধ তথ্য থেকে দেখান, মহাবিশ্ব প্রসারিত হচ্ছে। সময়ের উল্টোদিকে গেলে তাই আমরা দেখতে পাব, এর একটা সূচনা আছে। বিজ্ঞানীরা এই সূচনাকে বলছেন বিগ ব্যাং বা মহাবিস্ফোরণ। যার শুরু আছে, তার একসময় শেষও হবে। তবে এই শেষ কীভাবে হবে, এ বিষয়ে বিজ্ঞানীরা এখনো নিশ্চিত হতে পারেননি।
হাবলের এই আবিষ্কারের ফলে আমাদের মহাজাগতিক চিত্রটা বদলে গেল। আমরা জানলাম, স্বয়ং মহাবিশ্বটাও প্রসারিত হচ্ছে। মহাবিশ্বে তাই কিছুই স্থির নয়। গ্রহ ঘুরছে নক্ষত্রকে ঘিরে, নক্ষত্র ঘুরছে গ্যালাক্সির কেন্দ্রকে ঘিরে। অনেকগুলো গ্যালাক্সি একসঙ্গে মিলে তৈরি করে গ্যালাক্সিপুঞ্জ বা গ্যালাক্সি ক্লাস্টার। এই পুঞ্জের কেন্দ্রকে ঘিরে ঘুরে চলে গ্যালাক্সিগুলো। আবার অনেকগুলো ক্লাস্টার মিলে যে সুপারক্লাস্টার তৈরি করে, তার কেন্দ্রকে ঘিরে ঘুরে চলে ক্লাস্টারগুলো।
বিশাল পরিসরের হিসাব এসব। কিন্তু ছোট পরিসরে অণু-পরমাণুর কথা যদি ভাবি, এগুলোও সবসময় কেবল ছুটছে। প্রশ্ন হলো, কেন? কেন মহাবিশ্বের সব কিছু গতিশীল? কারণ আর কিছু নয়, মহাবিশ্বের চারটি মৌলিক বল। এই বলগুলোই মহাবিশ্বের সব কিছুকে সবসময় ছুটিয়ে বেড়াচ্ছে। মূলত মহাকর্ষ বল বড় বস্তুগুলোকে সবসময় গতিশীল রাখে। আর তড়িৎচৌম্বক বল, শক্তিশালী ও দুর্বল নিউক্লিয়ার বল গতিশীল রাখে অতিপারমাণবিক কণাদের।
মহাকর্ষ বলের কারণে বড় বস্তুগুলো একে অন্যকে আকর্ষণ করে। এ কারণেই গ্রহেরা নক্ষত্রকে ঘিরে ঘোরে, আবার নক্ষত্ররা ছুটে চলে গ্যালাক্সির কেন্দ্রকে ঘিরে। আর তড়িৎচৌম্বকীয় বলের কারণে কণাদের মধ্য দিয়ে ভরবেগ স্থানান্তরিত হয়। এ কারণেই ইলেকট্রন নিউক্লিয়াসের প্রতি আকর্ষণ বোধ করে, তার চারপাশে ঘোরে। আবার এ কারণেই বিভিন্ন রাসায়নিক বিক্রিয়া সম্পন্ন হতে পারে—কারণ ধনাত্মক চার্জ আকর্ষণ করে ঋণাত্মক চার্জকে। তবে কণারা মিলে যে বড় বস্তু তৈরি করে, তার ওপরেও রয়েছে তড়িৎচৌম্বক বলের প্রভাব। এর ফলে বড় বস্তুরা টান বা ধাক্কা অনুভব করে (ভরবেগের স্থানান্তরের ফলে)।
এদিকে শক্তিশালী নিউক্লিয়ার বলের কারণেই পরমাণুর নিউক্লিয়াস অক্ষত থাকে। আর দুর্বল নিউক্লিয়ার বলের জন্য প্রোটন বিটা ক্ষয়ের মাধ্যমে পরিণত হতে পারে নিউট্রনে। আবার উল্টোভাবে নিউট্রন ভেঙে একটি প্রতিনিউট্রিনো, একটি ইলেকট্রন ও একটি প্রোটন তৈরি হয়। এই প্রক্রিয়া চলতে থাকে নিউক্লিয়াসের ভেতরে। এভাবেই গতিশীল থাকে মহাবিশ্বের ছোট-বড় সব কিছু। অর্থাৎ মৌলিক বলগুলো না থাকলে মহাবিশ্বের কিছুই গতিশীল থাকত না।
Own the headlines. Follow now- Zoom Bangla Google News, Twitter(X), Facebook, Telegram and Subscribe to Our Youtube Channel