ব্রাহ্মণবাড়িয়া প্রতিনিধি: ‘অশীতিপর বৃদ্ধার চোখের কোনে তখন টলমল করছে ভালোবাসার পারদ জল! আনন্দের।…এমপি মহোদয়ের হাত থেকে খাদ্রসামগ্রী গ্রহণ করবার সময় মুখ দিয়ে কি যেন বিড়বিড় করে বলছিলেন বয়সের ভারে নুয়ে পড়া এই মা।
সারাজীবন খেটে খেয়ে পাঁচ-পাঁচটি মেয়ের বিয়ে দিতে দিতে নিঃস্বপ্রায় এই মায়ের যক্ষের ধন পিতাহারানো একমাত্র ছেলেটি রিকশা চালিয়ে কষ্টের সংসার চালিয়ে আসছে। হঠাৎ করোনাভাইরাসের অদৃশ্য হুমকিতে ভড়কে গিয়ে ঘরবন্দী হয়ে পড়লো পরিবারটি। কর্মহীন হয়ে পড়ায় উপার্জন থমকে গেলো। ধীরে-ধীরে যখন পরিবারটির নিজস্ব ’মাতৃভাষা’ হিসেবে জায়গা করে নিচ্ছিলো… ক্ষুধা।
ঠিক এমনই সময় স্থানীয় সংসদ সদস্য জনাব বি এম ফরহাদ হোসেন সংগ্রাম প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ঘোষিত ঘরে-ঘরে গিয়ে অসহায় গরীব মানুষগুলোর কাছে খাদ্যসামগ্রী পৌঁছে দিতে এবং নিজে মাইকিং করে করোনাভাইরাস সম্পর্কে জনসচেতনতা বৃদ্ধি করতে সময় ব্যয় করতে এগিয়ে আসলেন।
গত বৃহস্পতিবার (২ এপ্রিল) নাসিরনগরের বুড়িশ্বর, কুন্ডা, ধরমণ্ডল, চাপরতলা, ফান্দাউক ভলাকুটসহ বিভিন্ন ইউনিয়নের এরকম খেটেখাওয়া মানুষের দরোজায় এই সংকটময় সময়ে খাবার নিয়ে স্থানীয় তিনি নিজেই স্বশরীরে হাজির হওয়ায় তাঁকে নিয়ে ফেসবুকে এমনই মন্তব্য করলেন নাসিরনগরের স্থানীয় তরুণ অরুণজ্যোতি।
এর আগের সপ্তাহেও তিনি এলাকায় এমনিভাবে খেটেখাওয়া মানুষের পাশে খাদ্যদ্রব্য বিতরণ করেছেন জানিয়ে ওই ফেসবুক পোস্টে অরুণজ্যোতি লিখেন-”লকডাউন, কোয়ারেন্টিন, আইসোলেশন এইসব শব্দ ও ভাষা এই বৃদ্ধা মায়ের কাছে অবোধ্য হলেও… খাবার হাতে তুলে দিয়ে বিদায় নেবার সময় তার ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে থাকা দেখে বুঝলাম… ভালোবাসার ভাষা উনাদের কাছে মোটেও অবোধ্য নয়।
কী জানি কি কৌতূহলে উঠোন পেরিয়ে একলা উনার কাছে ফিরে গিয়ে জিজ্ঞেস করলাম, ” আচ্ছা মা, ঐসময় দেখলাম এমপি সাহেবের হাত থেকে বস্তাটি নেয়ার সময় আপনি বিড়বিড় করে কী যেন বলছিলেন, তাই না? বললেন, ’হ। দোয়া করছি এমপির লাইগ্যা, আবার আইলে পুলাডার লাইগ্যা একটা রিকশা চামু।’…লেখাটা লিখতে লিখতে ভাবছি, গ্রামবাংলার এই সহজ সরল মানুষগুলোর প্রতি করোনাভাইরাস নিশ্চয়ই তার নিষ্ঠুর হৃদয় প্রদর্শন থেকে নিরাপদ দূরত্ব বজায় রাখবে।”
বৃহস্পতিবার সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত নাসিরনগর উপজেলার ও ইউনিয়নের বিভিন্ন গ্রামে কর্মহীন ও হতদরিদ্র পরিবারগুলোকে খাদ্য সহায়তা পৌঁছে দেন ব্রাহ্মণবাড়িয়া-১ আসনের এমপি বি.এম ফরহাদ হোসেন সংগ্রাম।
তিনি জুমবাংলাকে বলেন, সুখে-দুঃখে পাশে থাকার প্রতিশ্রুতি দিয়ে মানুষের ভোট নিয়েছি। এই দুর্যোগে তাদের পাশে থাকা আমার নৈতিক দায়িত্ব। আমি সেই দায়িত্বটুকুই পালন করছি। আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে কেউ না খেয়ে মরবে না। আমরা সবার বাড়ি-বাড়ি খাদ্য সহায়তা পৌঁছে দেবো। সবাই মিলে এই প্রাণঘাতী ভাইরাসের বিরুদ্ধে লড়াই করে জয়ী হব।
করোনাভাইরাস প্রতিরোধে সবাইকে সচেতন করতে সাংসদ নিজে মাইকিং করে এই বার্তা দিচ্ছেন বলেও জানান স্থানীয় তরুণ গোলাম মোহাম্মদ মারজান।
তিনি বলেন- “ দেশের এই ক্রান্তিলগ্নে অনেক জনপ্রতিনিধিই যেখানে মাঠেই থাকেন না সেখানে আমাদের সাংসদ তার নির্বাচনী এলাকা চষে বেড়াচ্ছেন ত্রাণ নিয়ে। করোনাভাইরাসের বিস্তার রোধে সাংসদ নিজে মাইকিং করে সবাইকে অনুরোধ করছেন ঘরে থাকার। পাশাপাশি বিদেশফেরতদেরও অনুরোধ জানাচ্ছেন ১৪ দিন হোম কোয়ারেন্টাইনে থেকে পরিবার ও দেশকে নিরাপদ রাখার।
মারজান আরও বলেন- হাওরবেষ্টিত নাসিরনগর উপজেলার মানুষ একজন সাংসদের এমন ভূমিকা আগে দেখেননি। ফলে আগ্রহ নিয়েই সাংসদের মুখে করোনাভাইরাস সম্পর্কে সচেতনতার বার্তা শুনছেন তারা।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।