আন্তর্জাতিক ডেস্ক : মিয়ানমারের সামরিক বাহিনীর সঙ্গে মধ্যপ্রাচ্যের ইহুদীবাদি রাষ্ট্র ইসরাইলের আতাঁতের খবর পুরানো হলেও এ সংক্রান্ত নিশ্চিত কোনো ডাটা এতদিন পাওয়া যায়নি। কিন্তু এবার গভীর সম্পর্কের গুরুত্বপূর্ণ নথি প্রকাশ করেছে ইসরাইলের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। মিয়ানমারের সামরিক বাহিনীর সঙ্গে ইসরাইলের সম্পর্কের তথ্য সম্বলিত প্রায় ২৫ হাজার নথি প্রকাশ করেছে তারা।
বৃহস্পতিবার (৬ সেপ্টেম্বর) দেশটির সংবাদ হারেথস জানিয়েছে, ১৯৫০ সাল থেকে ১৯৮০ সাল পর্যন্ত ইসরাইল এবং বার্মার (পরে নাম পরিবর্তন হয়ে মিয়ানমার) মধ্যে গভীর সামরিক সম্পর্কের বিস্তারিত প্রতিবেদন রয়েছে এই ২৫ হাজার পাতা সম্বলিত নথিতে। এ সময় বার্মায় ভয়ঙ্কর গৃহযুদ্ধ চলছে। সেই সঙ্গে বার্মায় সামরিক জান্তা এবং সেনাবাহিনীর দুর্নীতি এবং সহিংসতা সব মিলিয়ে ইসরাইলের জন্য একটি কূটনৈতিক সুযোগ তৈরি করে দেয়। এছাড়া দেশটিতে ব্যবসার অন্যতম সুযোগ সৃষ্টি হয় বলে নথিতে উল্লেখ রয়েছে। এ ব্যবসার অন্যতম হচ্ছে প্রতিরক্ষা বাহিনীর জন্যে সামরিক সরঞ্জাম বিক্রি।
ওই নথিতে রয়েছে, ইসরাইল সেনাবাহিনী বার্মায় একটি আধুনিক বাহিনী হিসেবে পুনর্গঠনে সহায়তা করেছে, সশস্ত্র ও প্রশিক্ষিত করেছে এবং সামরিক শক্তিতে বলিয়ান থেকে উন্নত সামরিক সরঞ্জাম প্রদানে সহায়তা করেছে। সেই সঙ্গে সামরিক বাহিনীকে দেশটিতে কর্তৃত্ব বজায় রাখতেও সহায়তা করেছে ইসরাইল। নথিগুলোতে আরও রয়েছে যে ইসরাইলের অন্যতম প্রধান লক্ষ্য ছিল তাদের বিপুল সমর্থনের বিনিময়ে আন্তর্জাতিক ফোরামে বার্মিজ সমর্থন আদায় করা।
নথিতে আরও উল্লেখ করা হয়েছে যে কোনো ইসরাইলি প্রতিনিধি কখনও আপত্তি জানায়নি সেই সময়ের মধ্যে মিয়ানমারের কাছে অস্ত্র বিক্রি বিষয়ে। প্রকাশিত প্রতিবেদন অনুযায়ী, ইসরাইল ১৯৫০-এর দশকে বার্মার মারাত্মক গৃহযুদ্ধকে অস্ত্র বিক্রি বাড়ানোর জন্য একটি ‘সুবর্ণ সুযোগ’ হিসেবে দেখেছিল।
এদিকে, বার্মাও ইসরাইলের ফিলিস্তিনি ভূমি দখল এবং অবৈধ বসতি নির্মাণ নিয়ে অনুপ্রাণিত হয়েছিল কারণ তারা ইসরাইলি সেনাবাহিনীর নাহাল ব্রিগেড ফাঁড়ির স্টাইলে বিদ্রোহী জাতিগত সংখ্যালঘু অধ্যুষিত অঞ্চলে সামরিক কর্মীদের বসতি স্থাপনের চেষ্টা করেছিল। নথিগুলোতে আরও দেখা গেছে যে বার্মায় মুসলিম সংখ্যালঘুদের জাতিগত নির্মূল করার প্রচেষ্টাসহ দেশটিতে ব্যাপক অভ্যন্তরীণ নিপীড়ন সম্পর্কে সচেতন থাকা সত্ত্বেও, ইসরাইল বার্মাকে নিরাপত্তা পরিষেবা প্রদান অব্যাহত রেখেছে।
শুধু তাই নয় ইসরাইলের গোয়েন্দা সংস্থা মোসাদ এবং বার্মিজ গোয়েন্দা সংস্থার মধ্যে একটি সংযোগ স্থাপনে ব্যপক আগ্রহী ছিল ইসরাইলের শাসক গোষ্ঠী। পরবর্তীতেও মিয়ানমার সেনাবাহিনীর প্রতি ইসরাইলের সমর্থনে কোনো পরিবর্তনের লক্ষণ দেখা যায়নি। তার অন্যতম উদাহরণ হিসেবে দেখা যায়, ২০১৯ সালের নভেম্বরে নির্যাতিত রোহিঙ্গা জনগণের বিরুদ্ধে গণহত্যা চালানোর অভিযোগে হেগের আন্তর্জাতিক বিচার আদালতে মামলা হয়েছিল সেখানে মিয়ানমার সেনাবাহিনীর জন্য ‘শুভকামনা’ জানিয়েছিলেন মিয়ানমারে ইসরাইলের রাষ্ট্রদূত রনেন গিলর।
২০২১ সালের ১ ফেব্রুয়ারি, মিয়ানমার সেনাবাহিনী এক অভ্যুত্থানের মাধ্যমে দেশটির নিয়ন্ত্রণ দখল করে। জাতিসংঘের অনুমান অনুসারে, এখন পর্যন্ত ১৪ হাজার স্থানীয় বাসিন্দাকে গ্রেফতার করা হয়েছে। সেই সঙ্গে সামরিক বাহিনীর সঙ্গে সংঘর্ষে ২ হাজার মানুষ নিহত হয়েছে। তবে ইসরাইলি সরকার এই অভ্যুত্থান ও নৃশংসতার নিন্দা করতে অস্বীকার করেছে।
রাশিয়ার বিপক্ষে যেতে অস্বীকার করেছে লাতিন আমেরিকার যে দেশগুলো
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।