বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি ডেস্ক : হুয়াওয়েসহ বিভিন্ন চীনা প্রযুক্তি কোম্পানির বিরুদ্ধে প্রযুক্তি ও পণ্য রপ্তানীতে যে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছিল যুক্তরাষ্ট্রের ট্রাম্প ও বাউডেন প্রশাসন, তারই জবাব যেন এতোদিনে এল। হুয়াওয়ে ঘোষণা দিয়েছে কোম্পানির অভ্যন্তরীন সফটওয়্যার ব্যবস্থাপনা সিস্টেমের শতকরা ৮০ ভাগ থেকেই তারা মার্কিন প্রযুক্তি ঝেড়ে ফেলেছে।
‘ইন্টার্নাল সফটওয়্যার ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম’ এখন থেকে হুয়াওয়ের নিজেদের উদ্ভাবিত সফটওয়্যারে চলবে বলে ঘোষণা দিয়েছে কোম্পানিটি। একে তারা মার্কিন মরণকামড়ের দাঁতভাঙ্গা জবাব বলে মনে করছে। এই সাফল্য উৎযাপনে হুয়াওয়ে নিজেদের কার্যালয়ে বিশেষ আয়োজনও করেছে বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করেছে রয়টার্স।
হুয়াওয়ের নিজস্ব ‘মেটা-ইআরপি’র যাত্রা উপলক্ষে বৃহস্পতিবার, দক্ষিণ চীনের ডঙ্গুয়ানে, কর্মীদের জন্য আয়োজিত এক আনন্দ উৎসবে কোম্পানিটির প্রতিষ্ঠাতা রেন যেংফেই এর কন্যা, বর্তমানে দায়িত্বরত চেয়ারপার্সন মেং ওয়াংঝুও অংশগ্রহণ করেন।
কোম্পানির হিসাব রক্ষণাবেক্ষণ থেকে শুরু করে সরবরাহচক্র ব্যাবস্থাপনাসহ পুরো অভ্যন্তরীণ ব্যাবসা কাঠামো পরিচালিত হয় ‘ইআরপি’ প্রযুক্তি দিয়ে।
একটা সংবাদ বিজ্ঞপিতে হুয়াওয়ে জানায়, এখন থেকে তাদের নিজিস্ব ‘ইআরপি’ পদ্ধতিতে কোম্পানির শতকরা ৮০ ভাগ অভ্যন্তরীণ ব্যবস্থাপনা পরিচালিত হবে।
২০১৯ সালের মে মাসে মার্কিন বাণিজ্য মন্ত্রণালয় জাতীয় নিরাপত্তা ঝুঁকির অভিযোগ এনে হুয়াওয়েকে কালো তালিকাভুক্ত করে। পরবর্তীতে আরো কিছু নিষেধাজ্ঞা দিয়ে যে কোনো মার্কিন প্রযুক্তি ব্যবহারের পথ হুয়াওয়ের জন্য বন্ধ করে দেয়।
এর ফলে কার্যত হুয়াওয়ের ‘ইআরপি’ সিস্টেম ব্যবহার মুখ থুবরে পড়ে। ইআরপি সিস্টেমের মাধ্যমে একটি কোম্পানির হিসাব থেকে শুরু করে গোটা সরবরাহ ব্যবস্থাপনা নিয়ন্ত্রণ করা হয়। এ কাজে হুয়াওয়ে আগে মার্কিন সফটওয়্যার জায়ান্ট ওরাকলের ওপর নির্ভর করত।
সেই সংকট উৎরাতে কোম্পানিটি নিজেদের প্রয়োজনে তৈরী এই প্রযুক্তির মাধ্যমে ব্যবসার নতুন দ্বার উন্মোচন করেছে। এক সময় চাপে পড়া কোম্পানিটি এবার নিজেই তাদের পূর্বে ব্যাবহৃত ‘ওরাকল’ ও ‘স্যাপ’ এর মত মার্কিন প্রযুক্তির সম্ভাব্য শক্তিশালী প্রতিদ্বন্দ্বী হওয়ার লক্ষ্য নিয়ে ময়দানে ফিরে এসেছে।
হুয়াওয়ের একজন পরিচালক এবং এর গুণগত বিপনন প্রক্রিয়া ও আইটি ব্যবস্থাপনা বিভাগের প্রধান টাও জিংওয়েন বলেন “তিন বছর আগে আমাদের ব্যাবসার অন্যতম চালিকাশক্তি ‘ইআরপি’ প্রযুক্তি ব্যাবহারের সুযোগ থেকে আমাদের বঞ্চিত করা হয়। আজকে একটা গর্বের দিন, আমরা সকল বাধা-বিপত্তি অতিক্রম করে আজকের এ দিনে এসে পৌঁছেছি।
টাও তার বক্তব্যে প্রযুক্তির বাণিজ্যিক ব্যাবহার নিয়ে কিছু বলেননি।
টাও বলেন দুই দশক ধরে কোম্পানি ব্যবসা পরিচালনায় যে মূল প্রযুক্তি ব্যবহার করে আসছিলো, চট তা থেকে ছিটকে গিয়ে, এর অস্তিত্ব হুমকির মুখে পড়ে। “যেন প্রমত্তা দাদো নদীতে (তিব্বতের প্রধান নদী) কেউ বাঁধ দিয়েছে, আমাদের সব পথ রুদ্ধ হয়ে গেছে” গৃহযুদ্ধ চলাকালে চীনেরে রেড আর্মির ব্যবহার করা এই প্রবাদটির উল্লেখ করেন এই জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা।
হুয়াওয়ের ‘মেটা-ইআরপি’ প্রযুক্তিটি ক্লাউড কম্পিউটিংনির্ভর, যা বাজারে প্রচলিত অন্যান্য ‘ইআরপি’র তুলনায় বহুগুন আধুনিক বলে জানান এক সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা।
পূর্বে ব্যবহার করা প্রযুক্তিগুলোকে ‘প্রাচীন ও জরাজীর্ণ’ উল্লেখ করে টাং বলেন তাদের প্রস্তুতকৃত প্রযুক্তিটি দিনে ১৫০ কোটি নতুন তথ্য প্রক্রিয়াজাত করতে সক্ষম।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।