জুমবাংলা ডেস্ক: কলেজছাত্রী মোসারাত জাহান মুনিয়া হত্যা মামলার আসামি সাইফা রহমান মিমকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনের (পিবিআই) প্রধান অতিরিক্ত আইজিপি বনজ কুমার মজুমদার তাকে গ্রেপ্তারের বিষয়টি গণমাধ্যমকে নিশ্চিত করেছেন।
তিনি জানান, মঙ্গলবার (১৫ ফেব্রুয়ারি) সকালে তাকে রাজধানীর ধানমন্ডির বাসা থেকে পিবিআই কার্যালয়ে আনা হয়। দিনভর জিজ্ঞাসাবাদের পর তাকে সন্ধ্যায় গ্রেপ্তার দেখানো হয়।
তিনি জানান, সাইফা রহমান মিমকে পিবিআই স্পেশাল ক্রাইম দক্ষিণ অফিসে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে।
গ্রেপ্তারকৃত আসামি মিম জাতীয় সংসদের হুইপ ও চট্টগ্রাম-১২ (পটিয়া) আসনের সংসদ সদস্য সামশুল হক চৌধুরীর ছেলে নাজমুল করিম চৌধুরী শারুনের সাবেক স্ত্রী। মিম এ হত্যা মামলার ৬ নম্বর আসামি।
এজাহারে বলা হয়েছে, মামলার ৭ নম্বর আসামি কথিত মডেল ফারিয়া মাহবুব পিয়াসার (সম্প্রতি মাদকসহ গ্রেফতারের পর কারাবন্দি) সঙ্গেও মুনিয়া হত্যার প্রধান আসামির বিশেষ সম্পর্ক রয়েছে। পিয়াসা প্রতিহিংসার বশবর্তী হয়ে ভিকটিম মুনিয়াকে বিভিন্ন সময় ফোন করে আনভীরের সঙ্গ ত্যাগ করতে বলে। পরবর্তীতে তার মাধ্যমেই ২ নম্বর আসামি আনভীরের মা আফরোজার কাছে ভিকটিম সম্পর্কে কুৎসা রটিয়ে হত্যার প্ররোচনা দেয়।
এই পিয়াসার মাধ্যমেই গত বছরের ফেব্রুয়ারি মাসে মুনিয়াকে বসুন্ধরা আবাসিক এলাকার বাসায় ডেকে নিয়ে প্রাণনাশের হুমকি দিয়ে গ্রামের বাড়িতে যেতে বাধ্য করে আসামির পরিবার। সূত্রমতে, বনানী রেইনট্রি হোটেলে ধর্ষণকাণ্ডে ও মুনিয়া মৃত্যুরহস্যে সমালোচিত পিয়াসা গত ১ আগস্ট রাতে বারিধারার বাসা থেকে বিপুল পরিমাণ মাদকসহ ডিবির হাতে গ্রেফতার হন। এই রহস্যময় নারীর রয়েছে আন্ডারওয়ার্ল্ড কানেকশন। তার সঙ্গেই আনভীরের দীর্ঘদিনের বিশেষ সম্পর্ক রয়েছে। পিয়াসা গ্রেফতারের পর এ নিয়ে বিভিন্ন মহলে গুঞ্জন ওঠে।
মামলার এজাহারে উল্লেখ করা হয়েছে, ৬ নম্বর আসামি সাইফা রহমান মিম (হুইপপুত্র শারুনের সাবেক স্ত্রী) ১ নম্বর আসামি সায়েম সোবহান আনভীরের গার্লফ্রেন্ড। মামলার বাদী নুসরাত দাবি করেন, মুনিয়ার সঙ্গে প্রেমের সম্পর্ক চলাকালীনই মিমের সঙ্গে সম্পর্ক রাখেন আনভীর। টেলিফোন কলরের্কডসহ এ সংক্রান্ত তথ্য-প্রমাণ রয়েছে। পরবর্তীতে ঈর্ষান্বিত হয়ে মিম ওই সম্পর্কে ফাটল ধরাতে ও পথের কাঁটা দূর করতে ষড়যন্ত্র করতে পারে বলে তার ধারণা।
বাড়িওয়ালী শারমিন সম্পর্কে মামলার এজাহারের ষষ্ঠ অংশে বলা হয়েছে, মুনিয়াকে হত্যার দিন দুপুর ১২টা ৪৯ মিনিটে ৫ নম্বর আসামি শারমিন বাদীকে ফোন করে বলে ‘তোমার বোনের কিছু হলে আমরা জানি না, তখন পুলিশ আসবে; মিডিয়া আসবে ইত্যাদি।’ অথচ পোস্টমর্টেম রিপোর্ট মতে, ভিকটিমের মৃত্যু হয় দুপুর ১২টা ৫ মিনিটে। এ ঘটনা প্রমাণ করে শারমীন মুনিয়ার মৃত্যু সম্পর্কে পূর্ব থেকে অবগত ছিল এবং এ ষড়যন্ত্রের সঙ্গে জড়িত। এ ছাড়া বাদী ঘটনার তারিখ বিকাল ৪টা ১৫ মিনিটে কুমিল্লা থেকে ভিকটিমের দরজা বন্ধ দেখে বাড়িওয়ালা শারমিন ও তার স্বামী ইব্রাহিমের কাছে বাসার সংরক্ষিত চাবি চাইলে তারা ঘটনাকে আত্মহত্যা হিসাবে চালিয়ে যাওয়ার উদ্দেশ্যে চাবি না দিয়ে তালা ভেঙে বাসায় ঢোকার পরামর্শ দেয়।
উল্লেখ্য, মুনিয়া মিরপুরের একটি স্কুল অ্যান্ড কলেজের উচ্চ মাধ্যমিকের শিক্ষার্থী ছিলেন। তার বাবার নাম মৃত শফিকুর রহমান। গ্রামের বাড়ি কুমিল্লা সদরের দক্ষিণপাড়া উজির দিঘি এলাকায়। তিনি গুলশান দুই নম্বর এভিনিউর ১২০ নম্বর সড়কের ১৯ নম্বর প্লটের বি/৩ ফ্ল্যাটে একাই থাকতেন। গত বছরের ২৬ এপ্রিল সন্ধ্যায় ওই বাসা থেকে সিলিং ফ্যানের সঙ্গে ঝুলন্ত অবস্থায় মুনিয়ার লাশ উদ্ধার করা হয়।
এ ঘটনায় মুনিয়ার বড় বোন নুসরাত জাহান তানিয়া ‘আত্মহত্যা’য় প্ররোচনার অভিযোগ এনে দেশের অন্যতম শীর্ষ ব্যবসায়িক গ্রুপ বসুন্ধরার ব্যবস্থাপনা পরিচালক সায়েম সোবহান আনভীরের বিরুদ্ধে একটি মামলা দায়ের করেন। সেই মামলায় পুলিশের চূড়ান্ত প্রতিবেদনে অব্যাহতি পান সায়েম সোবহান আনভীর।
পরে গত ৬ সেপ্টেম্বর নুসরাত জাহান বাদী হয়ে মুনিয়াকে ‘ধর্ষণের পর হত্যার’ অভিযোগ এনে আরেকটি মামলা দায়ের করেন। মামলায় বসুন্ধরা গ্রুপের চেয়ারম্যান আহমদ আকবর সোবহান, ব্যবস্থাপনা পরিচালক সায়েম সোবহান আনভীরসহ আট জনকে আসামি করা হয়। আদালত গুলশান থানা পুলিশকে মামলাটি এজাহার হিসেবে গ্রহণ করে পিবিআইকে অভিযোগের বিষয়ে তদন্তের নির্দেশ দেন।
কোটি টাকার সম্পত্তির জন্য বাবার মরদেহ ফেলে রাখলো সন্তান, মানুষের চাঁদায় দাফন (ভিডিও)
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।