স্পোর্টস ডেস্ক: জয়ের জন্য প্রয়োজন আর একটা গোল, টাইব্রেকারে আর্জেন্টিনার হয়ে শেষে শটটা নিতে আসলেন গনজালো মন্টিয়েল। কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে দাঁড়িয়ে আছেন বাকি নয়জন। মন্টিয়েলের নেয়া মাটিঘেষা শটটা ফ্রান্স দলপতি হুগো লরিসকে পরাজিত করতেই ছুট লাগালেন সবাই। কেবল একজন হাত দিয়ে চোখমুখ চেপে ধরে বসে পড়লেন। তিনি মেসি।
৩৬ বছরের আক্ষেপ ঘুচিয়ে আর্জেন্টিনার বিজয় উল্লাসের শুরুটা ছিল এমনই। তবে এ ম্যাচে উল্টো চিত্রও হতে পারতো। আর একটু হলেই কাপটা চলে যেতো ফ্রান্সের দখলে। খেলা শেষের বাঁশি বাজার ঠিক আগ মুহুর্তে যেটা হতে দেননি বাজ পাখি খ্যাত আর্জেন্টিনার অতন্দ্র প্রহরী এমিলিয়ানো মার্টিনেজ। আর এটাই পুরো খেলা ঘুড়িয়ে দিয়ে হয়ে যায়ে যায় আর্জেন্টিনার জয়ের টার্নিং পয়েন্ট।
আর্জেন্টিনা ও ফ্রান্সের মধ্যকার ফাইনালের মধ্য দিয়ে পর্দা নামলো ফুটবল বিশ্বকাপের ২২তম আসরের। ফ্রান্সকে হারিয়ে ৩৬ বছর পর তৃতীয়বারের মতো শিরোপা ঘরে তুলেছে আর্জেন্টিনা। তবে তাদের জন্য শিরোপা জেতা খুব সহজ ছিলো না। ফাইনাল হয়েছে ফাইনালের মতো। পরতে পরতে ছিল উত্তেজনা পারদের উঠানামা।
প্রথমার্ধে দুই গোলে এগিয়ে থেকেও দ্বিতীয়ার্ধে মাত্র ১ মিনিটের ব্যবধানে ২ গোল খেয়ে বসে আর্জেন্টিনা। তবে অতিরিক্ত সময়ের শেষদিকে অধিনায়ক লিওনেল মেসি গোল করে দলকে ম্যাচে ফেরালেও পেনাল্টিতে গোল করে ম্যাচ জমিয়ে তোলেন কিলিয়ান এমবাপ্পে।
এখানে ছোট্ট একটা মুহুর্ত বাদ পরে গেছে। সেই মুহুর্তটাই হতে পারতো আর্জেন্টিনার জন্য দঃস্বপ্নের রাত। ফিরিয়ে আনতে পারতো ২০১৪ বিশ্বকাপের জার্মানির মারিও গোৎজেকে। তবে হয়নি, হতে দেননি একজন; এমিলিয়ানো মার্টিনেজ।
ম্যাচের তখন যোগ করা অতিরিক্ত সময় শেষ। তিন মিনিট ইনজুরি সময়েরও শেষ কয়েক সেকেন্ড চলছে। তখনই র্যান্ডাল কোলো মুয়ানি রীতিমতো একাই পেয়ে গেলেন এমিলিয়ানো মার্টিনেজকে। একটু এদিক-ওদিক হলেই আরও একবার তীরে এসে তরী ডোবা নিশ্চিত ছিল আর্জেন্টিনার।
গোলটা হজম করলে যে শোধ করার সময়ই ছিল না! তবে গোলবারে মার্টিনেজ আবির্ভূত হলেন রীতিমতো দেয়াল হয়ে। পা দিয়ে ঠেকালেন কোলো মুয়ানির সে শট। খেলাটা গড়ালো টাইব্রেকারে। বিশ্বকাপ ফাইনালে এই মুহুর্তটাই হয়ে রইলো পুরো ম্যাচের টার্নিং পয়েন্ট।
পরে পেনাল্টি শ্যুট আউটেও নিজের দক্ষতা দেখিয়েছেন কোপা আমেরিকায় নায়ক হয়ে ওঠা এমি। গত বছরের কোপা আমেরিকায়, কলম্বিয়ার বিপক্ষে টাইব্রেকারে ঠেকিয়েছিলেন তিন তিনটি শট; ঠেকিয়েছেন এই বিশ্বকাপেও, দলকে সেমিতে তুলেছিলেন তিনিই।
অন্যদিকে খেলার মধ্যে ডি মারিয়াকে তুলে নেয়াটাও অনেকটা সমালোচনার জন্ম দিত যদি আর্জেন্টিনা হেরে যেত। কারণ ডি মারিয়া নেমে যাবার পরই মূলত ছন্দ পতন ঘটে মেসিদের। যদিও সেটা উত্রে গেছেন স্কালোনি।
সেই ‘রুটিন’টা ফাইনালেও মানলেন এমিলিয়ানো। ঠেকালেন কিংসলে কোম্যানের দারুণ শটটা। আর্জেন্টিনা জয়ের সুবাসটা পেতে শুরু করে তখনই। ফাইনালের ম্যাচসেরা লিওনেল মেসি হয়েছেন। কিন্তু আজস্র কোটি দর্শকের চোখে ম্যাচের সেরা তো মার্টিনেজই।
শুধু এই ফাইনালই নয়। মেক্সিকোর বিপক্ষে ৪৪ মিনিটে অ্যালেক্সিস ভেগার ফ্রি কিক কিংবা শেষ ষোলোতে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে গারাং কুয়োলের সেই শটটার কথাই ধরুন? কোনোটাই মার্টিনেজ গোলে পরিণত হতে দেননি। ফাইনালেরও অন্যতম নায়ক বনলেন তিনি!
ফাইনালের আগে মার্টিনেজ রীতিমতো বলেই দিয়েছিলেন, ‘মেসি চাইলে মরেও যেতে পারি, তার জন্য জীবনটা দিয়ে দেবো!’ জীবন দেননি বটে, তবে যা কিছু করেছেন। তাতে মেসিকে দেয়া প্রতিশ্রুতিরও বেশি বিশ্বকাপ শিরোপাটা জেতানো হয়ে গেছে।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।