জুমবাংলা ডেস্ক: ইসাবেল দে ভিলেনা কাতালান ভাষার প্রথমদিকের লেখিকাদের মধ্যে অন্যতম সেরা। রহস্যময় এক জীবন পেয়েছিলেন তিনি। এনরিক দে ভিলেনার অবৈধ সন্তান ইসাবেল ভ্যালেন্সিয়া, স্পেনের রিয়েল মনাস্টেরিও দে লা ত্রিনিদাদের মঠাধ্যক্ষ ছিলেন। তিনি ভ্যালেন্সিয়া, স্পেনে জন্মগ্রহণ করেন এবং সেখানেই মৃত্যুবরণ করেন।
তার সবচেয়ে জনপ্রিয় কাজ ভিটা খ্রিস্টি বা খ্রিস্টের জীবন। তিনি ঐসময়ে নারীদের প্রতি বিরূপ দৃষ্টিভঙ্গি অপসারণের জন্য তার লেখনীকে ব্যবহার করেন।
১৪৩০ সালে ইসাবেল দে ভিলেনা জন্মগ্রহণ করেন। ক্যাস্টিল ও আরাগণের রাজপরিবারের সঙ্গে সম্পৃক্ত এনরিক দে ভিলেনা এবং এক মহীয়সী নারীর অবৈধ সন্তান ছিলেন তিনি। সেই নারীর পরিচয় জানা যায়নি। তার বয়স যখন চার, তখন থেকেই ভ্যালেন্সিয়ার রানি ক্যাস্টিল-এর মারিয়া তাকে বড় করেন। তিনি আরাগণের পঞ্চম আলফোনসো এর সভায় বাস করতেন এবং সেখানেই তিনি শিক্ষাগ্রহণ করেন।
মাত্র পনের বছর বয়সে ১৪৪৫ সালে তিনি লা ত্রিনিদাদের সন্নাসিনী হন। লা ত্রিনিতাত নামের এই আশ্রমের প্রতিষ্ঠা করেন রানি মারিয়া দে লুনা, এবং তিনি নিজেই এই আশ্রমের প্রধান পৃষ্ঠপোষক ছিলেন। ১৪৬২ সালে ইসাবেল এই মঠের অধ্যক্ষ হিসেবে নির্বাচিত হন এবং ১৪৬৩ সালে তিনি এর দায়িত্বগ্রহণ করেন। রোসান্না ক্যান্টাভেলা, একজন পণ্ডিত যিনি ইসাবেলার উপরে অনেক পড়াশোনা করেছেন, বলেন যে আর্চএঞ্জেল মাইকেলের সঙ্গে ইসাবেলের গভীর শখ্যতা ছিল এবং এই সম্পর্ক মঠাধ্যক্ষ হতে তাকে সাহায্য করে। কারণ, এমনিতে এই দায়িত্ব পাওয়া তার পক্ষে কষ্টকর ছিল, যেহেতু তিনি ছিলেন একজন অবৈধ সন্তান।অবৈধ সন্তানেরা সাধারণত এইধরনের দায়িত্ব পায়না, কিন্তু ইসাবেল এই পদে নির্বাচিত হয়েছিলেন।
১৪৯০ সালে মৃত্যুর পূর্ব পর্যন্ত এই মঠ এবং তার সাথে লেখালেখির প্রতি ইসাবেল তার সম্পূর্ণ জীবন দান করেন। ধারণা করা হয় প্লেগের মহামারীর ফলেই তিনি মৃত্যুবরণ করেন।
ইসাবেল শুধুমাত্র একজন মঠাধ্যক্ষ হিসেবেই নয়, একজন লেখক হিসেবেও কাজ করেছিলেন। তার জনপ্রিয় কাজ ভিটা খ্রিস্টিকে ১৪৫৯ সালে জ্যাউম রোগের নারীবিদ্বেষী বই স্পিল ও লিব্রে দে লেস ডোনস এর জবাব বলা হয়ে থাকে। ভিটা খ্রিস্টিতে ইসাবেলের নারীবাদী বিশ্বাস ফুটে উঠেছে। জ্যাউম রোগ ছিলেন রানি মারিয়া ও লা ত্রিনিতাত-এর চিকিৎসক। তিনি এবং ইসাবেলে একে অপরকে ভালোভাবেই চিনতেন। ইসাবেলের বইগুলোতে সমাজে সমসাময়িক নারীদের প্রতি বিরূপ ভাবভঙ্গি প্রভৃতির বিরুদ্ধে প্রতিবাদ খদিত হয়েছে।
ভিটা খ্রিস্টি, যা খ্রিস্টের জীবন নামে অনূদিত হয়েছে, ছিল প্রাথমিকভাবে খ্রিস্টের অভিজ্ঞতা ও কষ্টের সঙ্গে পাঠকদের পরিচয় করিয়ে দেয়ার সাহিত্য। এইধরনের সাহিত্য পশ্চিম ইউরোপে ত্রয়োদশ থেকে ষড়দশ শতাব্দি পর্যন্ত বেশ জনপ্রিয় ছিল। যদিও সেগুলো মূলত লাতিনেই লেখা হচ্ছিল, তবুও সেগুলো স্বদেশীয় ভাষাতেয় বণ্টিত হচ্ছিল-ইসাবেল এরই ব্যবহার করতে চাইছিলেন।
ইসাবেল ভ্যালেন্সিয় এবং কাতালান দুই ভাষাতেই লিখতেন, যা স্প্যানিশেরই দুই উপভাষা ছিল। এগুলোর মধ্যে অনেক পার্থক্য ছিল, কারণ স্পেনের পৃথক অঞ্চলে এগুলো উচ্চারিত হত। এটি ১৪৯০ সালে তার মৃত্যুর পরে প্রকাশিত হয়েছিল এবং তার ভাগ্নি রানি ক্যাস্টিলের প্রথম ইসাবেলা কর্তৃক ১৪৯৭ সালে মুদ্রিত হয়েছিল।
ইসাবেল দে ভিলেনার ভিটা খ্রিস্টি অন্যান্য ভিটা খ্রিস্টির চেয়ে একটু অন্যরকম ছিল, কারণ তার এই গ্রন্থে বিশেষভাবে খ্রিস্টের জীবনে মাতা মেরি এবং মেরি ম্যাগডালেনার ভূমিকার কথা উদ্ধৃত হয়েছে। ভিটা খ্রিস্টি, যিশু খ্রিস্ট ও মাতা মেরীর ধারণার কথা তুলে ধরে। ইসাবেলের কাজে কুমারি মেরি এবং তার বোন এলিজাবেথের সঙ্গে এঞ্জেলদের দেখা হওয়ার ঘটনাকে বর্ধিত করা হয়েছে। খ্রিস্টের জীবন নিয়ে অন্যান্য লেখকেরা যে বই লিখেছিলেন, সেখানে এই অংশটুকুকে ততটা তুলে ধরা হয়নি। মেরি এছাড়াও হিতৈষিতা এবং অধ্যবসায়কে রুপকধর্মীভাবে উপস্থাপন করা হয়েছে, যা বোয়েথিয়াস তার জনপ্রিয় দার্শনিক অলংকারশাস্ত্র কনসোলেশন অব ফিলোসফিকে আরও উজ্জ্বল করে তুলেছে। যিশু ছিল ৩৭ হাজার ৫০০ লাইনের মধ্যের ৪ হাজার লাইনের মূল কেন্দ্রবিন্দু, যেখানে তাকে ঘিরে নারীদের ভূমিকা তুলে ধরা হয়েছে। প্রাথমিকভাবে মাতা মেরির ভূমিকাই উঠে এসেছে, পরবর্তীতে আরো অনেকের। ইসাবেলের বইয়ে খ্রিস্টের জীবনের নারীদের ভূমিকা অনন্যভাবে উঠে এসেছে।
লেসলি কে. টমি, একজন পণ্ডিত ব্যক্তিত্ব ইসাবেল দে ভিলেনার কাজের উপর ব্যাপক গবেষণা করেন। তিনি বলেন, ইসাবেলের লেখনীতে নারীদের ভূমিকাটি যেমনভাবে ফুটে উঠেছে, তা অন্যান্যদের লেখনীতে ততটা আসেনি। ইসাবেলের লেখা যথেষ্ট কর্তৃত্বপরায়ণ ও আত্মবিশ্বাসী ছিল। এটি ছিল নারীবাদী লেখিক ইসাবেলের অনন্য স্বাক্ষর। অন্যান্যদের চাইতেও তিনি নারীদের অনেক উপরে তুলে ধরেছিলেন। মন্টসেরাট পিয়েরা, অপর একজন পণ্ডিত ব্যক্তিত্ব বলেন, ইসাবেলের লেখায় নারী চরিত্র যেমন ইভ ও মেরি ম্যাগডালেন যেভাবে নিন্দনীয়ভাবে ফুটে উঠেছে, এমনকি খ্রিস্টের জীবনের মধ্যদিয়েও। তাই পণ্ডিতেরা মনে করেন এটি ছিল জ্যাউম রোগের লেখার সরাসরি জবাব।
ইসাবেল দে ভিলেনার লেখনীগুলো প্রাথমিকভাবে প্রায় অখ্যাত ছিল। কারণ তার লেখনীর ভাষা এবং সেইসাথে তিনি ছিলেন নারী।ইসাবেল ভ্যালেন্সিয় বা কাতালানে লিখতেন, যা হিস্পানিক পণ্ডিতদের আগ পর্যন্ত ততটাও পঠিত ছিল না। তবুও ধীরে ধীরে নারীবাদি লেখিকাদের উত্থানের ফলে, তার কাজ পুনরায় আবিষ্কৃত এবং পঠিত হয়। তার শ্রেষ্ঠ এবং জনপ্রিয়তম কাজ ভিটা ক্রিস্টি, যা নারীবাদি লেখনীগুলোর মধ্যে সেরাগুলোর একটি হিসেবে বিবেচিত হয়। তার সাথে প্রোটো-নারীবাদি লেখিকা ক্রিস্টিনা দে পিজান-এর তুলনা করা হয়।
ইসাবেল দে ভিলেনা এবং ক্রিস্টিনা দে পিজান-এর দুই সাহিত্যিকের লেখনী পর্যবেক্ষণ করে পণ্ডিতেরা মতপ্রকাশ করেন, যে তখনকার সময়ে লেখনী ছিল মূলত পুরুষ কর্তৃক তাদের উপর নিগৃহীত নীরবতার বিরুদ্ধে প্রতিবাদের প্রতিচ্ছবি; যদিও একে ব্যাপকভাবে নিরুৎসাহিত করা হয়। ইসাবেলের অন্যান্য কাজের উপরে বর্তমানে গবেষণা পরিচালনা করা হচ্ছে, যা গত ছয় শতক ধরে করা হয়নি।
ডাকাতি করতে এসে নারী মালিক কর্তৃক যৌন নির্যাতনের শিকার ডাকাত
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।