লাইফস্টাইল ডেস্ক: আপনার চুলের ফলিকল কোষগুলো ঠিক কখন বিভাজিত হয় এবং কখন মারা যায় তা নিয়ন্ত্রণ করতে একটি মাত্র নির্দিষ্ট কেমিক্যাল বা রাসায়নিককে চিহ্নিত করেছেন বিজ্ঞানীরা। গবেষকরা দিয়েছেন দারুন সুখবর।গবেষকদের এই আবিষ্কার শুধু টাক মাথার চিকিৎসার জন্যই নয়, বরং ক্ষত নিরাময়ের চিকিৎসাকেও ত্বরান্বিত করতে পারে। কারণ ফলিকল হল স্টেম সেলের উৎস।
ভ্রূণের বিকাশের সময়েই মানবদেহের বেশিরভাগ কোষের (নির্দিষ্ট) গঠন এবং কাজ নির্ধারিত হয়ে যায়, যা পরে আর পরিবর্তিত হয় না। একটি রক্তকণিকা যেমন স্নায়ু কোষে পরিণত হতে পারে না, ঠিক তেমনি স্নায়ুকোষ পরিণত হতে পারেনা রক্তকণিকায়। তবে স্টেম সেল, স্ক্র্যাবল গেমের (অক্ষর বিন্যাসের খেলা) ফাঁকা ঘরগুলোর মতো; এরা অন্য ধরনের কোষে পরিণত হতে পারে।
নিজেদের অভিযোজন ক্ষমতাবলে এরা ক্ষতিগ্রস্ত টিস্যু বা অঙ্গ নিরাময়ের জন্য ব্যবহৃত হয়।
ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয়, রিভারসাইড-এর গাণিতিক জীববিজ্ঞানী ও এই গবেষোণার একজন সহ-লেখক কিজুয়ান ওয়াং বলেন, “বিজ্ঞানের ভাষায় যখন কোষগুলো আঘাত থেকে দ্রুত নিরাময়তা লাভ করে, তখন এই ধারণাটি মূলত স্টেম সেল থেকেই অনুমতি পায়।”
“বাস্তব জীবনে আমাদের এই নতুন গবেষণা স্টেম সেলের আচরণকে বুঝতে সাহায্য করবে। স্টেম সেল ব্যবহার করে আমরা ক্ষত নিরাময়তাকে ত্বরান্বিত করতে পারি”, যোগ করেন ওয়াং। সম্প্রতি একটি বায়োফিজিক্যাল জার্নালে গবেষণাটি প্রকাশিত হয়েছে।
যকৃত এবং পাকস্থলীতে ক্ষত সৃষ্টি হলে তা অভিযোজন ক্ষমতার মাধ্যমে নিজে থেকেই ঠিক হয়ে যায়। তবে, ওয়াং ও তার দল চুলের ফলিকল নিয়ে গবেষণা করেছেন, কারণ মানবদেহে ফলিকলই একমাত্র অঙ্গ, যা আঘাত পাওয়া ছাড়াই স্বয়ংক্রিয়ভাবে এবং পর্যায়ক্রমে পুনরুত্থিত হয়।
গবেষকরা আবিষ্কার করেছেন, কীভাবে টিজিএফ-বিটা প্রোটিন স্টেম সেলসহ চুলের ফলিকলের কোষগুলোকে নিয়ন্ত্রণ, বিভাজন ও নতুন কোষ তৈরি করে, কিংবা মারা যায়।
“টিজিএফ-বিটা’র দুটি বিপরীত ভূমিকা রয়েছে। এটি কিছু চুলের ফলিকল কোষকে নতুন জীবন তৈরিতে সক্রিয় করে তুলতে সাহায্য করে এবং পরবর্তিতে এটি অ্যাপোপটোসিসে সাহায্য করে, যা কোষের মৃত্যুর প্রক্রিয়া বলে পরিচিত,” যোগ করেন ওয়াং।
অনেক রাসায়নিকের মতো এর কার্যক্রমও পরিমাণের পার্থক্যের ওপর নির্ভরশীল। যদি কোষগুলো একটি নির্দিষ্ট পরিমাণ টিজিএফ-বিটা তৈরি করে, তাহলে এটি কোষ বিভাজনকে সক্রিয় করবে। আর যদি বেশি পরিমাণে তৈরি করে, তবে এর মাধ্যমে অ্যাপোপটোসিস সংঘটিত হবে।
কেউ সম্পূর্ণরূপে নিশ্চিত নয় ফলিকলগুলো কেনো নিজেরাই নিজেদের ধ্বংস করে। গবেষকদের অনুমান, গ্রীষ্মের তীব্র গরম থেকে বাঁচতে পশুদের শরীর থেকে পশম ঝরানো বংশগতভাবে ধারাবাহিকভাবে চলে আসা একটি বৈশিষ্ট্য।
ওয়াং বলেন, “এমনকি যখন একটি লোম নিজে থেকেই ঝরে যায়, তখন এটি নিজের স্টেম সেলকে নষ্ট করেনা। যখন জীবিত স্টেম সেলগুলো পুনরুজ্জীবিত হওয়ার সংকেত পায়, তখন তারা বিভাজিত হতে শুরু করে, নতুন কোষ তৈরি করে এবং একটি নতুন ফলিকলে বিকশিত হয়।”
যদি বিজ্ঞানীরা আরও সুনির্দিষ্টভাবে টিজিএফ-বিটা কোষের সক্রিয় বিভাজন এবং অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ জিনের সঙ্গে এর যোগাযোগের উপায় খুঁজে বের করতে পারেন, তাহলে ফলিকল স্টেম সেলগুলোকে সক্রিয় করার মাধ্যমে তারা চুলের বৃদ্ধিও ঘটাতে পারবেন বলে বিশ্বাস অনেকের।
যেহেতু মানুষ সহ অনেক প্রাণীর ত্বক চুলে ঢাকা থাকে, তাই নিখুঁতভাবে ক্ষত নিরাময়ের জন্য চুলের ফলিকলগুলোর পুনর্জন্ম প্রয়োজন। টিজিএফ-বিটা’র মাত্রা আরও সুনির্দিষ্টভাবে নিয়ন্ত্রণ করতে সক্ষম হলে এক সময় হয়ত মাথায় টাক পড়া থেকেও মুক্তি পাওয়া যেতে পারে। অল্প বয়সে চুল ঝরে যাওয়া তথা টাক পড়ে যাওয়ায় আজ বিশ্বের লক্ষ লক্ষ মানুষ নিজেদের চেহারা নিয়ে উদ্বিগ্ন। এমনকি হেয়ার ট্রান্সপ্ল্যান্ট বা চুল প্রতিস্থাপনের পিছনেও অনেকে খরচ করে যাচ্ছেন হাজার হাজার টাকা।
এ বিষয়ে ওয়াং বলেন, “আমাদের এই কাজটি সম্ভবত চুল নিয়ে বিভিন্ন সমস্যায় ভুগছেন, এমন লোকদের সাহায্যে কাজ করবে।”
সূত্র: নিউরোসায়েন্স নিউজ
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।