জুমবাংলা ডেস্ক: লক্ষ্মীপুরের সদর উপজেলার চর রমণীমোহন ইউনিয়নের মেঘনার নদী সংলগ্ন নতুন করে জেগে ওঠা চর মেঘা ও কমলনগর উপজেলার কালকিনি ইউনিয়নের চর কাকড়া, চর শামছুদ্দিনে রয়েছে পর্যটনের সম্ভাবনা। প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নিয়ে ম্যানগ্রোভ বনায়ন অথবা ঝাউ বাগান করলে পর্যটনের জন্য বিখ্যাত হয়ে উঠবে নতুন এই তিন চর।
বনায়নের ফলে একদিকে সরকারের রাজস্ব বৃদ্ধি পাবে, অন্যদিকে ভূমি ক্ষয়রোধ হবে এবং উপকূলীয় এলাকার মানুষ জলবায়ু পরিবর্তনজনিত দূর্যোগের কবল থেকে রক্ষা পেতে পারে। পাশাপাশি ঢাকা, ভোলা, বরিশাল, চট্টগ্রামসহ দেশের দক্ষিণ—পশ্চিমাঞ্চলে চলাচলকারী মানুষেরা পর্যটক হিসেবে ঘুরতে যাবে চরগুলোতে।
ভূমি মন্ত্রণালয়ের সূত্রে জানা যায়, সাগর ও নদীতে জেগে ওঠা নতুন চরগুলো বন্দোবস্ত দেওয়া যাবে না। ফলে এ চরগুলো একমাত্র বনায়নের জন্য উপযোগী বলে স্থানীয়রা মনে করে। লক্ষ্মীপুর জেলা প্রশাসন ও বন বিভাগের আন্তরিকতা থাকলে এই ধরনের উদ্যোগ নেওয়া সম্ভব।
সরেজমিন এলাকাবাসীর সঙ্গে কথা বললে তারা জানান, রামগতি, কমলনগর উপজেলা ও সদর উপজেলার চর রমণীমোহন ইউনিয়ন মেঘনা নদী সংলগ্ন। ইতোমধ্যে মেঘনার অব্যাহত ভাঙনে কমলনগর ও রামগতি উপজেলার সাতটি ইউনিয়নের অধিকাংশ এলাকা নদীতে তলিয়ে গেছে। এরই মধ্যে জেগে উঠছে নতুন চরগুলো।
নতুন করে জেগে ওঠা তিনটি চরের আয়তন প্রায় ১২ হাজার একর। বন ও পরিবেশ মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা যায়, দেশের প্রাণ—প্রাচুর্যের বৈচিত্র্য রক্ষা, পর্যটন শিল্পের বিকাশ ও প্রাকৃতিক সম্পদের বড় উৎস হতে পারে এসব নতুন চর। তাই এসব সম্ভাবনা কাজে লাগিয়ে বিভিন্ন জেলায় জেগে ওঠা চরে কার্যকর উদ্যোগ নিতে সংশ্লিষ্টদের ইতোমধ্যে নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ইতোমধ্যে নোয়াখালী, হাতিয়া, ভোলা, বরিশাল ও পটুয়াখালী জেলায় কাজ শুরু হয়েছে। কিন্তু লক্ষ্মীপুর জেলায় এ ধরনের উদ্যোগ এখনো নেওয়া হয়নি।
জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে সৃষ্ট ঘূর্ণিঝড়, জলোচ্ছ্বাস, নদী ও সমুদ্র পৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধি, ভূমির ক্ষয় ও ভাঙন, লবণাক্ততা বৃদ্ধির মতো পরিবেশগত বিপর্যয়ের ফলে দেশের উপকূলীয় অঞ্চলে বসবাসরত জনগোষ্ঠী ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় রয়েছে, এতে দেশের অর্থনেতিক উন্নয়ন বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। নদী ও বঙ্গোপসাগরের তলদেশের উচ্চতা বৃদ্ধির মাধ্যমে নতুন চরের সৃষ্টি করে। এসব চরাঞ্চলের ভূমিকে স্থায়ী করার জন্য বনায়ন কর্মসূচি জরুরি।
সূত্র আরও জানায়, জলবায়ু পরিবর্তনজনিত কারণে যখন বাংলাদেশের বিরাট অংশ সাগরে নিমজ্জিত হওয়ার আশংকা করা হচ্ছে, ঠিক সে সময়েই বঙ্গোপসাগরে বুকে দেখা দিয়েছে আরেক বাংলাদেশের হাতছানি।
সেখানে নদীর অথৈ জলে প্রাকৃতিকভাবেই বিশাল চর জেগেছে, গড়ে উঠেছে মাইলের পর মাইল ভূখন্ড। দীর্ঘদিন ধরে শুধুই ডুবো চর হিসেবে বেশ কয়েকটি চরভূমি ইতোমধ্যে স্থায়ী ভূখন্ডে পরিণত হয়েছে। লক্ষ্মীপুরের নতুন জেগে ওঠা এসব চর বিগত ৩-৪ বছর ধরে ভরা জোয়ারেও আর তলিয়ে যাচ্ছে না। বরং দিন দিন বেড়ে চলছে এর আয়তন।
কমলনগর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সুচিত্র রঞ্জন দাস বলেন, উপজেলার মেঘনা নদীতে চর কাঁকড়া নামে নতুন ডুবোচর তৈরি হয়েছে বলে জেনেছি। এখানে কয়েক হাজার একর ভূমি রয়েছে। এসব ভূমি বর্তমান জরিপে খাস জমি হিসেবে অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। সরকার ইচ্ছা করলে এই চরে নতুন কিছু করতে পারে। পাশাপাশি চর শামছুদ্দিনও বনায়নসহ বিভিন্ন প্রকল্পে অন্তর্ভুক্ত করতে পারে।
লক্ষ্মীপুর সদর উপজেলার সহকারী কমিশনার ভূমি মো. মকবুল হোসেন বলেন, সদরের মেঘনা নদী সংলগ্ন নতুন করে চরমেঘা ও পুরাতন মেঘা মিলে প্রায় ৩-৪ হাজার একর ভূমি রয়েছে। এসব ভূমি ভোলা জেলার দৌলতখান উপজেলার সঙ্গে লক্ষ্মীপুরের সীমানা নির্ণয়ের কাজ চলছে। ভূমি মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা থাকায় কাউকে বর্তমানে বন্দোবস্ত দেওয়া হয়নি। ফলে খাস ভূমি হিসেবে চরগুলো পড়ে আছে। ভূমিহীন ও গৃহহীনদের মাঝে এসকল ভূমি বন্দোবস্ত দেওয়া যায় কি-না বিষয়টি সরকারের উচ্চ পর্যায়ে সুপারিশ করা হবে।
রামগঞ্জ উপজেলার চন্ডিপুর মনসা উচ্চ বিদ্যালয়ের সহকারী প্রধান শিক্ষক হারুনুর রশিদ বলেন, ‘আমি সম্প্রতি চর মেঘা ও চর শামছুদ্দিন ঘুরে এসেছি। খুব ভালো লেগেছে। সরকার যদি এখানে ম্যানগ্রোভ বনায়ন অথবা ঝাউ বাগান করার উদ্যোগ নেয়, তাহলে প্রতিদিন বিকেলে শত শত পর্যটক ওই স্থানে ঘুরতে যাবে। এতে করে মানুষের বিনোদন ও পর্যটন কেন্দ্র হিসেবে ব্যাপক জনপ্রিয়তা পাবে।’
বৃহত্তম নোয়াখালী অঞ্চলের উপূকলীয় বন বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা ফরিদ মিয়া জানান, চর অঞ্চলে বনায়ন কর্মসূচি করলে সরকার অর্থনেতিকভাবে লাভবান হবে। অন্যদিকে নদীর ভাঙন রোধ হবে। পাশাপাশি বিনোদন ও পর্যটনে ঐসব এলাকা আকর্ষণীয় হয়ে উঠবে। তারা বিষয়টি ভেবে দেখবেন।
লক্ষ্মীপুরের জেলা প্রশাসক সুরাইয়া জাহান বলেন, ‘উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাদের নির্দেশনা দিয়েছি নতুন চর সম্পর্কে তথ্য দেওয়ার জন্য। চর মেঘা, চর শামছুদ্দিন, চর কাঁকড়া এ তিনটি চর বনায়ন কর্মসূচির আওতায় আনা যায় কি-না, জনগণ এবং রাষ্ট্রের কল্যাণমূলক কাজে লাগানো যায় কি-না, সরেজমিনে গিয়ে দেখব।’
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।