পদার্থবিজ্ঞানে নোবেল পুরস্কার-২০২০ ঘোষণার পর রজার পেনরোজের টেলিফোন সাক্ষাৎকার নেন নোবেল সংবাদমাধ্যমের প্রধান বিজ্ঞান কর্মকর্তা অ্যাডাম স্মিথ। এই সাক্ষাৎকারে পেনরোজ ফিরে গেছেন অতীতে। বলেছেন, কীভাবে একটি ক্রসরোড তাঁর ১৯৬৫ সালের পেপারে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে।
পেনরোজ বলেন, আপনি হয়তো জিজ্ঞেস করতে পারেন, মহাবিশ্বের সবচেয়ে বেশি এনট্রপি এখন কোথায়? এখন পর্যন্ত আমরা যা জানি, অনেকটাই নিশ্চিতভাবে বলা যায়—কৃষ্ণগুহ্বরের ভেতরে। তাহলে এই এনট্রপি পরে কোথায় যায়? হকিং আমাদের বলেন, দূর ভবিষ্যতে এই কৃষ্ণগহ্বরগুলো উবে যাবে…আমিও মনে করি, এমনটাই হওয়ার কথা। কৃষ্ণগহ্বর অনেক অনেক বিশাল হলে, সবচেয়ে বড়গুলোর জন্য বললে আরকি, যেহেতু ওগুলোর মধ্যেই এনট্রপি সবচেয়ে বেশি—ডন পেইজের মতে, এগুলো উবে যেতে যেতে লেগে যাবে প্রায় এক হাজার গুগল বর্ষ।
এক গুগল সমান ১০১০০। মানে ১–এর পরে ১০০টা শূন্য। এ ক্ষেত্রে ১০০ নাকি…সম্ভবত ১০৩টি শূন্য বসাতে হবে। সংখ্যাটা মোটামুটি এমন। এত বছর পরে গিয়ে সবচেয়ে বড় কৃষ্ণগহ্বরগুলোরও উবে যাওয়ার কথা।
এটা আমার কসমোলজি সম্পর্কিত ধারণা, যেটা কসমোলোজিস্টদের আমি ঠিক মানাতে পারছি না—মহাবিশ্ব থেকে যখন এর মধ্যকার সব পদার্থ উবে যাবে, তখন এক হিসেবে বলা যায়, মহাবিশ্ব নিজেই ভুলে যাবে, সে আসলে কতটা বড়। আমি জানি, জিনিসটা কেমন উদ্ভট, পাগলাটে শোনাচ্ছে। কিন্তু আপনার চারপাশে যদি কোনো ভর না থাকে, মহাবিশ্বের আকার হিসাব করার কোনো উপায়ও কিন্তু থাকবে না।
এদিক থেকে এটাকে পরবর্তী যুগের (ইংরেজিতে aeon) মহাবিশ্বের জন্য বিগ ব্যাং হিসেবে ধরা যায়। আমি একে বলছি AEON। মহাবিশ্বের ব্যাপারে আমরা যতটুকু জানি, এর সূচনা হয়েছে বিগ ব্যাংয়ের মাধ্যমে। তারপর এর ইনফ্লেশন, মানে প্রচণ্ডভাবে সম্প্রসারণ হয়েছে। এটা নাকি মহাবিশ্বের একদম শুরুর দিকে হয়েছে। যা–ই হোক, আমি এই ‘ইনফ্লেশন’-এ বিশ্বাসী নই। তারপর কিছুটা সময় মহাবিশ্ব একটু ধীরে সম্প্রসারিত হয়েছে। এরপরেই আবার এটি বেড়েছে সূচকীয় হারে (Exponential expansion)। এই তো।
কিন্তু আমার আইডিয়া হচ্ছে, ঘটনা এখানেই শেষ নয়। আমাদের মহাবিশ্বটা ধীরে ধীরে পরবর্তী বিগ ব্যাং বা মহাবিস্ফোরণের দিকে এগোচ্ছে, সেভাবে রূপান্তরিত হচ্ছে। অর্থাৎ আমাদের বিগ ব্যাং হচ্ছে আগের যুগের মহাবিশ্বের সূচকীয় সম্প্রসারণের মাধ্যমে রূপান্তরের ফলাফল। তার মানে আগের সেই মহাবিশ্বে নিশ্চয়ই কৃষ্ণগহ্বর ছিল। সেগুলো হকিং বাষ্পায়নের (Hawking Evaporation) মাধ্যমে উবে গেছে। সেই মহাবিশ্বের সবটুকু এনট্রপি তাই ওর মধ্যেই যাওয়ার কথা, কিংবা সিঙ্গুলারিটির মধ্যে। দুটোর যেটাই হোক, এর ফলে ওই সবটা এনট্রপি এক বিন্দুতে ঘন হয়ে জমেছে আমাদের মহাজাগতিক পটভূমি—মহাকাশে।
কিন্তু আমরা ওই বিন্দুটা দেখতে পাই না। কারণ কোনো কিছুই ৩ লাখ ৮০ হাজার বছরের আগে বেরিয়ে আসতে পারে না—সবাই জানে, এটা স্ট্যান্ডার্ড কসমোলজির অংশ। ৩ লাখ ৮০ হাজার বছর পরে সেই বিন্দুটা, যেটা আসলে একটা কৃষ্ণগহ্বর—কিংবা কৃষ্ণগহ্বরের অবশেষ—বেরিয়ে আসে। বলা উচিত, ওটা থেকে তেজস্ক্রিয় বিকিরণ হয়।
ফলে কৃষ্ণগহ্বরটা বাষ্পীভূত হতে হতে উবে যেতে থাকে। বেরিয়ে আসতে থাকে এর মধ্যকার সবটা শক্তি। বের হতে হতে একটা সময় এটা মহাকাশে চাঁদের আট গুণ পরিসরের জায়গা নিয়ে ৩ লাখ ৮০ হাজার বছরজুড়ে ছড়িয়ে পড়ে। আমার কথা হচ্ছে, এই উষ্ণ অঞ্চলটা আমরা দেখি, উত্তপ্ত…হালকা উষ্ণ…অত হালকাও না, যথেষ্ট উত্তপ্তই বলা যায়—চাঁদের আট গুণ পরিসরের এ রকম অঞ্চল আমরা কিন্তু দেখতে পাই।
এই পেপারটা আমার পোলিশ সহকর্মী—ক্রিস্তোফ মেইসনার ও পাওয়েল নিউরস্কিসহ আরও কয়েকজনের সঙ্গে মিলে লিখেছিলাম। ড্যানিয়েল এন নামে এক কোরিয়ান আমেরিকান ভদ্রলোক আমাদের হিসাব-নিকাশগুলো করে দিয়েছিলেন। পেপারটা কয়েক মাস আগে রয়্যাল অ্যাস্ট্রোনমি সোসাইটির মাসিক নোটিশে প্রকাশিত হয়েছে। এই জার্নালটি বেশ মর্যাদাপূর্ণ।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।