ম্যাকগ্রেগর দাবি করেন—বার্লিন, প্যারিস ও লন্ডনের মানুষের মুখ থেকে তিনি শুনেছেন যে যুদ্ধবিরতির পক্ষে সমর্থন ক্রমশ জোরালো হচ্ছে, এবং সকলেই চাইছে লড়াই সাময়িকভাবে মুলতবি রাখার কোনো একটা সমঝোতামূলক ব্যবস্থা যেন করা হয়।
রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ যদি অব্যাহত থাকে, যুদ্ধবিরতির চুক্তিতে শেষ পর্যন্ত সম্মতি দেওয়া না হয়, তাহলে অচিরেই বিশ্ব মানচিত্র থেকে ইউক্রেনের অস্তিত্ব মুছে যাবে বলে ভবিষ্যদ্বাণী করেছেন সাবেক পেন্টাগন উপদেষ্টা ও অবসরপ্রাপ্ত আর্মি কর্নেল ডগলাস ম্যাকগ্রেগর।
গত বুধবার স্কাই নিউজ অস্ট্রেলিয়াকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে এ কথা বলেন ডোনাল্ড ট্রাম্পের অধীনে সিনিয়র উপদেষ্টা হিসেবে কাজ করা ম্যাকগ্রেগর। উল্লেখ্য, চলমান রাশিয়া-ইউক্রেন সংকটে আপাতদৃষ্টিতে রাশিয়া ও পুতিনের পক্ষে অবস্থান নেওয়ায় একাধিকবার সমালোচনার শিকার হয়েছেন তিনি।
“এই যুদ্ধ যত বেশিদিন ধরে চলবে, অহেতুক যত বেশি মানুষের প্রাণহানি ঘটবে, তত বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবে ইউক্রেন,’ ম্যাকগ্রেগর বলেন।
“স্পষ্টতই এটি [ইউক্রেন] ইতোমধ্যে একটি ব্যর্থ রাষ্ট্র, এবং সম্ভাবনা রয়েছে মানচিত্র থেকে এর অস্তিত্ব পুরোপুরি বিলীন হয়ে যাওয়ার। আমি তো বলব, এই মুহূর্তে আমাদের একটি যুদ্ধবিরতি আবশ্যক,” তিনি আরো যোগ করেন।
ম্যাকগ্রেগর দাবি করেন—বার্লিন, প্যারিস ও লন্ডনের মানুষের মুখ থেকে তিনি শুনেছেন যে যুদ্ধবিরতির পক্ষে সমর্থন ক্রমশ জোরালো হচ্ছে, এবং সকলেই চাইছে লড়াই সাময়িকভাবে মুলতবি রাখার কোনো একটা সমঝোতামূলক ব্যবস্থা যেন করা হয়।
“কেননা আমাদের পক্ষে সেই পর্যন্ত যুদ্ধ করে যাওয়া সম্ভব না, যখন আর কোনো ইউক্রেনীয়ই অবশিষ্ট থাকবে না,” ম্যাকগ্রেগর বলেন।
যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র সচিবের এই প্রাক্তন উপদেষ্টা আরো বলেন, তার বিশ্বাস পুতিন ইউক্রেন যুদ্ধ থেকে “হাত গুটিয়ে নেবেন না”। তার দাবি, রুশ প্রেসিডেন্ট “কখনোই পুরো ইউক্রেনের ব্যাপারে আগ্রহী ছিলেন না”।
“তিনি [পুতিন] সেনা প্রত্যাহার করবেন না, তাই ওই প্রশ্নই আসে না। ফলে আপনারা যদি অঞ্চলভিত্তিক কোনো ধরনের [সমঝোতার] ব্যবস্থা না করেন—তবে যুদ্ধ যতদিন চলবে, আরো বিস্তৃত পরিসরে একটি আঞ্চলিক যুদ্ধ বাঁধার সম্ভাবনা জোরালো হবে।”
ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি অবশ্য বরাবরই বলে এসেছেন যে যুদ্ধে ইতি টানার জন্য তারা দেশের কোনো একটি অংশ ছেড়ে দেবেন না। গত ২৪ ফেব্রুয়ারি পুতিন ইউক্রেনে আক্রমণ শুরু করার পর থেকে অনেকবারই দুই দেশের মধ্যে শান্তি আলোচনার সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে, কিন্তু শেষ পর্যন্ত কোনোটিই আলোর মুখ দেখেনি।
জেলেনস্কি বলেছেন, ইউক্রেন তাদের নিজেদের কোনো অংশ এবং জাতীয় সার্বভৌমত্ব নিয়ে সমঝোতা ও আপোষ করবে না।
এপ্রিলে সিবিএস নিউজের ‘৬০ মিনিটস’-এ দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে জেলেনস্কি বলেছিলেন, “ইউক্রেন তাদের দেশকে অন্যের হাতে তুলে দিতে প্রস্তুত নয়।”
“আমার মনে হয়, আমরা ইতোমধ্যেই অসংখ্য প্রাণ দিয়েছি, তাই এখন আমাদের প্রয়োজন যতদিন সম্ভব নিজেদের পায়ের তলার মাটি আঁকড়ে ধরে থাকা। কিন্তু এটাই জীবন, এখানে বিভিন্ন ঘটনা ঘটে,” তিনি বলেন।
“আমরা রাশিয়া পক্ষকে বুঝি। আমরা বুঝি তাদের সংবিধানে সবসময়ই ছিল ক্রিমিয়াকে রাশিয়ার অংশ হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়ার বিষয়টি। কিন্তু আমি অবশ্যই তাদেরকে সেই স্বীকৃতি দিতে দেবো না,” ইউক্রেন প্রেসিডেন্ট যোগ করেন।
এছাড়া ক্রেমলিনের মুখপাত্র দিমিত্রি পেসকোভ গত ৩ জুলাই রয়টার্সকে বলেছেন যে ইউক্রেন যুদ্ধ ‘তাৎক্ষণিকভাবে’ শেষ হতে পারে, যদি ইউক্রেন চারটি শর্ত মেনে নেয়। সেই চারটি শর্তের মধ্যে রয়েছে ন্যাটোতে যোগ না দেওয়া, ক্রিমিয়াকে রাশিয়ার অংশ হিসেবে মেনে নেওয়া, লুহানস্ক ও দোনেৎস্ককে স্বাধীন অঞ্চল হিসেবে স্বীকার করা, এবং সব ধরনের সামরিক কার্যক্রম বন্ধ করা।
এর পরদিন জেলেনস্কি এবিসি নিউজকে বলেন যে, এসব অঞ্চলকে স্বীকৃতি প্রদান যতটা মনে হয় তার চেয়ে “অনেক বেশি কঠিন” এবং মস্কোর বেঁধে দেওয়া শর্তগুলো মূলত এক ধরনের “আল্টিমেটাম”।
“আমরা কোনো ধরনের আল্টিমেটামের জন্য রাজি নই, তবে আমাদের সামনে এখানকার তিনটি ক্ষেত্রে সম্ভাব্য সমাধান রয়েছে। এজন্য প্রেসিডেন্ট পুতিনকে যা করতে হবে তা হলো, অক্সিজেনশূন্য তথ্য-বলয়ের মাঝে বাস না করে সংলাপে বসা।”
সূত্র: নিউজউইক
সউজন্যে:tbsnews.net/bangla
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।