সাইফুল বারি ৩০ বছর বয়সী বাংলাদেশি। সিঙ্গাপুরের নানিয়াং টেকনোলজিক্যাল ইউনিভার্সিটি থেকে পিএইচডি করেছেন। অ্যামাজনে ইন্টার্নশিপের সময় মাল্টিলিঙ্গুয়াল এআই-এ রেখেছেন গুরুত্বপূর্ণ অবদান। এমআইটি টেক রিভিউ-এর হিসেবে আজ তিনি মিডল ইস্ট এবং উত্তর আফ্রিকার শ্রেষ্ঠ ৩৫ গবেষকের অন্যতম।
বাংলা পৃথিবীর অন্যতম প্রচলিত ভাষা। বাংলাদেশে সরকারি ও ব্যক্তিগত সাহিত্যের সমৃদ্ধ ডেটাসেট রয়েছে। এগুলো ব্যবহার করে আমরা নিজস্ব বাংলা ভাষার মডেল তৈরি করতে পারি।
দুঃখজনকভাবে, আমাদের দেশের সম্পদের সঠিক ব্যবহার করা হয় না। এর ফলস্বরূপ অনেক মেধাবী ব্যক্তিই বিদেশে চলে যান। তাঁরা নিজেদের মেধা, চিন্তাভাবনা এবং পরিশ্রম দিয়ে অন্য দেশের অর্থনীতিকে সমৃদ্ধ করছেন। আমরা যদি প্রয়োগমুখী গবেষণায় বিনিয়োগ করতাম, তবে সাইফুলের মতো গবেষকেরা আজ বাংলাদেশকে বিশ্বমঞ্চে উজ্জ্বল করতে পারতেন। এর সুফল পুরো দেশের জনগণ পেত।
সাইফুল যোগ দিলেন ‘আল্লাম’ টিমে। আল্লাম—যার পুরো নাম ‘অ্যারাবিক লার্জ ল্যাঙ্গুয়েজ মডেল’। তখন টিমের অবস্থা ছিল টাইটানিকের মতো। দুই মাস আগে একটা প্রেস রিলিজ দিয়ে আল্লামের সূচনা হয়েছিল। কিন্তু প্রোডাক্ট পুরোপুরি ব্যর্থ। টিমের আত্মবিশ্বাস তখন কফির মগে ডুবে ছিল।
আপনারা নিশ্চয়ই চ্যাটজিপিটির নাম শুনেছেন। এটা একটা ল্যাঙ্গুয়েজ মডেল, বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দিতে পারঙ্গম। কিন্তু এটি ইংরেজি ভাষার ওপর ভিত্তি করে তৈরি, ফলে বাংলা বা আরবিতে এর কার্যকারিতা সীমিত।
কিন্তু ভাষার জটিলতা বোঝা কি এত সহজ? ধরুন, বাংলা শব্দ ‘দাদা।’ এর মানে বড় ভাই, আবার দাদু বা শ্রদ্ধাসূচক সম্বোধন। পশ্চিমবঙ্গ আর বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে এর অর্থ আবার ভিন্ন। আরবিতে এরকমই একটা শব্দ হলো ‘ইনশাআল্লাহ,’ যার মানে শুধু ‘আল্লাহ চাইলে’ নয়—এটা বিনয়, আশা আর বিশ্বাসের প্রতীক। একটি সার্বভৌম ভাষার মডেল এসব সূক্ষ্ম বিষয় বুঝতে সক্ষম হবে এবং ব্যবহারকারীকে যথাযথ সহায়তা প্রদান করতে পারবে।
সাইফুল এবং তাঁর দলের তৈরি আল্লাম এ বিষয়ে একটি বিপ্লব ঘটিয়েছে। আল্লাম শুধু আরবির ধর্মীয় ও সাংস্কৃতিক বিষয় বোঝে না, বরং প্রাসঙ্গিক উত্তর দিতে সক্ষম। মজার ব্যাপার হলো, সাইফুল বাংলা এবং ইংরেজিভাষী। আরবির কিছুই জানেন না! কিন্তু তাতে কী! ট্রান্সফার লার্নিং আর তার দুর্দান্ত বুদ্ধিমত্তা কাজে লাগিয়ে তিনি এমন কিছু করলেন, যেটা দেখে পুরো টিম আবার উঠে দাঁড়াল।
আজ আল্লাম শুধু আইবিএম ওয়াটসনক্স (IBM Watsonx) এবং মাইক্রোসফট আজুরেই (Microsoft Azure) নয়, বরং সৌদি আরব এবং মধ্যপ্রাচ্যে এআই গবেষণায় নতুন আলো দেখাচ্ছে। আর সাইফুল? সম্প্রতি এমআইটি টেক রিভিউ জার্নালের বার্ষিক মধ্যপ্রাচ্যের শ্রেষ্ঠ ৩৫ উদ্ভাবকের তালিকায় জায়গা করে নিয়েছেন। মধ্যপ্রাচ্যের নাগরিক না হয়ে ৩৫ জনের তালিকায় শুধু সাইফুল এবং আরেকজন উদ্ভাবক (রুশ) জায়গা পেয়েছেন । মধ্যপ্রাচ্যে কর্মরত লক্ষ লক্ষ মানুষের জন্য এটি বিরল সম্মান এবং অত্যন্ত আশাব্যঞ্জক সংবাদ।
তখনই এলো সাইফুলের জাদু। মানুষটা কী করলেন, কে জানে! কয়েক মাসের মধ্যেই আল্লাম নতুন জীবন পেল। টিমের জটিল সমস্যাগুলো এমনভাবে সমাধান করল, যেন ম্যাজিক শো চলছে। সাইফুল হয়ে উঠলেন আমাদের ‘টিম সুপারম্যান’।’
সাইফুল শুধু একজন গবেষক নন। তিনি প্রমাণ করেছেন, সঠিক দৃষ্টিভঙ্গি আর কঠোর পরিশ্রম দিয়ে সারা বিশ্বে আলো ছড়ানো যায়। আমাদের উচিত এ ধরনের প্রতিভাবানদের স্বীকৃতি দেওয়া এবং তাঁদেরকে দেশের জন্য কাজ করার ক্ষেত্র তৈরি করে দেওয়া।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।