পুত্রের প্রতি শাসক পিতার অমূল্য উপদেশ
জাওয়াদ তাহের : আব্বাসীয় খিলাফতের সূর্য যখন অস্তপ্রায়, তখন এশিয়ার কৃষ্ণসাগরের তীরে উদিত হয় এক নতুন সূর্য। লড়াকু যোদ্ধা, বীর মুজাহিদ, প্রজ্ঞাবান তুর্কিগোত্রপতি গাজী ওসমান। ওসমানি খেলাফতের গোড়াপত্তন হয় তাঁর হাত ধরে। তিনি প্রসিদ্ধ ছিলেন প্রথম ওসমান নামে। ইতিহাসের পাতায় যাঁদের পরিচয় ‘বনু ওসমান’। আলেমরা সর্বদা তাঁর পাশে থাকতেন। তাঁকে বিভিন্ন বিষয়ে পরামর্শ দিয়ে সহযোগিতা করতেন। ওসমানি খেলাফতের প্রথম ওসমান, তাঁর ছেলে গাজী ওরখান। মৃত্যু শয্যায় বসে তিনি তাঁর ছেলেকে কিছু অসিয়ত করেছিলেন। মৃত্যু শয্যায় বসে এমন অসিয়ত ইঙ্গিত করে তাদের রাষ্ট্র পরিচালনায় সুন্দর সুনিপুণ নিদর্শন দিতেন।
তিনি তাঁর ছেলেকে বলেছিলেন, হে আমার ছেলে, তুমি এমন কোনো কাজে মশগুল হবে না, যা আল্লাহ তাআলা তোমাকে আদেশ করেননি। যখন জীবনের কঠিন কোনো বিষয়ের সম্মুখীন হবে তখন যোগ্য ওলামায়ে কেরামের সঙ্গে পরামর্শ করে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করবে।
প্রিয় বৎস, যারা তোমার অনুসরণ করে তাদের সম্মান করো। সৈন্যদের তাদের যথাযথ পাওনা ও উপঢৌকন দিয়ো। তোমার সৈন্য আর সম্পদের কারণে শয়তান যেন তোমাকে ধোঁকা দিতে না পারে। তুমি কোনোক্রমেই শরিয়তের বিধিবিধান থেকে দূরে থেকো না।প্রিয় ছেলে, তুমি জানো যে আমাদের লক্ষ্য আল্লাহকে সন্তুষ্ট করা। আর আল্লাহর পথে লড়াইয়ের মাধ্যমে এই দ্বিনের আলো পৃথিবীতে ছড়িয়ে যাবে দিগ-দিগন্তে। তুমি বেশি বেশি আল্লাহর সন্তুষ্টির কথা আলোচনা কোরো।প্রিয় ছেলে, আমরা যুদ্ধের মাধ্যমে আমাদের কোনো মনের আকাঙ্ক্ষা পূরণ করি না কিংবা আমাদের ক্ষমতা দখল করা উদ্দেশ্য নয়। আমরা ইসলামের ওপরেই জীবিত আছি এর ওপরে মৃত্যুবরণ করব। আমরা এসব ক্ষমতা ইত্যাদির যোগ্য নই।প্রিয় ছেলে, ইসলামের প্রচার-প্রসার, মানুষকে এর দিকে আহ্বান করা, মুসলমানদের ইজ্জত-সম্মান ও সম্পদ রক্ষা করা, এগুলো তোমার দায়িত্বে রয়েছে। আল্লাহ তাআলা এ সম্পর্কে তোমাকে জিজ্ঞাসা করবেন।হে ছেলে, আমি আমার প্রভুর কাছে চলে যাব। আমি তোমাকে নিয়ে গর্ববোধ করব। কেননা তুমি ভবিষ্যতে ন্যায়পরায়ণ হবে। দ্বিন প্রচারে আল্লাহর রাস্তায় হবে বীর মুজাহিদ।প্রিয় বৎস, তোমাকে বিশেষভাবে অসিয়ত করছি সম্মানিত ওলামায়ে কেরামের ব্যাপারে। তাদের ব্যাপারে খুব লক্ষ রেখো। তাদের যথাযথ সম্মান কোরো। তাদের পরামর্শ অনুযায়ী চলার চেষ্টা করবে। কারণ তারা কল্যাণ ছাড়া অন্য কিছুর আদেশ করবে না।হে ছেলে, এমন কোনো কাজ করবে না, যার দ্বারা আল্লাহর অসন্তুষ্টি আসে। যখনই কোনো মুসিবতে পড়ে যাবে, ওলামায়ে কেরামের সঙ্গে পরামর্শ করবে। কারণ তারা তোমাকে সঠিক পথ দেখাবে।
প্রিয় বৎস, পৃথিবীতে আমাদের পথ একটাই, আর তা আল্লাহর পথ। আমাদের উদ্দেশ্য এক ও অভিন্ন, আল্লাহর দ্বিন প্রচার-প্রসার করা। আমরা দুনিয়া ও সম্মানের প্রত্যাশী নই।
প্রিয় ছেলে, দুনিয়াতে কেউ মৃত্যুর জন্য মাথা নত করতে চায় না। আমার মৃত্যুর সময় চলে এসেছে। আমি তোমার কাছে এই রাষ্ট্র সোপর্দ করলাম। আমি তোমার কাছে তোমাকে আল্লাহর নিকট সঁপে গেলাম। তুমি সব কাজে প্রিয় বৎস, ইনসাফ ন্যায়-নীতি অবলম্বন করবে।
সোনার হরফে লেখে রাখার মতো অসিয়ত ছিল এটি। এই রূপরেখায় চলেছে ওসমানি সালতানাত। ইনসাফ, নিষ্ঠা মহানুভবতা, উদারতা; কী ছিল না ইসলামী সাম্রাজ্যের মাঝে। জাত, রক্তবর্ণ বংশ, গোত্র এ ধরনের কোনো বিভেদ আর হানাহানিতে ছিল না। সবার আশ্রয় ছিল ইসলামী খিলাফতের ছায়াতলে। ইসলামী শাসনামলের সৌন্দর্য পৃথিবী দেখেছে যুগ যুগ ধরে। তাদের উত্থানে যেভাবে সবাই দেখেছে সুন্দর এক পৃথিবী। তেমনি তাদের পতনে পৃথিবী ছেড়ে গেছে অন্ধকার কালো ছায়ায়। যত দিন তাদের শক্তি-সামর্থ্য-সম্মান ছিল, এই অসিয়তের ওপর অন্য খলিফারাও চলেছেন।
আদ-দাওলাতুল ওসমানিয়া অবলম্বনে