মৃত্যুর আগে রিকশাচালকের সঙ্গেই শেষ কথা, যা বলেছিলেন রিফাত

জুমবাংলা ডেস্ক : বরগুনার আলোচিত রিফাত শরীফ হ’ত্যাকাণ্ডের আরেকটি নতুন ভিডিও সংবাদমাধ্যমে প্রকাশ পেয়েছে। বরগুনা জেনারেল হাসপাতালের সিসিটিভিতে দেখা গেছে আহত রিফাতকে তার স্ত্রী আয়শা সিদ্দিকা মিন্নি একাই র’ক্তাক্ত অবস্থায় রিকশায় করে হাসপাতালে নিয়ে যান।

গত ২৬ জুন সকাল ১০টা ২১ মিনিটে একাই একটি ব্যাটারিচালিত রিকশায় করে রক্তাক্ত ও অচেতন রিফাতকে হাসপাতালের জরুরি বিভাগের সামনে নিয়ে যান মিন্নি।

তবে রিফাত একাই এসে প্রথমে রিক্সায় উঠে শেষ কথাটা চালককেই বলেছিলেন। রিফাতকে নিয়ে যাওয়া সেই অটো রিকশাচালকের নাম দুলাল। নিজেই বর্ণনা দিলেন সেদিনের ঘটে যাওয়া পুরো ঘটনার।

দুলাল বলেন, ‘সেদিন কলেজ সড়কে খ্যাপ নিয়ে গিয়েছিলাম। মানুষের ভিড়ের কারণে আর সামনের দিকে যাইতে পারি নাই। শুনলাম সামনে কারা যেন কারে মারতেছে। প্যাসেঞ্জারকে নামিয়ে দিয়ে আমি রিকশা ঘুরাইয়া কেবল দাঁড়াইছি, সে সময় একটা ছেলে রক্তাক্ত অবস্থায় হাইট্টা আইসা আমার রিকশায় উইঠাই কয়, চাচা আমারে তাড়াতাড়ি হাসপাতালে নিয়া যান। সেটাই ছিল ছেলেটির শেষ কথা। আমি দেখলাম ছেলেটার গলা ও বুকের বামপাশ কাইট্টা রক্ত বাইর হইতেছে। হের জামাডা টাইন্না আমি গলা ও বুকে চাইপ্পা ধইরা হেরে কইলাম, আপনে চাইপ্পা ধরেন, আমি চালাই। আমি হাসপাতালে যাওনের জন্য কেবল সিটে বসছি, চালামু, সে সময় একটা মেয়ে দৌড়ে রিকশায় উইঠা ওই পোলাডারে ধইর‌্যা বসে। আমি তাড়াতাড়ি রিকশা চালাইয়া হাসপাতালের দিকে যাই।

এক মিনিটের মতো রিফাত ঘাড় সোজা করে বসেছিল। কিন্তু এরপর সে মেয়েটির কাঁধে ঢলে পড়ে যায়। আর ঘাড় সোজা করতে পারেনি। আমাদের রিকশার পাশাপাশি একটা লাল পালসার মোটরসাইকেলে দুইটা ছেলে যাচ্ছিল। মেয়েটি চিৎকার করে তাদের কাছে জখম চেপে ধরে রক্ত থামানোর জন্য কাপড় চাইছিল। ওরা সাড়া দেয়নি। আমার কাছে মেয়েটি ফোন চায় তার বাড়িতে জানানোর জন্য। কিন্তু আমার ফোন ছিল না। পরে ওই মোটরসাইকেলের ছেলেদের কাছেও সে ফোন চায়। বলে, ভাই আপনাদের একটা ফোন দেন, আমি একটু বাবার কাছে ফোন করব। কিন্তু তারা বলে, আমাদের কাছে ফোন নাই, তুমি হাসপাতালে যাইতেছো যাও।

হাসপাতালের গেট দিয়ে ঢোকার সময় মেয়েটি একজন লোককে ডাক দেয়। রিকশা থামানোর সঙ্গে সঙ্গে ওই লোক দৌড়ে আসে। রিফাতের অবস্থা দেখেই আমাকে নিয়ে স্ট্রেচার আনতে যায়। আমি আর সেই লোক স্ট্রেচার নিয়ে আসি। রিফাতকে রিকশা থেকে নামিয়ে স্ট্রেচারে তুলে অপারেশন থিয়েটারে দিয়ে আসি।

দুলাল আরো বলেন, ‘রিফাতকে অ্যাম্বুলেন্সে করে বরিশাল নিয়ে যাওয়ার পর পুলিশ আমার রিকশার ছবি তুলে নেয় আর কাগজপত্র নিয়ে যায়। আমার রিকশার কাগজপত্র এখনো পুলিশের কাছেই আছে।’

Write a Comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *