মাংস বেচে লাভ ‘নেই’, কর কমাতে এনবিআরকে মন্ত্রীর চিঠি
জুমবাংলা ডেস্ক : মাংসের কর কমাতে করপোরেট ব্যবসায়ীদের পক্ষে তদবির করছেন বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি। মাংস উৎপাদন, প্রক্রিয়াজাতকরণ ও বিতরণকারী করপোরেট প্রতিষ্ঠানগুলোর পক্ষ নিয়ে মাংসের উৎসে কর কমাতে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) চেয়ারম্যানকে চিঠি দিয়ে জোর সুপারিশ করেছেন তিনি।
এর আগে ঠিক একই ভাষায় কর কমাতে হস্তক্ষেপ চেয়ে বাণিজ্যমন্ত্রীকে চিঠি দিয়েছিল মাংস বিপণনকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর করপোরেট সংগঠন হালাল মিট প্রসেসিং ইন্ডাস্ট্রিজ অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ। তাতে ব্যবসায়ীরা দাবি করেন, মাংস বিক্রি করে তাঁদের মুনাফা হচ্ছে না।
এনবিআর সূত্রে জানা যায়, ১৪ মে বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি মাংস খাতের পরিস্থিতি তুলে ধরে এনবিআর চেয়ারম্যানকে একটি চিঠি দেন। ওই চিঠিতে তিনি জানান, দেশে মাংস উৎপাদন, প্রক্রিয়াজাতকরণ ও বিতরণকারী প্রতিষ্ঠানগুলো নানা প্রতিকূলতার মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। মাংস বিক্রি করে তাদের ব্যবসা হচ্ছে না, বরং লোকসান হচ্ছে।
মন্ত্রীর চিঠিতে বলা হয়, প্রায় ৪ লাখ কোটি টাকার এ খাতের অন্তত ৯৯ শতাংশের দখল ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের হাতে। যাঁরা কোনো কর দেন না। আর এ খাতের করপোরেট উদ্যোক্তাদের ওপর দেওয়া হয়েছে বাড়তি করের বোঝা। এ খাতের গড় উৎসে কর ৫ থেকে ৭ শতাংশ। এই কর দিয়ে মাংস উৎপাদন ও সরবরাহ করে তাদের নিট মার্জিন ১-৩ শতাংশও হয় না। অনেক ক্ষেত্রেই লোকসান হয়। এতে অনেক প্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়ে যাচ্ছে।
এমন পরিস্থিতিতে বাণিজ্যমন্ত্রী চান করপোরেট প্রতিষ্ঠানগুলোর উৎপাদিত মাংসকে চাল, ডাল, গম, চিনি, আদা, রসুন ও তেলের মতো নিত্যপণ্য হিসেবে ঘোষণা করে এসব পণ্যের মতো মাংসের উৎসে করও ২ শতাংশে নামিয়ে আনা হোক। আর সিদ্ধান্তটি কার্যকর করে যেন তা আয়কর আইনে সংযুক্ত করা হয়, তারও অনুরোধ করেন মন্ত্রী।
জানা যায়, বাণিজ্যমন্ত্রী যেসব বিষয় উল্লেখ করে এনবিআরকে চিঠি দিয়েছেন, ঠিক একই বিষয়ে প্রায় এক মাস আগে গত ১২ এপ্রিল বাণিজ্যমন্ত্রীকে চিঠি দেন হালাল মিট প্রসেসিং ইন্ডাস্ট্রিজ অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের প্রেসিডেন্ট এ এফ এম আসিফ। তিনিও তাঁর চিঠিতে বাণিজ্যমন্ত্রীকে মাংসকে নিত্যপণ্য ঘোষণা করে এর উৎসে কর ২ শতাংশ করতে অনুরোধ জানান। দুটি চিঠির ভাষায় একটি শব্দেরও পরিবর্তন হয়নি।
এ বিষয়ে হালাল মিট প্রসেসিং ইন্ডাস্ট্রিজ অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের প্রেসিডেন্ট ও বেঙ্গল মিটের সিইও এ এফ এম আসিফের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, ‘আসলে মাংস তো পচনশীল পণ্য। এর নিট মার্জিন ২-৩ শতাংশ করাও কঠিন। আর এখন ব্যবসাটা খুব ভালো যাচ্ছে না। আমরা বাণিজ্যমন্ত্রীকে চিঠি দিয়েছি, যাতে আমাদের উৎসে করটা কমিয়ে দেওয়া হয়। আমাদের ধারণা, কিছুটা হলেও এর সুফল ভোক্তারা পাবে।’
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, দেশে ৮-৯টি করপোরেট মাংস উৎপাদক প্রতিষ্ঠান রয়েছে। কমবেশি তাদের সবার ব্যবসাই লাভজনক। তাদের নিজস্ব আউটলেট রয়েছে। এর বাইরে তাদের মাংস দেশের নামকরা সুপারশপে নানা ক্যাটাগরিতে বাজারদরের চেয়ে বেশি দামে বিক্রি হয়।
এ ব্যাপারে এনবিআরের আয়কর শাখার এক কর্মকর্তা বলেন, সবাই করছাড় চায়। বাজেটের আগে এ ছাড়ের আবদার মাত্রা ছাড়িয়ে যায়। এটা এনবিআরের ওপর বাড়তি চাপ।
মাংসের করপোরেট উৎপাদক ও বিপণনকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর উৎসে কর কমানোর বিষয়ে এনবিআরের আয়কর বিভাগের সাবেক সদস্য অপূর্ব কান্তি দাস বলেন, ‘করপোরেট মাংস ব্যবসায়ী-উদ্যোক্তাদের উৎপাদিত মাংস বাজারের দরের চেয়ে বেশি। তাঁরা একেক রকম মাংস একেক দরে বিক্রি করেন। উৎসে কর দেওয়ার কারণে তাঁরা মাংস বিক্রি করে লোকসান করেন, এটা বিশ্বাসযোগ্য নয়। কোনো একটি ব্যবসা খুলেই সবাই ছাড়ের পেছনে ছোটে। করছাড়ের এ সংস্কৃতি থেকে বের হয়ে আসা উচিত।’
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।