ফারুক তাহের, চট্টগ্রাম : চলতি বছরের জুন মাসে শুরু হবে মাতারবাড়ি গভীর সমুদ্রবন্দরের নির্মাণ কাজ, শেষ হতে সময় লাগবে ২০২৬ সাল পর্যন্ত। বন্দর কর্তৃপক্ষ আশা করছে ২০২৬ সালেই এই বন্দরে জাহাজ ভিড়তে শুরু করবে। প্রথম বছরেই ৬০ হাজার থেকে ১০ লাখ একক কন্টেইনার উঠানামা করা হবে বলে ধারনা করছে বন্দর কর্তৃপক্ষ।
চট্টগ্রাম বন্দর চেয়ারম্যান রিয়ার এডমিরাল এম. শাহজাহান বলছেন, প্রথম বছরে ১০ লাখ একক কন্টেইনার উঠানামার যে পর্যবেক্ষন দেয়া হচ্ছে তার বেশিরভাগই যাবে নৌপথে। এজন্য নৌপথে ছোট ছোট কন্টেইনার জাহাজ তৈরি হবে। সেগুলো মাতারবাড়ি থেকে সরাসরি পানগাঁও, চট্টগ্রাম, পায়রা এবং মোংলা বন্দরে পৌঁছে যাবে খব কম সময়ে। আর এতে সময় অর্থ দুটোই সাশ্রয় হবে।
জানা গেছে, ২০২৬ সালে সর্বোচ্চ ১০ লাখ একক কনটেইনার ওঠানো-নামানো হবে এই বন্দর দিয়ে। পার্শ্ববর্তী দেশ ভারত, থাইল্যান্ড, মিয়ানমার ও নেপালের জন্য এই বন্দর ‘আঞ্চলিক হাব’ হিসেবেই গড়ে তোলা হবে। আর ধাপে ধাপে পণ্য ওঠানো-নামানো বাড়বে এই বন্দরের। এরই মধ্যে মাতারবাড়ি ঘিরে কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের নির্মাণকাজ শেষ হয়েছে। আশা করা হচ্ছে, চলতি বছরের ডিসেম্বরেই এখান থেকে উৎপাদিত বিদ্যুৎ জাতীয় গ্রিডে যুক্ত হবে।
মাতারবাড়ি গভীর সমুদ্রবন্দর প্রকল্পের পাশেই গড়ে উঠেছে দুটি জেটি। কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের জন্য জাপানি ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান সেখানে কয়লা ও তেল উঠানো-নামানোর জন্য জেটি দুটি নির্মাণ করেছে। দুই জেটির দক্ষিণ পাশেই স্থলভাগ কেটে বানানো হবে একটি ইউ আকৃতির বেসিন। সেখানেই নির্মিত হবে ৭৬০ মিটার দীর্ঘ জেটি। জেটিতে একটি সাড়ে ৩০০ মিটার এবং একটি ২০০ মিটার লম্বা জাহাজ একসঙ্গে ভিড়তে পারবে। আর সঙ্গে লাগানো স্থলভাগে তৈরি হবে মূল বন্দর, ইয়ার্ড ও টার্মিনাল। এজন্য প্রথম ধাপেই ১০৩১ একক জমি অধিগ্রহণ কছে বন্দর কর্তৃপক্ষ।
মাতারবাড়ি গভীর সমুদ্রবন্দর প্রকল্পের পরিচালক মীর জাহিদ হাসান বলেন, ‘তিন প্যাকেজে আমরা এই দরপত্র ডেকেছি। এখন জমা পড়া দরপত্রের মূল্যায়ন চলছে। ঠিকাদার নিয়োগ করে আগামী জুনে নির্মাণকাজ শুরু করতে পারব বলে আশা করছি।
এদিকে নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের সংসদীয় কমিটিও গত ১২ ফেব্রুয়ারি রবিবার পরিদর্শন শেষে বলেছেন, প্রধানমন্ত্রীর অগ্রাধিকারভুক্ত এই প্রকল্প নির্দিষ্ট সময়েই শেষ হবে। কমিটির সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা রফিকুল ইসলাম বীর-উত্তম বলেন, ‘বৈশ্বিক প্রেক্ষাপটে এখন পর্যন্ত যেভাবে বড় প্রকল্পগুলো এগোচ্ছে, মাতারবাড়ি গভীর সমুদ্রবন্দরও একই গতিতে এগোচ্ছে। আমরা আশা করছি, উন্নয়ন অংশীদার জাপান করোনা মহামারির সময়ে যেভাবে এই প্রকল্প এগিয়ে নিয়েছে, তাতে আগামী দিনেও প্রকল্প বাস্তবায়নে আর্থিক সংকট হবে না।’
চট্টগ্রাম বন্দরের চেয়ারম্যান রিয়ার অ্যাডমিরাল এম. শাহজাহান বলেন, ‘মাতারবাড়ি গভীর সমুদ্রবন্দরকে রিজিওনাল হাব হিসেবে ব্রান্ডিং করতে চট্টগ্রাম বন্দর ধাপে ধাপে পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করছে। বিদেশি শিপিং লাইনগুলোকে আমরা চট্টগ্রাম থেকে সরাসরি জাহাজ চালুর প্রস্তাব বাস্তবায়ন করছি। পার্শ্ববর্তী দেশের অনেক বন্দরের সঙ্গে সমঝোতা চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছে। অনেক চুক্তি বাস্তবায়ন হয়েছে এবং হচ্ছে। মূলত ২০২৬ সালকে লক্ষ্য রেখেই আমরা এই কাজ এগিয়ে রাখছি।’
জানা গেছে, এই প্রকল্পের ব্যয় নির্ধারণ করা হয়েছে ১৭ হাজার ৭৭৭ কোটি টাকা। এই প্রকল্পে জাইকা ঋণ দেবে ১২ হাজার ৮৯২ কোটি ৭৫ লাখ টাকা। এর বাইরে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ নিজস্ব তহবিল থেকে দুই হাজার ২১৩ কোটি ২৪ লাখ টাকা এবং বন্দর থেকে সংযোগ সড়ক নির্মাণের জন্য বাংলাদেশ সরকার দুই হাজার ৬৭১ কোটি ১৫ লাখ টাকার জোগান দেবে। #
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।