বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি ডেস্ক : শেনজেনভিত্তিক বৈদ্যুতিক গাড়ি (ইভি) নির্মাতা প্রতিষ্ঠান বিওয়াইডি আগামী বছরের মার্চে বাংলাদেশে এর প্রথম গাড়ি চালু করতে যাচ্ছে।
বিওয়াইডি-এর পরিবেশক সিজি-রানার বাংলাদেশ লিমিটেড-এর সূত্রে এ খবর জানা গেছে।
বাংলাদেশের সড়কে চলতে যাওয়া কোম্পানিটির প্রথম গাড়ি হবে বিওয়াইডি সিল। প্রিমিয়াম এই বৈদ্যুতিক সেডান গাড়িটি দেশের বাজারের কোটি টাকার বেশি সেগমেন্টের গাড়িগুলোর সঙ্গে প্রতিযোগিতা করবে বলে জানিয়েছেন সিজি-রানার কর্মকর্তারা।
ফাস্ট চার্জার ব্যবহার করে বিওয়াইডি সিল ৪০ মিনিটেই সম্পূর্ণ চার্জ করা যাবে। এক চার্জে গাড়িটি ৫৪০ কিলোমিটার পর্যন্ত চলবে। চিরায়ত হোম চার্জিং ব্যবহার করলে এটি পুরোপুরি চার্জ হতে সময় লাগবে ছয় থেকে সাত ঘণ্টা।
বিওয়াইডি-এর পরিবেশক সিজি-রানার বাংলাদেশ নেপালের শীর্ষ ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান চৌধুরী গ্রুপ এবং বাংলাদেশে রানার গ্রুপের মধ্যকার একটি যৌথ উদ্যোগ।
তবে বৈদ্যুতিক গাড়ি নিয়ে নতুন এ যাত্রার বিষয়ে নীরবতা বজায় রেখেছে রানার গ্রুপ। দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ড থেকে তাদের এ নতুন ইভি উদ্যোগের বিষয়ে জানতে চাইলেও কোনো মন্তব্য করেনি প্রতিষ্ঠানটি।
অবশ্য গ্রুপটির একাধিক সূত্র নিশ্চিত করেছে, বিওয়াইডি-এর সঙ্গে পরিবেশক হওয়ার চুক্তি ইতোমধ্যে চূড়ান্ত করেছে রানার গ্রুপ। এছাড়া বাংলাদেশে এ গাড়ি বিক্রির জন্য প্রয়োজনীয় লোকবল নিয়োগও শেষ হয়েছে। টেকনিশিয়ান এবং ম্যানেজারদের জন্য প্রশিক্ষণ বর্তমান সক্রিয়ভাবে চলছে। সবমিলিয়ে আসন্ন এই প্রকল্পের জন্য নতুন একটি দলকে প্রস্তুত করছে রানার গ্রুপ।
একসময় রানারের বিশিষ্ট শোরুম তেজগাঁওয়ে হক বিল্ডিংয়ে শীঘ্রই বিওয়াইডি-এর ঢাকার প্রথম শোরুম চালু হবে। এছাড়া কাছাকাছি স্থানেই তৈরি করা হচ্ছে একটি অত্যাধুনিক পরিষেবা কেন্দ্র।
কোম্পানিটির একজন কর্মকর্তা টিবিএসকে বলেন, প্রিমিয়াম বৈদ্যুতিক সেডান বিওয়াইডি সিল দিয়ে যাত্রা করার পর কোম্পানিটি ধীরে ধীরে বাজার বিস্তৃতির প্রস্তুতির সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে আরও সাশ্রয়ী মূল্যের গাড়ির মডেল যুক্ত করবে।
ত্রৈমাসিক উৎপাদনের ক্ষেত্রে বিশ্বের বৈদ্যুতিক গাড়ির পথিকৃৎ টেসলার সঙ্গে টেক্কা দিয়ে চীনা কোম্পানি বিওয়াইডি ইতোমধ্যে পশ্চিমাদের ভ্রু কুঁচকে দিয়েছে।
বিওয়াইডি’র তৃতীয় প্রান্তিকে গাড়ির বিক্রয় টেসলার বিক্রির পরিমাণকে ছুঁয়ে বিশ্বব্যাপী ব্যাটারিচালিত বৈদ্যুতিক গাড়ির বাজারের ১৭ শতাংশে পৌঁছেছে। চতুর্থ প্রান্তিকে চীনা কোম্পানিটি গাড়ি বিক্রিতে টেসলাকে ছাড়িয়ে যাবে বলে ধারণা করা হচ্ছে বলে এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে বাজার গবেষণা সংস্থা কাউন্টারপয়েন্ট রিসার্চ।
সাম্প্রতিক বছরগুলোতে বিওয়াইডি অস্ট্রেলিয়া, সিঙ্গাপুর, থাইল্যান্ড, জাপান এবং ব্রাজিলসহ ৫০টিরও বেশি দেশ এবং অঞ্চলে এর যাত্রীবাহী গাড়ির বৈদেশিক ব্যবসা সম্প্রসারিত করেছে।
কাউন্টারপয়েন্ট রিসার্চ-এর তথ্য অনুযায়ী, চীন বৈদ্যুতিক গাড়ির বিশ্বের বৃহত্তম বাজার। তৃতীয় প্রান্তিকে চীনের অভ্যন্তরীণ বিক্রি গত বছরের তুলনায় ১১ শতাংশ এবং রপ্তানি চারগুণ বেড়েছে।
বছরের প্রথমার্ধে চীনের অটোমোবাইল রপ্তানি জাপানকে ছাড়িয়ে বিশ্বের শীর্ষস্থানে উঠে গেছে। সিনহুয়া নিউজ এজেন্সি’র খবর অনুযায়ী, চীন এখন বিশ্বের বৃহত্তম গাড়ি উৎপাদনকারী, ভোক্তা এবং রপ্তানিকারক হয়ে উঠেছে।
ইভি বিবর্তনে চোখ বাংলাদেশের
এক বছর আগে দেশে বৈদ্যুতিক গাড়ির নিবন্ধন প্রক্রিয়ার অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। তার আগে ধীরগতিতে নীতি প্রণয়নের কারণে এ ধরনের গাড়ি ব্যবহারের ক্ষেত্রে অনেক পিছিয়ে ছিল বাংলাদেশ।
ইলেকট্রিক মোটরযান রেজিস্ট্রেশন ও চলাচল নীতিমালা ২০২৩-এর লক্ষ্য হলো ২০৩০ সালের মধ্যে ৩০ শতাংশ যানবাহনকে বৈদ্যুতিক করা। জ্বালানিচালিত গাড়ির তুলনায় ইভি গাড়িগুলো অল্প পরিমাণে কিছু সুবিধা পাচ্ছে।
যেমন ১,৬০০ সিসি পর্যন্ত গ্যাসোলিন ইঞ্জিনবিশিষ্ট একটি গাড়ি আমদানি করলে মোট ১২৫ শতাংশ ট্যাক্স এবং শুল্ক দিতে হয়, যেখানে বৈদ্যুতিক গাড়ির ক্ষেত্রে এর পরিমাণ ৮৯ শতাংশ।
নিবন্ধন প্রক্রিয়া শুরুর পর বিশ্বের শীর্ষ কোম্পানিগুলোর নির্মিত অল্পকিছু বৈদ্যুতিক গাড়ি এ বছর দেশে আমদানি করা হয়েছে। বছরের দ্বিতীয়ার্ধে আউডি ও বিএমডব্লিউ’র মতো ব্র্যান্ডগুলো দেশের বাজারে বৈদ্যুতিক গাড়ি এনেছে।
তবে এ বছর মোট ইভি নিবন্ধন এখনও ১০০ ছাড়ায়নি। দেশের বাজারে পুরোদস্তুর ইভি ব্যবসার লক্ষ্য নিয়ে কোনো বৈশ্বিক ব্র্যান্ডও হাজির হয়নি।
বৈদ্যুতিক গাড়ি নির্মাণের স্থানীয় স্টার্টআপ পালকি মোটরস-এর দেশে উৎপাদিত কিছু মডেল বাজারে উন্মুক্ত করেছে। আরেকটি স্থানীয় কোম্পানি বাংলাদেশ অটো ইন্ডাস্ট্রিজ দেশের বাজারে ইভি তৈরি ও জনপ্রিয় করার জন্য বড় রকমের প্রস্তুতি নিচ্ছে।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।