জুমবাংলা ডেস্ক : মিষ্টি কুমড়া চাষ পদ্ধতি , মিষ্টি কুমড়া বর্ষজীবী লতানো উদ্ভিদ। কচি মিষ্টি কুমড়া সবজি হিসেবে এবং পাকা ফল দীর্ঘদিন রেখে সবজি হিসেবে খাওয়া যায়। পরিপক্ক ফল শুষ্ক ঘরে সাধারণ তাপমাত্রায় প্রায় ৪-৬ মাস সংরক্ষণ করা যায়। শুধু সবজি হিসেবে নয় মিষ্টি কুমড়ার বীজে রয়েছে প্রচুর পুষ্টি ও ওষুধি গুণ।
জাত :
আমাদের দেশে সাধারণত সুপ্রিমা, সুইটি, ড্রিমগোল্ড, সলিড গোল্ডসহ বেশ কিছু জাতের মিষ্টি কুমড়োর চাষ হয়।
মাটি তৈরি এবং চাষের সময় :
প্রায় সারা বছরই কুমড়ো চাষ করা যায় । কুমড়ার জন্য উষ্ণ ও আর্দ্র জলবায়ু প্রয়োজন। তাপমাত্রা ১৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসের নিচে চলে গেলে গাছের দৈহিক বৃদ্ধির হার কমে যায়। সুনিষ্কাশিত জৈব পদার্থ সমৃদ্ধ দোঁআশ বা এঁটেল দোঁআশ মাটি মিষ্টি কুমড়ো চাষাবাদের জন্য ভালো।
চারা উৎপাদন :
চারা সাধারণত পলিব্যাগে চারা তৈরি করা হয়। এই পদ্ধতিতে চারা তৈরি করা ভাল। পলিব্যাগের আকার ৩ থেকে ৪ ইঞ্চি হতে হবে। ১৫ থেকে ২০ ঘণ্টা ভিজিয়ে রাখার পর কুমড়োর বীজ বপন করতে হবে। অন্যদিকে ৬:৪ অনুপাতে দোআঁশ মাটির সঙ্গে গোবর-ছাই মিশিয়ে নিয়ে বীজতলা তৈরি করে নিতে হবে।
বীজের হার :
মিষ্টি কুমড়া চাষের জন্য সাধারনত এক বিঘা জমিতে ৬৫০-৮০০ গ্রাম বীজ প্রয়োজন হয়। এক হেক্টর জমিতে ৫-৬ কেজি বীজ লাগে।
জমি তৈরি ও বীজ বপন :
পারিবারিকভাবে আঙিনায় চাষ করতে হলে একটি নির্দিষ্ট স্থানে মাদা তৈরি করে তাতে বীজ বপন করতে হবে। তারপর চারা বড় হলে মাচা তৈরি করে দিতে হবে বা কোন গাছের সাথে তুলে দিতে হবে।জমিতে চাষ করতে হলে বীজ বপন করার আগে জমি ভালোভাবে তৈরি করে নিতে হবে। জমি ভালোভাবে চাষ ও মই দিয়ে তৈরি করে মাটি ঝুরঝুরা করে দিতে হবে। এরপর মাটি সমান করে মাদা তৈরি পর বীজ বপন করতে হবে।
পরিচর্যা :
জমিতে আগাছা থাকলে তা পরিষ্কার করে চারা গাছের গোড়ায় কিছুটা মাটি তুলে দিতে হবে। মাঝে মাঝে নিড়ানি দিয়ে গাছের গোড়ার মাটি আলগা করে দিতে হবে। কৃত্রিম পদ্ধতিতে পুরুষ ফুলের রেণু স্ত্রী ফুলের ওপর ছড়িয়ে দিলে উৎপাদন বাড়বে। গাছের গোড়ার দিকে ছোট ছোট শাখা-প্রশাখা বের হয়। এগুলোকে শোষক শাখা বলে। শোষক শাখা গাছের বৃদ্ধিতে বাধা দেয় ও ফলন কমিয়ে দেয়।
সার প্রয়োগ পদ্ধতি :
মূল জমি তৈরির সময় জৈব সার, টিএসপি, দস্তা, ম্যাগনেসিয়াম ও বোরিক এসিডের অর্ধেক অংশ প্রয়োগ করতে হবে। বাকি অর্ধেক জৈব সার, টিএসপি, দস্তা, ম্যাগনেসিয়াম ও বোরিক এসিড মাদায় প্রয়োগ করতে হবে। ইউরিয়া ও এমওপি সমান তিনভাগে ভাগ করে বীজ বপনের সময় প্রথম ভাগ, ১৫-২০ দিন পর দ্বিতীয় ভাগ এবং ৩৫-৪০ দিন পর তৃতীয়ভাগ প্রয়োগ করতে হবে।
জমির উর্বতা বিবেচনা করে সারের পরিমাণ ও প্রয়োগ পদ্ধতি (কেজি শতাংশ):
সেচ প্রদান :
কুমড়া গাছের বৃদ্ধি, ফুল ও ফল ধারণের জন্য মাটিতে রস থাকার প্রয়োজন। শুষ্ক আবহাওয়া থাকলে ৫-৬ দিন পর পর হালকা সেচ দিতে হবে। তবে ফল তোলার তিন সপ্তাহ আগেই সেচ দেওয়া বন্ধ করে দিতে হবে। অপরদিকে বর্ষা বা বৃষ্টির পানি যেন বেশি দিন গাছের গোড়ায় জমে না থাকে সে ব্যবস্থা করতে হবে।
আগাছা দমন :
জমিতে আগাছা জমলে তা দমন করে দিতে হবে। আগাছা গাছের বৃদ্ধিতে বাধা দেয় এবং মাটি থেকে পুষ্টি শোষন করে নেয়। তাই জমিতে আগাছা দমন করতে হবে।
পোকা ও রোগ দমন :
কুমড়া জাতীয় গাছের বিভিন্ন পোকার মধ্যে লাল পোকা, কাঁটালে পোকা এবং ফলের মাছি উল্লেখ্যযোগ্য। এ পোকা দমনের জন্য সেভিন। ডায়াজিনন প্রয়োগ করা যেতে পারে। আর এ জাতীয় সবজির রোগের মধ্যে পাউডারি মিলডিও, ডাউনি মিলডিউ ও এনথ্রাকনোজ প্রধান। এসব রোগে দুই সপ্তাহ পর পর ডায়াথেন প্রয়োগ করতে হবে। মিষ্টি কুমড়ায় জাবপোকার আক্রমণে কুমড়ার বাড়ন্ত ডগা ও পাতা হলুদ হয়ে যায়। গাছ তার সতেজতা হারিয়ে ফেলে এবং ফলন গুরুতরভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। প্রাথমিক অবস্থায় আক্রান্ত পাতা ও ডগার জাবপোকা হাত দিয়ে পিষে মেরে ফেলা যায়। নিমবীজের দ্রবণ বা সাবানগোলা পানি স্প্রে করেও এ পোকার আক্রমণ অনেকাংশে কমে যায়।
ফসল সংগ্রহ:
বীজ বপণের দুই মাসের মধ্যে কুমড়ার গাছ ফল ধরতে শুরু করে এবং রোগাক্রান্ত না হলে আড়াই মাসব্যাপী ফল দিয়ে থাকে। পরাগায়নের ১০-১৫ দিনের মধ্যে ফল সবজি হিসেবে খাওয়ার উপযোগী হয়। কুমড়ার ফল সংগ্রহের সুনির্দিষ্ট কোনো পর্যায় নেই। ব্যবহারের উদ্দেশ্য অনুযায়ী অপক্ক ও পরিপক্ক ফল পাড়া হয়। ফল যত বেশি পাড়া হয়, ফলন তত বেশি হয়। সবজি হিসেবে ব্যবহার করতে হলে ওজন আধা কেজি হলেও ফল সংগ্রহ যায়। ফল পরিপক্ক হলে হালকা হলুদ রং ধারণ করে। ফল পাকাতে চাইলে শেষের দিকে গাছে দিতে হবে। ফল পাকালে হেক্টর প্রতি ফলন কমে যায়। তবে সবজি হিসেবে ফল সংগ্রহ করলে হেক্টর প্রতি ২০ টন ফলন পাওয়া যায়।
উপকারিতা :
ফাইবারজাতীয় হওয়ায় মিষ্টি কুমড়া সহজেই হজম হয়। হজমশক্তি বৃদ্ধি ও কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করতে কার্যকরী ভূমিকা রাখে এটি। এছাড়া ডায়রিয়া নিয়ন্ত্রণ ও পরিপাক নালীর খাদ্য সঠিক উপায়ে সরবরাহেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে এই সবজি। মিষ্টি কুমড়া ত্বক উজ্জ্বল করতে সাহায্য করে। শরীরের রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ে, ক্যানসার, ডায়াবেটিস ও হৃদরোগ থেকে দূরে রাখে। স্ট্রেস কমাতে সাহায্য করে মিষ্টি কুমড়া। শরীরে শক্তি ও পুষ্টি জোগায়, ওজন কমাতে সাহায্য করে। নিয়মিত মিষ্টি কুমড়া খেলে রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে থাকে। এতে কার্ডিওভাস্কুলার ডিজিজ থেকে রক্ষা পাওয়া যায়। মিষ্টি কুমড়া শরীর থেকে দূষিত পদার্থ বের করতে সাহায্য করে তাই ফলে লিভারও ভালো থাকে।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।