আন্তর্জাতিক ডেস্ক: আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত (আইসিসি) মিয়ানমারের জান্তা প্রধান মিন অং হ্লেইংকে মানবতাবিরোধী অপরাধে অভিযুক্ত বলে ঘোষণা করেছেন। শুক্রবার মিয়ানমার অ্যাকাউন্টিবিলিটি প্রজেক্ট (এমএপি) নামের এই সংস্থার আবেদন আমলে নিয়ে এই সিদ্ধান্ত জানিয়েছেন নেদারল্যান্ডসের হেগ শহরে অবস্থিত এই আদালত। খবর আল জাজিরা’র।
মিন অং হ্লেইংকে মানবতাবিরোধী অপরাধী ঘোষণার পাশাপাশি ১ ফেব্রুয়ারির পর থেকে মিয়ানমারের সেনা বাহিনী ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে বেসামরিক সাধারণ জনগণের নির্যাতনের বিষয়ে আদালত গঠিত কমিটির মাধ্যমে একটি পূর্ণাঙ্গ তদন্তেরও আবেদন জানিয়েছে (এমএপি)।
আবেদনের পক্ষে প্রমাণ হিসেবে গত ১০ মাসে মিয়ানমারে সংঘটিত ২ লাখ ১৯ হাজার সহিংসতার তথ্য-উপাত্ত সংযুক্ত করেছে এমএপি। এক্ষেত্রে মিয়ানমার বিষয়ক জাতিসংঘের তদন্ত কমিটি ইউএন ইনভেস্টিগেটিং বডি এমএপিকে সহায়তা করেছে বলে আল জাজিরা নেটওয়ার্ককে জানিয়েছেন জাতিসংঘের কমিটি প্রধান নিকোলাস কোমজিয়ান।
শুক্রবার সাংবাদিকদের উদ্দেশে দেওয়া এক বিবৃতিতে এমএপির পরিচালক ক্রিস গাননেস বলেন, ‘মিয়ানমারের অবৈধ অভ্যুত্থানের নেতা আন্তর্জাতিক আদালতে মানবতাবিরোধী নেতা মানবতাবিরোধী অপরাধে অভিযুক্ত হয়েছেন। তার বিরুদ্ধে মূল অভিযোগ- দেশের নিরাপত্তা বাহিনীকে দেশের জনগণকে বিস্তৃত ও পদ্ধতিগত নির্যাতনের জন্য তিনি দেশের নিরাপত্তা বাহিনীকে ব্যবহার করেছেন।’
‘আমরা আশা করছি, তার বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করবে আন্তর্জাতিক আদালত। সামরিক বাহিনীর নির্যাতনের যেসব তথ্য-প্রমাণ ও উপাত্তা আমরা আদালতে জমা দিয়েছি- সেসব তার বিরুদ্ধে পরোয়ানা জারি করার জন্য যথেষ্ট।’
চলতি বছর ১ ফেব্রুয়ারি এক অভ্যুত্থানের মাধ্যমে মিয়ানমারের নির্বাচিত গণতান্ত্রিক সরকারকে হটিয়ে জাতীয় ক্ষমতা দখল করে দেশটির সেনবাহিনী। বন্দি করা হয় দেশটির গণতন্ত্রপন্থী নেত্রী অং সান সু চিসহ তার দলের বিভিন্ন স্তরের হাজার হাজার নেতাকর্মীকে। সেনাপ্রধান মিন অং হ্লেইং এই অভ্যুত্থানের নেতৃত্বে ছিলেন।
এদিকে, সেনা অভ্যুত্থানের পরপরই ফুঁসে ওঠেন দেশটির গণতন্ত্রকামী জনতা। রাজধানী নেইপিদো, বৃহত্তম শহর ইয়াঙ্গুন, মান্দালয়সহ ছোট-বড় সব শহরে শুরু সরকারবিরোধী বিক্ষোভ।
বিক্ষোভের প্রাথমিক পর্যায়ে তা দমাতে লাঠি, রাবার বুলেট, জলকামান ব্যবহার করা হলেও এক পর্যায়ে নিরাপত্তা বাহিনীকে প্রাণঘাতী আগ্নেয়াস্ত্র ব্যবহারের নির্দেশ দেয় সামরিক সরকার। মিয়ানমারের মানবাধিকার সংগঠন অ্যাসিসটেন্স অ্যাসোসিয়েশন ফর পলিটিক্যাল প্রিজনার্স (এএপিপি) জানিয়েছে, এ পর্যন্ত দেশটিতে নিরাপত্তা বাহিনীর গুলিতে প্রাণ গেছে ১ হাজার ৩০৫ জনের, তাদের মধ্যে ৭৫ জনই শিশু।
এছাড়া, বর্তামানে রাজনৈতিক কারণে মিয়ানমারের বিভিন্ন কারাগারে অন্তত ১০ হাজার ৭৫৬ জন বন্দি আছেন বলেও জানিয়েছে এএপিপি।
গত বুধবার জাতিসংঘের মুখপাত্র স্টেফানি ডুজারিক এক সংবাদ সম্মেলনে জানান, সম্প্রতি মিয়ানমারের উত্তরপশ্চিমাঞ্চলীয় প্রদেশ সাগাইংয়ে একটি গ্রামে নির্বিচারে গুলি চালিয়ে ও জীবন্ত অবস্থা আগুনে পুড়িয়ে বেশ কয়েকজনকে হত্যা করেছে দেশটির সেনাবাহিনী।
স্টেফানি ডুজারিক বলেন, ‘আমরা এই সহিংসতার জন্য মিয়ানমারের সামরিক সরকারের তীব্র নিন্দা করছি এবং আন্তর্জাতিক আইন অনুযায়ী মিয়ানমারের সব বেসামরিক নাগরিকের জীবনের নিরাপত্তার দাবি জানাচ্ছি।’
‘আমরা আরও দাবি করছি- সাগাইংয়ে এই নৃশংস ঘটনার সঙ্গে নিরাপত্তা বাহিনীর যেসব সদস্যের যুক্ততা রয়েছে, অবিলম্বে যেন তাদের বিচারের কাঠগড়ায় উপস্থিত করা হয়।’
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।