আন্তর্জাতিক ডেস্ক: ক’রোনা মহামারির গত দুই বছরে যেখানে বিশ্বব্যাপী দারিদ্র্য প্রকট হয়েছে, সেখানে বিশ্বের ১০ জন ধনী ব্যক্তির সম্পদ বেড়ে দ্বিগুণ হয়েছে। এই বৈষম্যকে ‘অর্থনৈতিক সন্ত্রাস’ বলে অভিহিত করেছে আন্তর্জাতিক দাতব্য সংস্থা অক্সফাম। গতকাল সোমবার প্রতিষ্ঠানটি আরো বলেছে, বিশ্বের অর্থনৈতিক ব্যবস্থায় কোথাও ‘অত্যন্ত গভীর গলদ’ রয়ে গেছে।
২১টি স্বাধীন দাতব্য সংস্থার জোট অক্সফাম বিশ্বব্যাপী দারিদ্র্য বিমোচন নিয়ে কাজ করে থাকে। গতকাল এটি একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। সুইজারল্যান্ডের ডাভোস শহরে ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরামের (ডাব্লিউইএফ) বৈঠক শুরুর আগে এক ব্রিফিংয়ে অক্সফাম বলেছে, শীর্ষ ধনী ব্যক্তিদের সম্পদ ৭০০ বিলিয়ন থেকে দেড় ট্রিলিয়ন ডলার পর্যন্ত বেড়েছে। অর্থাৎ প্রতিদিন বৃদ্ধি পেয়েছে গড়ে ১৩০ কোটি ডলার।
অক্সফাম সাধারণত ডাব্লিউইএফ বৈঠকের আগে বৈশ্বিক অসমতা নিয়ে প্রতিবেদন প্রকাশ করে থাকে। ফোরামের এ বৈঠকে বিশ্বের হাজারো করপোরেট ও রাজনৈতিক নেতা, বিভিন্ন ক্ষেত্রের তারকা, অর্থনীতিবিদ ও জ্যেষ্ঠ সাংবাদিকরা আলোচনা ও মতবিনিময়ে অংশ নেন। তবে এবার মহামারির কারণে সম্মেলন হবে ভার্চুয়ালি।
প্রতিবেদনে অক্সফাম বলেছে, আগের ১৪ বছরের তুলনায় ধনকুবেরদের সম্পদ মহামারি চলাকালে অনেক বেশি বেড়েছে। এই অসমতাকে ‘অর্থনৈতিক সহিংসতা’ অভিহিত করে অক্সফাম বলেছে, এই অসমতা প্রতিদিন ২১ হাজার মানুষের মৃত্যুর জন্য দায়ী। করোনা মহামারি ১৬ কোটি মানুষকে দারিদ্র্যসীমায় নিয়ে গেছে।
মানুষের জীবন বাঁচাতে সাহায্য করতে অক্সফাম করোনা টিকার স্বত্ব তুলে দিয়ে বিশ্বব্যাপী টিকা উৎপাদনের পাশাপাশি স্বাস্থ্যসেবা, জলবায়ু অভিযোজন এবং লিঙ্গভিত্তিক সহিংসতা কমাতে অর্থায়নের জন্য কর সংস্কারের আহ্বান জানিয়েছে।
প্রধান নির্বাহী ধনঞ্জয়ন শ্রীশকান্দারাজা বলেন, ‘এই মহামারি চলার সময় প্রায় প্রতিদিন একজন করে নতুন শত কোটিপতি তৈরি হয়েছে। অন্যদিকে লকডাউন, আন্তর্জাতিক বাণিজ্য হ্রাস, বৈশ্বিক পর্যটন সংকোচনের কারণে বিশ্বের ৯৯ শতাংশ মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ফলে ১৬ কোটি মানুষ দারিদ্র্যসীমায় নেমে গেছে। আমাদের অর্থনৈতিক ব্যবস্থায় কোথাও অত্যন্ত গভীর গলদ রয়ে গেছে।’
অক্সফাম জানিয়েছে, তারা প্রতিবেদনের জন্য যুক্তরাষ্ট্রের প্রভাবশালী সাময়িকী ফোর্বসের সংকলিত ২০২১ সালের ধনকুবেরদের তালিকা ব্যবহার করেছে। ফোর্বস সে বছর বিশ্বের যে ১০ জন ধনী ব্যক্তিকে তালিকাভুক্ত করেছে তাঁরা হলেন টেসলা ও স্পেসএক্সের প্রধান এলন মাস্ক, অ্যামাজনের জেফ বেজোস, গুগলের প্রতিষ্ঠাতা ল্যারি পেজ ও সের্গেই ব্রিন, ফেসবুকের প্রতিষ্ঠাতা মার্ক জাকারবার্গ, মাইক্রোসফটের সাবেক প্রধান নির্বাহী বিল গেটস ও স্টিভ বালমার, ওরাকলের সাবেক প্রধান নির্বাহী ল্যারি এলিসন, বিনিয়োগকারী ওয়ারেন বাফেট এবং ফরাসি গ্রুপ এলভিএমএইচের প্রধান বার্নার্ড আর্নল্ট।
অক্সফামের প্রতিবেদনে বলা হয়, মহামারির কারণে জাতীয় ঋণ বাড়ায় উন্নয়নশীল দেশগুলো সামাজিক সুরক্ষা খাতে বরাদ্দ কমাতে বাধ্য হয়েছে। প্রধান নির্বাহী শ্রীশকান্দারাজা বলেন, ‘বৈশ্বিক সংকটের মুখেও বৈষম্যপূর্ণ অর্থনৈতিক ব্যবস্থা শীর্ষ ধনীদের লক্ষণীয় হারে মুনাফা অর্জনের পথ করে দিয়েছে। গরিবদের রক্ষায় এ ব্যবস্থা সম্পূর্ণ ব্যর্থ। রাজনৈতিক নেতাদের সামনে সুযোগ এসেছে এই সংকটপূর্ণ পথ বদল করে একটি শক্তিশালী অর্থনৈতিক কৌশল গ্রহণের। তিনি বলেন, নতুন অর্থনৈতিক কৌশলে আরো প্রগতিশীল করব্যবস্থা অন্তর্ভুক্ত করা উচিত, যেখানে সম্পদ ও মূলধনের ওপর উচ্চতর কর থাকবে। উন্নততর সর্বজনীন স্বাস্থ্যসেবা ও সবার জন্য সামাজিক সুরক্ষা নিশ্চিতে এই রাজস্ব ব্যয় করা হবে।’
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।