জুমবাংলা ডেস্ক : দিনাজপুরের ফুলবাড়ী উপজেলায় ছাগল চুরির অপবাদে শারীরিক প্রতিবন্ধীসহ তিন কিশোরকে গাছে বেঁধে পৈশাচিক নির্যাতনের ঘটনা ঘটেছে। এ ঘটনায় আরো দুই কিশোরকে খুঁজছে নির্যাতনকারীরা। গতকাল শনিবার দুপুরে ফুলবাড়ী উপজেলার ৭ নম্বর শিবনগর ইউনিয়নের রামভদ্রপুর বুদ্ধিজীবীর মোড় নামক স্থানে এ ঘটনা ঘটে।
এ ঘটনায় রামভদ্রপুর উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক মোস্তাকিম সরকার বাবু মাস্টারসহ আটজনের বিরুদ্ধে থানায় অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে।
জানা গেছে, গতকাল শনিবার সকাল সাড়ে ১১টায় উপজেলার ত্রিমোহনী স্লুইচ গেট এলাকার বাসিন্দা শারীরিক প্রতিবন্ধী সৈয়দ শামীম হোসেন (১৬) এবং পূর্ব জাফরপুর গ্রামের রাকিবুল ইসলাম (১৫) ও নিশাতকে (১৬) নিজ বাড়ি থেকে ডেকে রামভদ্রপুর গ্রামের বুদ্ধিজীবী মোড়ে নিয়ে যায়। সেখানে তাদেরকে ওই গ্রামের রূপচাঁদের ছাগল চুরির অপবাদ দিয়ে শিক্ষক মোস্তাকিম সরকার বাবু মাস্টার (৫০), মো. শাকিব (২৫), মো. শিপন (২৬), রেজাউল (৫৫), আফজার হোসেন (৬০), মো. শুভ (২৪), হৃদয় (২৫), নূরনবীসহ (২৬) ওই গ্রামের বেশ কয়েকজন গাছের সঙ্গে বেঁধে রড, পাইপ ও লাঠিসোঁটা দিয়ে মধ্যযুগীয় কায়দায় পিটিয়ে গুরুতর জখম করে। চুরির স্বীকারোক্তি নিতে প্রকাশ্যে কিশোর তিনজনের পায়ে ইনজেকশনের সিরিঞ্জের সুচ পায়ের তালু ফুটিয়ে নির্যাতন চালানো হয়েছে।
এই বর্বরোচিত নির্যাতনের ঘটনার ভিডিও চিত্র ধারণও করেছেন গ্রামের বেশ কয়েকজন যুবক। মারধর শেষে বাবু মাস্টারসহ তার সহযোগীরা আহত কিশোর তিনজনকে ছাগল চোর আখ্যা দিয়ে শিবনগর ইউনিয়ন পরিষদে হাজির করেন। পরে ইউনিয়ন পরিষদ থেকে ওই তিন কিশোরের অভিভাবকদের জিম্মায় ছেড়ে দেওয়া হয়। পরিবারের লোকজন রাকিবুল ও শামীমকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেয়। তবে গ্রামের মাতুব্বরদের নির্যাতনের ভয়ে নিখোঁজ রয়েছে আরো দুই যুবক।
অপরদিকে মারধরের ঘটনার পর গতকাল শনিবার রাতেই গ্রাম্য সালিস বসে গ্রামের আমিন ড্রাইভারের বাসায়। সেখানে নিখোঁজ দুই কিশোরকে তিন দিনের মধ্যে হাজির করার জন্য অভিভাবকদের নির্দেশ দেন সালিসের মাতুব্বররা। হাজির করতে ব্যর্থ হলে জরিমানা হিসেবে এক লাখ ৬০ হাজার টাকা দিতে নির্দেশ দেওয়া হয়। সালিস শেষে ওই রাতেই মাতুব্বরদের নির্দেশে আহত নিশাদের নানির একটি গাভি এবং নিখোঁজ নূর আলমের বাড়ি থেকে একটি চার্জার, রিকশা ভ্যান নিয়ে যায় লোকজন।
নির্যাতনের শিকার শারীরিক প্রতিবন্ধী শামীম হোসেন ও রাকিবুল ইসলাম বলেন, হঠাৎ করেই বাবু মাস্টারসহ তাদের লোকজন আমাদেরকে মোটরসাইকেলে তুলে নিয়ে যায়। পরে ছাগল চুরির অপবাদে নির্যাতন চালায়। নির্যাতন সইতে না পেরে বাধ্য হয়ে চুরির অপবাদ স্বীকার করতে হয়েছে জীবন বাঁচাতে। কিন্তু আমরা চুরি সম্পর্কে কিছুই জানি না। পরে তারা পাশের কলাবাগানে নিয়ে গলায় চাকু ধরে পায়ে সুই দিয়ে খোঁচাতে থাকে।
রাকিবুলের বাবা মোমিনুল ইসলাম বলেন, পূর্বশত্রুতার জের ধরে এক প্রতিবন্ধী ও আমার ছেলেসহ তিনজনকে ছাগল চোর সাজিয়ে বর্বর নির্যাতন চালায় বাবু মাস্টারসহ তার লোকজন। ছেলেকে ধরে নির্যাতন করা হচ্ছে জেনে ঘটনাস্থলে গেলে তাকেও মারধর করা হয়েছে।
ইউপি চেয়ারম্যান মামুনুর রশিদ চৌধুরী বিপ্লব বলেন, তার নির্দেশে ইউনিয়ন পরিষদে সোপর্দ করা দুই কিশোরকে বাদল মেম্বার নিজ নিজ অভিভাবকদের হাতে তুলে দিয়ছেন।
এ ব্যাপারে মোস্তাকিম সরকার বাবু মাস্টার বলেন, মারধর করে ভুল হয়ে গেছে। আমি সার্ভিস করি, আমার যাতে কোনো ক্ষতি না হয় সে বিষয়ে খেয়াল রাখবেন।
থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ফখরুল ইসলাম বলেন, গাছে বেঁধে তিন যুবককে নির্যাতনের ঘটনায় অভিযোগ পাওয়া গেছে। ঘটনাটি এসআই আজাদকে তদন্তের জন্য দেওয়া হয়েছে। তদন্তের পর প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। সূত্র : কালের কন্ঠ।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।