জুমবাংলা ডেস্ক : ভালোবেসে প্রেমিকা কোর্টে বিয়ে করেন শ্রী চন্দন বাবু। পরে দুই পরিবারই বিয়ে মেনে নেয়। এরপর বাসায় বউভাতের আয়োজনও করা হয়। কিন্তু বিপত্তি বাধে মাংসের পিস নিয়ে। এ নিয়ে বসে সালিশ বৈঠকও। ওই সালিশে জরিমানা করা হয় ৫ বোতল মদসহ ২ হাজার টাকা।
ঘটনাটি ঘটেছে চুয়াডাঙ্গার দামুড়হুদা উপজেলায় দর্শনায়। গত মঙ্গলবার সন্ধ্যার দিকে বাঁশফোড় সম্প্রদায়ের সব সদস্যদের উপস্থিতিতে সমাজ প্রধান মিন্টু বাঁশফোড় এ জরিমানার আদেশ দেন। এমনকি জরিমানা পরিশোধ না করায় ওই পরিবারকে একঘরে করে দেওয়ার হুমকিও দেওয়া হচ্ছে। এ ঘটনায় ভুক্তভোগী শ্রী চন্দন বাবু চুয়াডাঙ্গার জেলা প্রশাসক বরাবর একটি লিখিত অভিযোগ দিয়ে
ভুক্তভোগী শ্রী চন্দন বাবু দামুড়হুদা উপজেলার দর্শনা পৌর এলাকার দক্ষিণ চাঁদপুর হল্ট স্টেশনপাড়ার শ্রী রামু বাঁশফোড়ের ছেলে।
শ্রী চন্দন বাবু বলেন, গত ১২ আগস্ট শুক্রবার খুলনার খালিশপুরে ক্রিসেন্ট জুটমিলস এলাকার হরিজন পল্লীর গংগা বাঁশফোরের মেয়েকে কোর্টে বিয়ে করি। পরে বিয়ে মেনে নেয়ায় আনুষ্ঠানিকভাবে বরযাত্রায় নেয়া হয় হরিজন সম্প্রদায়ের শতাধিক সদস্যকে। পরদিন শনিবার সন্ধ্যায় আমার বাড়িতে বউভাত অনুষ্ঠানের আয়োজন করি। সেখানে খাসির মাংসের টুকরার পরিমাণ তুলনামূলক ছোট হওয়ায় দর্শনা কেরুজ আমতলা হরিজন সম্প্রদায়ের সদস্যরা আপত্তি তোলেন। এ সময় আমার বাবা রামু বাঁশফোড় দুঃখ প্রকাশ করে ইচ্ছামতো খাওয়ার জন্য তাদের বলেন। এতেও ক্ষান্ত হয়নি কেরুজ আমতলা হরিজন সম্প্রদায়ের সদস্যরা।
তারা খাওয়া-দাওয়া না করে চলে যান। গত ১৬ আগস্ট মঙ্গলবার সন্ধ্যায় আমতলা হরিজন পল্লীতে পঞ্চায়েত বৈঠকে ডাকা হয় আমার বাবা রামু বাঁশফোড়কে। জীতেন বাঁশফোরের নেতৃত্বে পঞ্চায়েত বসানো হয়। পঞ্চায়েতের মিন্টু বাঁশফোড়, রাজু বাঁশফোড়, আকবার বাঁশফোড়, রংলাল বাঁশফোড় ও বাবু লাল বাঁশফোড় সর্বসম্মতিক্রমে সিদ্ধান্ত নেন বউভাত অনুষ্ঠানে মাংসের টুকরা ছোট হওয়ার অপরাধে রামু বাঁশফোড়কে ২ হাজার টাকা জরিমানা ও ৫ বোতল কেরুজ বাংলা মদ দিতে হবে।
তিনি আরো জানান, মানুষ তার আয় অনুযায়ী ব্যয় করবে এটাই স্বাভাবিক। ৫ বোতল মদ ও জরিমানার টাকা পরিশোধ না করায় তারা আমাদের একঘরে করে দেওয়ার হুমকি-ধমকি দিচ্ছে। তাই তাদের বিচারের দাবিতে জেলা প্রশাসক, উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও পুলিশ সুপারের কাছে অভিযোগ দিয়েছি।
বাঁশফোড় সম্প্রদায়ের দর্শনার সমাজ প্রধান মিন্টু বাঁশফোড় বলেন, সম্প্রদায়ের রীতিনীতি অনুযায়ী সামাজিক নিয়ম না মানার কারণে পাঁচ বোতল মদ ও দুই হাজার টাকা জরিমানা করেছি। তারা এখনো পরিশোধ না করে উল্টো প্রশাসন ও সংবাদকর্মীদের কাছে বিচার দিচ্ছে।
তিনি আরো বলেন, বউভাতে মাংসের পিস ছোট হয়েছিল। আমাদের নিয়ম অনুসারে এক কেজি মাংস ১০ টুকরো করতে হবে এবং তা প্রতিবেশীদের উপস্থিতিতে কাটতে হবে। তারা এসব মানেনি। আর আগেও তার মেয়ের বিয়েতে সামাজিক নিয়ম না মানার কারণে পাঁচ হাজার টাকা ও ১০ বোতল মদ জরিমানা করা হয়েছিল।
দর্শনা পৌর এলাকার ১নং ওয়ার্ডের কমিশনার খালেকুজ্জামান খালেক বলেন, আমি বিষয়টি শুনেছি। মদ ও টাকা জরিমানা করেছে। এখনো পরিশোধ করেনি। প্রশাসনের কাছে অভিযোগ করেছে বলে জেনেছি।
বাংলাদেশ হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদ চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক হেমন্ত সিংহ রায় বলেন, বর্তমান প্রেক্ষাপট অনুযায়ী এই ধরনের নিয়মকানুন মোটেও গ্রহণযোগ্য নয়।
দামুড়হুদা ইউএনও সানজিদা বেগম বলেন, ভুক্তভোগী পরিবার আমার কাছে এসে বিষয়টি জানিয়েছে। যেহেতু জেলা প্রশাসক স্যারের কাছে লিখিত অভিযোগ দিয়েছে। তাই স্যারের নির্দেশনা অনুযায়ী তদন্ত সাপেক্ষে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
চুয়াডাঙ্গার জেলা প্রশাসক আমিনুল ইসলাম খান বলেন, এ ঘটনায় একটি লিখিত অভিযোগ পেয়েছি। বিষয়টি তদন্ত সাপেক্ষে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।