জুমবাংলা ডেস্ক : ধান-চালের বাজারে বড় সিন্ডিকেটের ভূমিকায় এখন মিলাররা। মিলার ও মধ্যস্বত্বভোগীদের দৌরাত্ম্যে চালের ভোক্তা দামের ৭১ শতাংশই বঞ্চিত হন কৃষক। ১০০ টাকার চালের কৃষক পান সর্বোচ্চ ২৯ টাকা। অর্থনৈতিক শ্বেতপত্র কমিটির প্রাথমিক প্রতিবেদনে এসব তথ্য উঠে এসেছে। কালের কণ্ঠের প্রতিবেদন থেকে বিস্তারিত-
এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি) ও ইফপ্রির ভারত, চীন ও বাংলাদেশের প্রধান খাদ্যশস্যের ওপর একটি গবেষণায় দেখানো হয়েছে, বাংলাদেশের কৃষকরা ফসলের দাম সবচেয়ে কম পান।
বাংলাদেশের ৬২ শতাংশ চালকল মালিক ফড়িয়াদের কাছ থেকে চাল কেনেন; যেখানে ভারতের ৬৮ শতাংশ চালকল মালিক কৃষক ও কৃষক সংগঠনগুলোর কাছ থেকে ধান কেনেন। চীনে ৮৩ শতাংশ চালকল সরাসরি কেনে কৃষকের কাছ থেকে। সরাসরি কৃষকদের কাছ থেকে মিলাররা ধান না কেনার কারণেই বাংলাদেশের কৃষকরা ন্যায্য দাম থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন।
শ্বেতপত্র কমিটির প্রতিবেদনের তথ্য মতে, কৃষিতে কম আয়ের অন্যতম কারণ হলো পাইকারি ও খুচরা বাজারের মধ্যে বড় ধরনের মূল্য পার্থক্য। বাংলাদেশে কৃষকরা চাল উৎপাদনের মূল্য থেকে মাত্র ৭ থেকে ২৯ শতাংশ পান। ক্ষুদ্র ধান চাষিরা বিভিন্ন কারণে দাম থেকে বঞ্চিত হন। এর মধ্যে রয়েছে প্রাতিষ্ঠানিক উৎস থেকে সীমিত ঋণ প্রাপ্তি, অনানুষ্ঠানিক বাজার থেকে উচ্চ সুদের বাধ্যতামূলক ঋণের ওপর নির্ভরতা, কৃষিপণ্যের দামে অস্থিরতা এবং অন্যান্য উৎপাদন ঝুঁকি।
ফলে প্রান্তিক কৃষক স্বল্প মূল্যে চাল এবং অন্যান্য কৃষিপণ্য বিক্রি করতে বাধ্য হন। দেশের প্রায় বাজারেই একটি ‘সিন্ডিকেট’ থাকার অভিযোগ রয়েছে। তারা বাজারক্ষমতা ব্যবহার করে কৃষকদের ফসলের ন্যায্য দাম থেকে বঞ্চিত করে। মিলাররা চালের বাজার ও মূল্য সংযোজনে সবচেয়ে শক্তিশালী ও সংগঠিত গোষ্ঠী। তাঁরা মোট চাল বাণিজ্যের বড় অংশ মুনাফা হিসেবে পকেটে ভরেন।
প্রতিবেদনে বলা হয়, মিলাররা তাঁদের লাভের জন্য মূল্য সংযোজনের মাধ্যমে মূল্য পার্থক্য তৈরি করেন। এর মাধ্যমে নির্দিষ্ট গুণমানের বৈশিষ্ট্যসহ বিভিন্ন ধরনের চাল তৈরি করেন। এই মূল্য পার্থক্যের প্রধান সুবিধাভোগী হলেন মিলাররা এবং অন্য মধ্যস্বত্বভোগী ও অংশগ্রহণকারীরা; বিশেষ করে পাইকারি ও খুচরা বিক্রেতা এবং সুপারমার্কেটগুলো। ধান চাষিরা উৎপাদনের ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ ঝুঁকি বহন করলেও তাঁরা মূল্য সংযোজন থেকে সবচেয়ে কম সুবিধা পান। আবার মাঠ ফসলের মধ্যে সবচেয়ে কম লাভজনক পণ্য ধান। অন্যদিকে সবচেয়ে লাভজনক পণ্য মাষকলাই, মুগ, রসুন ও আদা। এ জন্য ধানের মূল্য সংযোজনে কৃষকদের অংশগ্রহণ শক্তিশালী করা প্রয়োজন। তাই সব কৃষিপণ্যের ক্ষেত্রে সমান সহায়তা দিয়ে বাজার স্থিতিশীল করা সম্ভব নয়। বিশেষ কিছু পণ্যের ক্ষেত্রে বিশেষ বা আলাদা সহায়তা প্রয়োজন। এ ছাড়া ভূমিহীন কৃষকদের জন্য আর্থিক সুবিধার প্রবেশাধিকার নিশ্চিত করতে হবে। তাঁদের উপকরণ সহায়তা পৌঁছানোর বিষয়ে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে।
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক ও অর্থনৈতিক শ্বেতপত্র প্রণয়ন কমিটির সদস্য শরমিন্দ নীলোর্মি বলেন, ধান চাষিরা ক্ষুদ্র ও প্রান্তিক হওয়ায় ধান আবাদ করে খুব বেশি লাভবান হতে পারেন না। আবার বিপণন বাধা ও গুদামজাতকরণের অভাবে কৃষকরা বাজারে দরদামের ক্ষেত্রে তেমন কোনো প্রভাব রাখতে পারেন না। কৃষকদের এই দুর্বলতার সুযোগ নিচ্ছেন মিলাররা। তাই ধানের মূল্য সংযোজনে কৃষকদের আরো ঘনিষ্ঠভাবে অন্তর্ভুক্ত করতে হবে। কৃষকদের বাজারে প্রবেশাধিকার বাড়ানো, মধ্যস্থতাকারীদের ওপর নির্ভরশীলতা কমানো এবং ভোক্তাদের চাহিদার সঙ্গে উৎপাদনের পরিমাণকে সংগতিপূর্ণ করতে হবে। এ ছাড়া ধান উৎপাদন খরচ কমাতে কৃষককে আধুনিক কৌশল যেমন দিতে হবে, তেমনি ভোক্তাকে চাল কেনার ক্ষেত্রে সহায়তা দেওয়া প্রয়োজন। কারণ চালের মূল্যবৃদ্ধিতে ক্রেতাদের এখন নাভিশ্বাস অবস্থা তৈরি হয়েছে।
বিবিএসের তথ্যে দেখা গেছে, দেশের ক্ষুদ্র চালকলগুলোর মজুদ ক্ষমতা ২৮ লাখ ৫৭ হাজার টন, ছোট চালকলগুলোর ৩৭ লাখ ৩৮ হাজার টন এবং মাঝারি থেকে বড় চালকলগুলোর ধারণক্ষমতা ৩০ লাখ ৭০ হাজার টন। ফলে মজুদ সক্ষমতায় এরই মধ্যে চালের বাজারে পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণ মিলাররা নিয়ে নিয়েছেন। এক দশক ধরেই দেশের অটোরাইস মিলগুলোর উৎপাদন ও মজুদ ক্ষমতা অনেক বেড়েছে। মিলারদের বাড়তি মজুদ সক্ষমতা যত বেড়েছে ততই চালের বাজার অস্থিতিশীল হয়েছে।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।