আন্তর্জাতিক ডেস্ক : ভাগ্য পরিবর্তনের আশায় মালয়েশিয়ায় পাড়ি জমান অনেক বাংলাদেশি।পর্যটন নগরী মালয়েশিয়ার প্রত্যন্ত অঞ্চলে এমন হাজার হাজার বাংলাদেশি রয়েছেন যাদের প্রথম পর্বের ইতিহাস খুবই কষ্টের। নতুন দেশে কষ্টের বহু কারণ রয়েছে। ভাষা, সংস্কৃতি, রাস্তা-ঘাট সবই অচেনা-অজানা। তারপরেও ঘুরে দাঁড়ান অনেকে।
রাজধানীর কুয়ালালামপুর থেকে শত কিলোমিটার দূরে কুয়ালা স্লাংগরের সিকিনচান এলাকায় প্রবাসী মশিয়ার রহমান, আমজাদ, রায়হান, জাকির হোসেন রানা, হারুন-অর-রশীদ, সোহেলসহ সহস্রাধিক বাংলাদেশিদের বসবাস। এখানকার অধিকাংশ প্রবাসী বাংলাদেশি কৃষি কাজের সঙ্গে জড়িত। ধান লাগানোর পর থেকে মালয়েশিয়া সরকাররের দেওয়া ফ্রি সার, ওষুধ ও জমির জন্য পানি এবং ধান চাষে ফলন কম হলে ভূতুর্কি যেন তাদের কাছে স্বপ্ন বাস্তবায়নের বাড়তি মাত্রা।
একদিকে পাখির কিচিরমিচির শব্দ, অন্যদিকে প্রবাসী বাংলাদেশিদের ঘর্মাক্তে ফোটানো পাকা ধানের শীষ। বাতাসে শীষগুলোর দোলই যেন বলে দিচ্ছে প্রবাসী বাংলাদেশিদের সফলতার স্বপ্ন। সেই স্বপ্নগুলোই কিছুদিন পর সত্যিতে পরিণত হলে দেশে পাঠাবে অর্থনীতির চাকা ঘুরানো রেমিটেন্স।
ধানের জমির পাশ দিয়ে হাটতে হাটতে মশিয়ার রহমান বলেন, ‘বসদের কাছ থেকে জমি লিজ নিয়ে ধান চাষ করি এবং ধান উঠার পর সরকার নির্ধারিত দামে এখানকার সরকারি আড়তে বিক্রি করি। এখানে তারা বছরে দুইবার ধান চাষ করে থাকেন।’
মালয়েশিয়ায় বসবাসরত বিশিষ্ট ব্যবসায়ী ও কমিউনিটি ব্যক্তিত্ব রাশেদ বাদল বলেন, দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ার দেশ মালয়েশিয়া মূলত একটা ঋতুর দেশ। এখানে কৃষিপণ্য প্রচুর পরিমাণে উৎপন্ন হয়ে থাকে। উন্নত প্রযুক্তির ব্যবহার ও সরকারের বাস্তব স্বদিচ্ছার ফলে ধান চাষে এগিয়ে যাচ্ছে তারা।
১৯৫৭ সালের ৩১ আগস্ট মালয়েশিয়া স্বাধীনতা লাভ করার পর দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার একটি বহু-জাতির, বহু-ধর্মীয় সমৃদ্ধ, সবচেয়ে ধনী এবং সবচেয়ে উন্নত দেশগুলির মধ্যে একটি দৃঢ় অর্থনীতির দেশে হিসেবে গড়ে তুলেছে। মালয়েশিয়ার নতুন প্রধানমন্ত্রী দাতু সেরি আনোয়ার ইব্রাহিম শপথ নেওয়ার পর খাদ্য নিরাপত্তা সংকটের প্রেক্ষিতে চলতি অর্থবছরে কৃষিখাতে লক্ষ্য পূরণে নানামুখী কার্যক্রম গ্রহণ করতে যাচ্ছে। তার মধ্যে এগ্রোইন্ড্রাস্ট্রি উল্লেখযোগ্য। এক্ষেত্রে কনস্ট্রাকশনের পাশপাশি কৃষি হয়ে উঠতে পারে বাংলাদেশিদের জন্য শাপে বর।
এ বিষয়ে মালেশিয়াস্থ প্রবাসী সাংবাদিকরা বলেন, ‘আমরা যখন মালয়েশিয়ার বিভিন্ন জায়গায় বেড়াতে যাই তখন মালয়েশিয়ায় কৃষি কাজের সঙ্গে জড়িত অনেক প্রবাসী বাংলাদেশিকে দেখি। তারা বেশ সুনামের সঙ্গে কাজ করছে। এছাড়া মালয়েশিয়াতে অনেক পতিত জমি আছে যেখানে প্রচুর বাংলাদেশির যুক্ত হওয়ার সম্ভাবণা রয়েছে। বাংলাদেশ সরকারের মাধ্যমে যদি উদ্যোগ নেওয়া হয় তাহলে এসব জমিতে চাষ করতে পারলে একদিকে যেমন জনশক্তি রপ্তানি বাড়বে। অন্যদিকে প্রচুর রেমিটেন্স দেশে পাঠানোর সুযোগ সৃষ্টি হবে। এছাড়াও শস্য উৎপাদনের মাধ্যমে মালয়েশিয়ার অর্থনীতিতে বাংলাদেশিদের বিরাট অবদান রাখার সুযোগ তৈরি হবে।’
ডিপার্টমেন্ট অব স্ট্যাটিস্টিক মালয়েশিয়া-২০২২ এর তথ্যমতে, ৩ লাখ ৩০ হাজার ৮০৩ বর্গকিলোমিটারের মলায়েশিয়ার জনসংখ্যা প্রায় ৩ কোটি ২৭ লাখ। এবং ওয়ার্ল্ড ব্যাংকের তথ্য মতে, মালয়েশিয়ার মোট আবাদযোগ্য জমির পরিমান ৮ লাখ ২৬ হাজার হেক্টর প্রায়। সে হিসেবে প্রবাসী বাংলাদেশিরা মালয়েশিয়ার কৃষি খাতে তাদের স্বপ্ন আরও বড় করতেই পারে। শুধু দরকার রাষ্ট্রীয়ভাবে একটু দেখভালের।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।