সৌন্দর্যের মানদণ্ড কী? গায়ের রং, আকার, উচ্চতা নাকি ব্যক্তির অনন্যতা? সৌন্দর্য আপেক্ষিক বিষয় হলেও ‘আগে দর্শনধারী, পরে গুণবিচারি’ প্রবাদকে মনেপ্রাণে ধারণ করে আপামর বঙ্গবাসী। যার কারণে সুন্দরের পূজারী বলতে ধরেই নেওয়া হয়—সুন্দর হতে হলে হতে হবে ফর্সা, চিকন ও লম্বা। অথচ পৃথিবীতে প্রত্যেক মানুষই তার নিজের গুণাবলী, সৌন্দর্য ও চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য দিয়ে একে অপরের থেকে ভিন্ন। তাই বাহ্যিক সৌন্দর্য নির্ধারণে আদতে কোনো মাপকাঠির প্রয়োজন আছে কি না, তা অবশ্যই প্রশ্ন রাখে।
সৌন্দর্য প্রতিযোগিতা আপাতদৃষ্টিতে নেতিবাচক দৃষ্টিতেই দেখা হয়। এর মূল কারণ অবশ্য নারীকে কেন্দ্র করে সমাজে চলতে থাকা কাঠামোগত ধারণা। সর্বতোভাবেই সৌন্দর্যের মাপকাঠি হিসেবে এসব প্রতিযোগিতায় দেখা হয় নারীর লাস্যময়ী রূপ, শরীরের মাপ কিংবা প্রলুব্ধকর হাঁটাচলা।
সৌন্দর্য খুঁজে চলা এসব প্রতিযোগিতায় শ্রীর পাশাপাশি মেধা অন্বেষণের কথা থাকলেও আদতে সেখানে ঠাঁই পায় ‘জিরো ফিগার’ নারীদের জয়জয়কার। অপেক্ষাকৃত স্থূলকায় নারীরা এসব সৌন্দর্য প্রতিযোগিতায় অবাঞ্ছিতই বটে। বরং এসব প্রতিযোগিতা তাদের তাদের মনে তৈরি করে দেয় হীনমন্যতা, ক্ষুণ্ন করে তাদের আত্মবিশ্বাস।
তাই খানিকটা পৃথুলা নারীদের আত্মবিশ্বাস পুনরুদ্ধারের স্বার্থে প্রথমবারের মতো বাংলাদেশে আয়োজন করা হয়েছে ‘মিস অ্যান্ড মিসেস প্লাস বাংলাদেশ’ প্রতিযোগিতা। প্রতিযোগিতাটি কেবল সৌন্দর্য প্রতিযোগিতাই নয়; উপরন্তু স্বাস্থ্যবতী নারীদের নিজেদের ক্ষমতা ও শক্তি উপলব্ধির মাধ্যমও এটি। রিয়েল হিরোজ এক্স প্রো অ্যান্ড কমিউনিকেশনস প্রতিষ্ঠানের উদ্যোগে আয়োজন করা হয়েছে প্রতিযোগিতাটি। প্রতিষ্ঠানটির সিইও আয়োজক মালা খন্দকার এই প্রতিযোগিতার মূল ধারক ও বাহক।
২০২১ সালের নভেম্বর মাসে শুরু হয় ‘মিস অ্যান্ড মিসেস প্লাস বাংলাদেশ’ প্রতিযোগিতা। বিশ্বের অন্যান্য দেশে স্থূলকায় নারীদের নিয়ে বিগত বছরগুলোতে প্রতিযোগিতা হলেও বাংলাদেশে এ আয়োজন এবারই প্রথম। আয়োজক মালা খন্দকারের ভাষ্যমতে, এই প্রতিযোগিতার উদ্দেশ্য হলো স্থূলকায় নারীদের প্রতিনিয়ত যে কটাক্ষের সম্মুখীন হতে হয় তার বিরুদ্ধে সচেতনতা তৈরি করা। তাদের মধ্যে যেসব প্রতিভা রয়েছে সেসব তুলে ধরা।
স্লোগান যখন ‘বডি শেমিং বন্ধ করো’
‘মিস অ্যান্ড মিসেস প্লাস বাংলাদেশ’ প্রতিযোগিতার স্লোগান হলো ‘বডি শেমিং বন্ধ করো’। কেন এমন ধরনের প্রতিযোগিতার আয়োজন করলেন—এ প্রশ্নের উত্তরে মালা খন্দকার জানান, ‘আমাদের দেশে অনেকগুলো ব্র্যান্ড আছে, যেখানে পোশাকের ক্ষেত্রে দেখা যায় এক্সএল, টুএক্সএল থেকে সিক্সএক্সএল পর্যন্তও প্রোডাক্ট বিক্রি হয়। কিন্তু দিন শেষে প্রত্যেকটা ব্র্যান্ডেই স্কিনি ও লম্বা মডেল দিয়েই শ্যুট করা হয়। ওদের টার্গেটেড কাস্টমার প্লাস সাইজ মানুষেরা হলেও প্রমোশন স্কিনি ও লম্বা মডেল দিয়েই করা হয়। এর কারণে প্লাস সাইজের মানুষেরা অনেক হীনম্মন্যতায় ভোগেন ।’
মালা খন্দকারের ভাষ্যমতে, এই প্রতিযোগিতায় প্লাস সাইজের প্রচারণা করা হয় বলে অনেকের ধারণা রয়েছে। আদতে সেটি নয়, বরং স্বাস্থ্যসম্মতভাবে জীবনধারণ করার ধরন এ প্রতিযোগিতায় শেখানো হয়। মূলত স্বাস্থ্যকর জীবনযাত্রার বিষয়ে সচেতনতা সৃষ্টির জন্যই প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হয়েছে।
গ্রহণযোগ্যতা তৈরিতে যত উদ্যোগ
দেশে প্রতিযোগিতাটির গ্রহণযোগ্যতা বাড়াতে শুরু থেকেই বেশ কালঘাম ছোটাতে হয়েছিল আয়োজকদের। বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে প্লাস সাইজের নারীদের নিয়ে এ ধরনের প্রতিযোগিতা আগে হয়নি। যার কারণে বিশ্বাসযোগ্যতা অর্জন করতেও বেশ সময় লেগেছে তাদের। আয়োজকেরা বিভিন্ন ব্র্যান্ড, গণমাধ্যমে পরিচিত মুখদের দিয়ে প্রতিযোগিতাটি প্রমোশন করানোর পর মানুষের বিশ্বাসের জায়গা অর্জন করে।
জনমানুষের কাছে পৌঁছানোর পর বিপুল সাড়া পায় তারা। আমাদের সমাজে যারা স্থূলকায় কিংবা গায়ের রং যাদের শ্যামবর্ণের, তাদের নিয়ে বাঁকা কথা বা হাসিঠাট্টাও কোনো অংশে কম হয় না। তাছাড়া দেশীয় পটভূমি অনুযায়ী যারা ছিমছাম কিংবা যাদের গায়ের রং ফর্সা, তারাই মূলত সৌন্দর্য প্রতিযোগিতায় অংশ নিতে পারে। ব্যতিক্রমী এই প্রতিযোগিতাটি যখন মানুষের দ্বারে পৌঁছায়, তখন সমাজের প্রচলিত নিয়ম ভাঙার স্বরূপ হিসেবে সাধারণ মানুষের মধ্যেও শোরগোল পড়ে যায়।
প্রথমবারেই প্রায় ৪৫০ মানুষ এই প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণের জন্য আবেদন করে। সেখান থেকে প্রথম ধাপে অডিশনের মাধ্যমে ৪৫ জনকে বাছাই করা হয়। তারপর তাদেরকে নানানভাবে গ্রুম করে তৈরি করে নেওয়া হয়।
মালা খন্দকার বলেন, ‘আমাদের সমাজে যারা স্থূল বা মোটা তাদেরকে নাটক, সিনেমায় কৌতুকাভিনেতা হিসেবে প্রচার করা হয়। হাসির পাত্র হিসেবে উপস্থাপিত করা হয় তাদের। সমাজের এই অলিখিত নিয়ম বন্ধ করার জন্য বরং সচেতনতা সৃষ্টি করার জন্য আমরা এই উদ্যোগ নিই।’
প্রতিযোগিতার যত নিয়ম
এই প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণের জন্য প্রতিযোগিদের বয়স ১৮ থেকে ৪৫ বছরের মধ্যে হতে হবে। উচ্চতার ক্ষেত্রে অবশ্য কোনো বাঁধাধরা নিয়ম নেই। তবে জিরো ফিগারের কোনো নারী প্রতিযোগিতায় অংশ নিতে পারবে না, প্লাস ফিগারের হতেই হবে।
প্রতিযোগিতার অন্যান্য নিয়মকানুন ও পদ্ধতি জানতে চাইলে মালা জানান, ‘আমি এর আগে জাতীয় ও আন্তর্জাতিকভাবে আরো ৬টি প্রতিযোগিতার সঙ্গে যুক্ত ছিলাম। সেসব প্রতিযোগিতায় নির্দিষ্ট পরিমাণ উচ্চতা ও ওজন নির্ধারণ করে দেওয়া হতো। তাই সেসব নিয়ম আমি এই প্রতিযোগিতায় রাখিনি।’
বাংলাদেশে অন্যান্য সুন্দরী প্রতিযোগিতায় ফ্যাশনের পাশাপাশি প্রশ্ন-উত্তরের মাধ্যমে বিজয়ী নির্ধারণ করা হয়। বৈশ্বিকভাবে প্রতিযোগিতার বিজয়ী অবশ্য এভাবে নির্ধারিত হয় না। তাদেরকে সারা বছরব্যাপী গ্রুম করা হয়। তাই এক্ষেত্রেও আয়োজক বৈশ্বিক নিয়মকেই বেছে নিয়েছেন। দীর্ঘ সময় যাবত প্রতিযোগীদের বিভিন্ন গ্রুমারদের মাধ্যমে গ্রুমিংয়ের কাজ করার পরেই তৈরি করা হয়। তাই এখানে শুধু র্যাম্প পর্যন্তই গ্রুমিং সীমাবদ্ধ থাকে না। এখানে প্রতিযোগীদের মানসিক স্বাস্থ্যের দিক দেখা, শুদ্ধভাবে কথা বলা, নাচ, গান, অভিনয় সবই শেখানো হয়।
প্রতিযোগীরা যেন কেবল মডেলিংয়ে নিজেদের সীমাবদ্ধ না রেখে অন্যান্য ক্ষেত্রেও রাজত্ব করতে পারেন, তার জন্যই নানাভাবে গ্রুম করা হয়। আয়োজক মালা খন্দকার বলেন, ‘একজন প্রতিযোগী যে কেবল মডেল হবেন, তা না। তিনি একজন উদ্যোক্তা হতে পারেন, চাইলে অন্যান্য চাকরিতেও তিনি যেতে পারেন। আমরা তার মধ্যে আত্মবিশ্বাস তৈরি করে দিতে চাই।’
ফাইনাল রাউন্ডে প্রতিযোগীরা প্রশ্নোত্তর পর্বের পাশাপাশি নিজেদের প্রতিভা দেখানোর সুযোগ পাবেন। যারা যে সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডে দক্ষ, তারা সেটাই বিচারকদের সামনে প্রদর্শন করবেন। যিনি গানে দক্ষ তিনি সরাসরি গান গেয়ে শোনাবেন, পাশাপাশি নাচ, অভিনয় দেখানোর সুযোগও আছে। এছাড়াও যে তিন মাস যাবত তাদের গ্রুম করা হয়েছে সে সময়ের উপর ভিত্তি করেও তাদের স্কোর দেওয়া হবে।
বৈশ্বিকভাবে ছড়িয়ে দিতে চান ‘মিস অ্যান্ড মিসেস প্লাস’
আন্তর্জাতিকভাবে বিভিন্ন দেশে এককভাবে মিস ও মিসেস প্লাসের প্রতিযোগিতা হলেও বাংলাদেশেই প্রথম যৌথভাবে ‘মিস অ্যান্ড মিসেস প্লাস’-এর আয়োজন করা হয়েছে। অর্থাৎ এই প্রতিযোগিতায় বিবাহিত এবং অবিবাহিত উভয় নারীরাই অংশ নিতে পারবেন।
এই প্রতিযোগিতায় অবিবাহিত নারীদের থেকে বিবাহিত নারীদের অংশগ্রহণ ও প্রতিভা বেশি বলে মনে করেন আয়োজক। তার ভাষ্যমতে, বিয়ের পর হরমোনাল পরিবর্তনের কারণে অনেক মেয়েই স্থূলকায় হয়ে যান। বেশিরভাগ মিসেসরাই প্লাস হওয়ার কারণে প্রতিযোগিতায় তাদের অংশগ্রহণ বেশি।
এ প্রসঙ্গে মালা জানান, ‘প্রত্যেকটা দেশই কোনো না কোনো প্রতিযোগিতার উদ্ভাবক। ফিলিপাইন “মিস আর্থ”-এর প্রতিষ্ঠাতা, যুক্তরাজ্য “মিস ওয়ার্ল্ড”-এর এবং যুক্তরাষ্ট্র হচ্ছে “মিস ইউনিভার্স”-এর প্রবক্তা। আমার পরিকল্পনা আছে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে মিসেসদের জন্য একটা প্ল্যাটফর্ম তৈরি করা। বিশ্বব্যাপী মিসের পাশাপাশি মিসেসদের জন্যও প্রতিযোগিতা শুরু করার আবেদন করব।’
বিচারকের আসনে আসীন যারা
এখন পর্যন্ত ৬০ জন গ্রুমার প্রতিযোগীদের গ্রুমিংয়ের কাজ করেছেন। কর্পোরেট খাতের সফল ব্যাক্তিত্বরাই কর্পোরেট গ্রুমার হিসেবে কাজ করেছেন। তাদের মধ্যে রয়েছেন ডন সামদানি, ইকবাল বাহার জাহিদ, শাহরিয়ার আরেফিন প্রমুখ। মানসিক স্বাস্থ্যের ব্যাপারে কাজ করছেন পিজি হাসপাতালের একজন অধ্যাপক; র্যাম্প ওয়াক নিয়ে কাজ করছেন জোজো; অভিনয়ের ক্ষেত্রে গ্রুম করেছেন অভিনেত্রী রোজিনা, অভিনেত্রী চয়নিকা চৌধুরি, নির্মাতা প্রবীর রায়চৌধুরী, পরিচালক রায়হান রাফি।
এছাড়াও গান শেখানোর জন্য এসেছিলেন গায়ক মেজবাহ বাপ্পী, গায়িকা মেহরীন মাহমুদ, গায়িকা আসমা দেবযানী প্রমুখ শিল্পী। প্রেজেন্টেশন বা শুদ্ধ উচ্চারণের জন্য বিভিন্ন সংবাদ উপস্থাপকেরা ক্লাস নিয়েছেন। নাচের জন্য গ্রুমার হিসেবে দায়িত্বে ছিল ঈগল ড্যান্স কোম্পানি। এছাড়াও ফ্যাশন ডিজাইনার, ওম্যান কনসালটেন্ট হিসেবে আরো অনেক গ্রুমার ছিলেন।
প্রতিযোগীদের বিচারের কাজেও নামজাদা ব্যক্তিত্বরাই ছিলেন। প্রতি রাউন্ডেই নতুন বিচারক বিচার করেছেন। অডিশন রাউন্ডে বিচারক হিসেবে ছিলেন চিত্রনায়িকা রোজিনা, চিত্রনায়ক ইমন, নির্মাতা প্রবীর রয় চৌধুরী, অভিনেত্রী চয়নিকা চৌধুরী, ডিজাইনার পোর্শিয়া, কনসালটেন্ট তাওহীদা রহমান ইরিন, ফ্যাশন ডিজাইনার সিলভি মাহমুদ, ব্লগার লিয়োনা রাহমান, ডাক্তার লাইলা নুর নাজনিন, সিনিয়র নিউজ প্রেজেন্টার মুমতাহিনা হাসনাত রিতু প্রমুখ।
গ্র্যান্ড ফিনালের বিচারকের আসনে আসীন হবেন অভিনেতা আফরান নিশো, বর্ষীয়ান অভিনেত্রী দিলারা জামান, শিল্পী আবিদা সুলতানা, অভিনেত্রী চয়নিকা চৌধুরী, অভিনেত্রী রোজিনা প্রমুখ।
প্রতিযোগীদের কথা
এই প্রতিযোগিতায় ৪৫ জন প্রতিযোগীর মধ্যে ২১ জন প্রতিযোগী ফাইনালে অংশগ্রহণের জন্য নির্বাচিত হয়েছে। বিজয়ের মুকুট পরার ইচ্ছে সবারই, তাই শেষ মুহূর্তে প্রতিযোগীদের মধ্যেও চলছে চাপা উদ্বেগ। তবে অনেক প্রতিযোগী এসব উদ্বেগকে তুড়ি মেরে উড়িয়ে দিচ্ছেন। তাদের মুখে একটাই কথা, এই প্রতিযোগিতা তাদের সামনে জীবনের নতুন একটি দিক উন্মোচন করে দিয়েছে।
প্রতিযোগী নির্জন মমিন ব্যক্তিগত জীবনে একজন অভিনেত্রী ও স্ক্রিপ্ট রাইটার। এই প্রতিযোগিতায় আসার অভিজ্ঞতা জানতে চাইলে তিনি জানান, ‘আমাদের দেশে বডি শেমিং, বুলিং খুবই কমন। প্লাস সাইজ হলেই ধরে নেওয়া হয় তাকে নিয়ে হাসাহাসি করা যাবে। ভিন্নরকম প্রতিযোগিতা হওয়ার কারণে এখানে জয়েন করি। জয়েন করার পরে বুঝলাম, এখন পর্যন্ত আমার জীবনের নেওয়া বেস্ট কয়েকটি ডিসিশনের মধ্যে অন্যতম ছিল এটি।’
প্রতিযোগী তাবাসসুম পারিসা জানান, ‘প্লাস সাইজ নিয়ে দেশে আগে কেউ কাজ করেনি, এবারই প্রথম। আমি রেজিস্ট্রেশন করে অডিশনে যাওয়ার পর প্রথমে নার্ভাস লাগছিল, পরে অবশ্য সব ভয় কেটে যায়। তারপর গ্রুমিং ক্লাসে হাতে ধরে সবকিছু শেখানো হয়েছিল আমাদের, ভীষণ উপকারী ছিল সেগুলো।’
আরেক প্রতিযোগী জান্নাতুল ফেরদৌস জানান ভিন্ন অভিজ্ঞতার কথা, ‘অডিশনে আমি ওয়েটিং লিস্টে ছিলাম। সেখান থেকে যে ফাইনালে আসতে পারবো সেটা আমার কল্পনার বাইরে ছিল। কীভাবে কথা বলতে হয়, কীভাবে নিজেকে প্রেজেন্টেবলভাবে তুলে ধরতে হয়, সবটা এখান থেকেই শিখেছি আমি। এখানে এসে আমার আত্মবিশ্বাস বেড়েছে, তাই সামনের পর্যায়ে জয়ের মুকুট নেওয়ার জন্যও আমি অনেক বেশি আশা রাখি।’
প্রতিযোগী রুমানা হক একজন অভিনেত্রী। নিজের অভিজ্ঞতার কথা জানাতে গিয়ে বলেন, ‘মিডিয়াতে জার্নি শুরু করার পর কাজ করতে গিয়ে দেখলাম, এখানে ওজন একটা বড় ইস্যু হয়ে দাঁড়িয়েছিল। মোটা হওয়ার কারণে ভালো রোল পেতাম না। তার উপর বেবি হওয়ার পর হরমোনাল কারণে আরও মোটা হয়ে যাই। তখন কামব্যাক করার জন্য প্ল্যাটফর্ম খুঁজছিলাম। সে সময় ফেসবুকে “মিস অ্যান্ড মিসেস প্লাস বাংলাদেশ”-এর একটা বিজ্ঞাপন দেখি, যেটা গতানুগতিক না, বরং সচেতনতামূলক কম্পিটিশন।
‘এখানে আসার পর আমার আত্মবিশ্বাস তো বেড়েছেই, পাশাপাশি আমার গ্রুমিং হয়েছে এবং নেটওয়ার্কিংও বেড়েছে। আগে আমি ভাবতাম আমি কেবল অভিনয় করতে পারি, এখানে এসে শিখলাম র্যাম্প মডেল হিসেবেও আমি কাজ করতে পারি।’
ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা
ব্র্যান্ড মালিকদের তরফ থেকে মডেল নিয়ে সমাজের ভ্রান্ত ধারণা ভেঙে ফেলার প্রত্যাশা করেন আয়োজক মালা খন্দকার। তিনি বলেন, ‘সব ক্যাটাগরির কাস্টমারদের জন্য যদি সব সাইজের মডেল নিয়ে ব্র্যান্ড মালিকেরা শ্যুট করে তাহলে একটা সামঞ্জস্য বজায় থাকে।’
কোনো ছেলে বা মেয়ে তার শারীরিক গঠনের জন্য যাতে শেমিংয়ের শিকার না হয় এবং মানুষের মধ্যে সচেতনতা তৈরি করাই এই প্রতিযোগিতার ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা। মালা খন্দকারের ইচ্ছা অদূর ভবিষ্যতে মিস অ্যান্ড মিসেস প্লাস প্রতিযোগিতাকে বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে দেওয়ার। তারা যে স্লোগান নিয়ে প্রতিযোগিতা শুরু করেছে বৈশ্বিকভাবে সেটির বিস্তার ঘটানোও তাদের অন্যতম ভাবনা। এছাড়াও ২০২৩ সালে নারী-পুরুষ একসাথে মিলিয়ে আয়োজন করা হবে মিস্টার অ্যান্ড মিসেস প্লাস বাংলাদেশ।
এই প্রতিযোগিতার বিজয়ী প্রতিযোগী পুরস্কার হিসেবে দুবাই ট্যুরের সুযোগ পাবেন। এছাড়া সেরা পাঁচ প্রতিযোগী বিভিন্ন ব্র্যান্ডের থেকে নানা রকমের উপহার সামগ্রী পাবেন। তাছাড়া প্রতিযোগিতার প্রথম সিজনের যে ২১ জন ফাইনালিস্ট আছেন, তারাই আবার প্রতিযোগিতার পরবর্তী সিজনের বিভিন্ন কাজে যুক্ত থাকবেন। তারাই পরবর্তী সিজনে গ্রুমার হিসেবে কাজ করবেন।
২০২২ সালের নতুন সিজনের প্রতিযোগিতার জন্য এখন রেজিস্ট্রেশন চলছে। চলতি সিজনের গ্র্যান্ড ফাইনাল আগামী ১০ সেপ্টেম্বর অনুষ্ঠিত হবে।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।