জুমবাংলা ডেস্ক : বন্ধুকে সঙ্গে নিয়ে মা-বাবাকে খুঁজতে এসেছেন সেলিনা ম্যাকডোনাল। মা-বাবাকে খুঁজে পেতে তিনি সাংবাদিকদের সহযোগিতা কামনা করেন। তিনি বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত জার্মানির নাগরিক।
পাঁচ দিনের শিশুকন্যাকে রাস্তার পাশে ফেলে রেখে যায় মা-বাবা। ১৯৭৬ সালের জুন বা জুলাই মাসের কোন একদিনের কথা। এরপর স্থানীয় এক লোক শিশুটিকে কুড়িয়ে একটি এতিমখানায় নিয়ে যাবার সময় ওই পথে যাচ্ছিলেন এক কানাডিয়ান দম্পতি। ওই দম্পতি শিশুটি দেখে দত্তক নিয়ে যেতে চাইলে লোকটি কানাডিয়ান দম্পতির হাতে ওই শিশুকে তুলে দেন। পরবর্তীতে সেই দম্পতি শিশুটিকে নিয়ে কানাডায় চলে যান। এরপর তিনি কানাডাতে সেলিনা ম্যাকডোনাল নামে বড় হতে থাকেন।
কিন্তু জন্মভূমি ও আসল মা–বাবার প্রতি অন্যরকম টান অনুভব করেন সেলিনা ম্যাকডোনাল। সেই টানে জার্মানি বন্ধু মার্ক সিয়েরারকে নিয়ে বাংলাদেশে আসেন।
চাকুরির সুবাদে সেলিনা ম্যাকডোনাল দত্তক বাবার হাত ধরে জার্মানিতে চলে যান। সেই থেকে জার্মানিতেই বসবাস করছেন তিনি।
শিশুটির গ্রামের বাড়ি ছিল জামালপুর জেলার সরিষাবাড়ী উপজেলার গাইতিপাড়া গ্রামে। ছোটবেলায় কানাডিয়ান দত্তক বাবার কাছে এমন গল্পই শুনেছেন তিনি।
ময়মনসিংহ প্রেসক্লাবে এসে উপস্থিত সাংবাদিকদের সাথে আলাপকালে এমন গল্প শুনিয়ে সেলিনা ম্যাকডোনাল জানান, ৪২ বছর পর মা-বাবার খোঁজে জার্মানি থেকে তিনি বাংলাদেশে এসেছেন। তার দত্তক বাবা জন ম্যাকডোনাল ১৯৭৬ সালের জুন বা জুলাই মাসে জামালপুর জেলার সরিষাবাড়ি উপজেলার গাইতিপাড়া গ্রাম থেকে তাকে দত্তক হিসেবে নিয়ে যান। জন ম্যাকডোনাল তখন একটি বেসরকারি শিশু সংস্থার প্রতিনিধি হিসেবে বাংলাদেশে কাজ করতে এসেছিলেন। বাংলাদেশে কাজ শেষে জন ম্যাকডোনাল তাকে জার্মানি নিয়ে যান এবং সেলিনা ম্যাকডোনাল নামে একটি স্কুলে ভর্তি করান।
তার বয়স যখন ৬ বছর তখন তিনি জানতে পারেন তাকে বাংলাদেশ থেকে নেয়া হয়েছে এবং জন ম্যাকডোনাল তার দত্তক বাবা। তিনি জার্মানিতে একাদশ শ্রেণি পর্যন্ত পড়াশুনা করেছেন। স্টেফান নামে এক জার্মান নাগরিকের সাথে তার বিয়ে হয়। তাদের এঞ্জেলা (২২) নামে একটি মেয়ে ও ফিন (১৫) নামে পুত্র রয়েছে। বেশ কিছুদিন আগে সেলিনা ইন্টারনেটের মাধ্যমে জামালপুরের সরিষাবাড়ি খোঁজে বের করেন। দুই সপ্তাহ আগে তিনি জার্মান বন্ধু মার্ক সিয়েরারকে নিয়ে বাংলাদেশে আসেন।
সেলিনা জানান, প্রথম স্বামীর সাথে ছাড়াছাড়ি হওয়ার পর জার্মানির ফ্রাঙ্কফুর্ট শহরের কাছে এক হাসপাতালের চিকিৎসক মার্ক সেয়ারার সাথে তার পরিচয় হয়। একই হাসপাতালে তিনিও চাকরি করেন। তিনি মার্ক সেয়ারারকে নিয়ে বাংলাদেশে আসার সিদ্ধান্ত নেন। গত ৪ অক্টোবর তারা ঢাকায় আসেন এবং এক জার্মান প্রবাসীর আশ্রয়ে হোটেলে ওঠেন। তারই পরামর্শে জার্মান প্রবাসী ময়মনসিংহের দেলোয়ার হোসেনকে সাথে নিয়ে ৭ অক্টোবর জামালপুর জেলার সরিষাবাড়ি উপজেলার গাইতিপাড়া গ্রামে যান।
জন্মস্থানে গিয়ে মা-বাবাকে খুঁজে না পেয়ে তিনি আবেগাপ্লুত হয়ে পড়েন এবং গ্রামের মেয়েদের জড়িয়ে ধরে কান্নায় ভেঙে পড়েন। তিনি কান্নাজড়িত কণ্ঠে আবারো জন্মস্থানে আসার কথা বলে হতাশ হয়ে ফিরে আসেন।
তিনি জামালপুরের সরিষাবাড়ি থেকে বুধবার রাতে ময়মনসিংহ প্রেসক্লাবে এসে সাংবাদিকদের কাছে তার অনুভূতি ব্যক্ত করেন।
সেলিনা আরো জানান, দত্তক বাবা জন ম্যাকডোনাল গুগুল ম্যাপের মাধ্যমে জন্মস্থান জামালপুরের সরিষাবাড়ি শনাক্ত করেন এবং ফেসবুকের মাধ্যমে তার জন্মস্থানের একটি মসজিদের ছবি প্রিন্ট করে সেলিনা ম্যাকডোনালকে দেন। এসব সূত্র ধরেই তিনি ময়মনসিংহের দেলোয়ার হোসেনের সহায়তায় জামারপুরের গাইতিপাড়া গ্রামের সন্ধান পান।
সেলিনা ম্যাগডোনাল জানান, আরো দু’সপ্তাহ তিনি বাংলাদেশে অবস্থান করবেন। এই সময়টাতে তিনি সুন্দরবনসহ বগুড়া ও খুলনার কয়েকটি দর্শনীয় স্থান ভ্রমণ শেষে জার্মানির উদ্দেশ্যে ঢাকা ত্যাগ করবেন। সাংবাদিকদের সাথে আলাপকালে সেলিনা ম্যাগডোনালকে পরিশ্রান্ত-ক্লান্ত দেখাচ্ছিল।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।