জুমবাংলা ডেস্ক : অপরিচিত নাম্বার থেকে কল আসে মো. আমির হোসাইন মোল্লা নামে এক ব্যক্তির মোবাইল ফোনে। আমির কল রিসিভ করতেই বিপরীত প্রান্ত থেকে বলা হয়, বন্ধু চিনতে পেরেছিস? উত্তরে না বলেন আমির। বিপরীত প্রান্তের ব্যক্তির এবার জিজ্ঞাসা, তোর কোন বন্ধু বিদেশে থাকে? আমির বিদেশে থাকা তার এক বন্ধুর নাম বলে। নাম বলতেই অপরপ্রান্তের ব্যক্তি তখন আমিরের সেই বন্ধুর রূপ ধারণ করে। সে জানায়, আমিই তোর সেই বন্ধু। হঠাৎ দেশে আসছি। মা অসুস্থ ছিল। আজ হাসপাতালে মারা গেছে। টাকা-পয়সা নিয়ে আসতে পারিনি। জরুরি ভিত্তিতে কিছু টাকা পাঠাতে পারবি?
আমির কী করবেন বুঝে উঠতে পারছিলেন না। কিন্তু বন্ধুর এমন বিপদে সহজে টাকা দিতে রাজি হয়ে যান তিনি। তখন অপরপ্রান্তের ব্যক্তি আমিরকে অনুরোধ করেন যে, ‘আমার ফোনে কারো নম্বর নেই। আমাদের অন্যান্য বন্ধুদের নম্বর দিস।’ আমির সরল বিশ্বাসে তাদের কমন বন্ধুদের নাম্বার দেন। তখন তাদেরও কল করে একইভাবে কথা বলে টাকা নেন অজ্ঞাত ব্যক্তি।
দীর্ঘদিন ধরে এভাবে প্রতারণা করে সাধারণ মানুষের কাছ থেকে মোটা অংকের টাকা হাতিয়ে নেয় একটি চক্র। অবশেষে চক্রের মূলহোতা মো. সাইফুল ইসলাম ওরফে দুর্জয়কে রাজধানীর সবুজবাগ থেকে গ্রেফতার করেছে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের খিলগাঁও জোনাল টিম।
মঙ্গলবার দুপুরে মিন্টো রোডে নিজ কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান ঢাকা মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার ও ডিবি (গোয়েন্দা) প্রধান মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ।
তিনি বলেন, গত ৫ জানুয়ারি ঘটনাটি ঘটে। ভিকটিম আমির হোসাইন মোল্লাসহ তার দুই বন্ধুকে আসামি সাইফুল ইসলাম কল করে নিজেকে ভিকটিমের বন্ধু আতিকুল্লাহ শাহ বলে পরিচয় দেয় এবং তার মায়ের মৃত্যুর সংবাদ জানানোর পাশাপাশি জরুরি ভিত্তিতে বিকাশে টাকা পাঠানোর জন্য অনুরোধ করে। বন্ধুর মায়ের মৃত্যুর সংবাদ শুনতে পেয়ে তারা তিন বন্ধু মিলে তৎক্ষণাৎ ১ লাখ ৬৯ হাজার টাকা বিকাশ এবং নগদের মাধ্যমে পাঠিয়ে দেন। পরে ভিকটিম প্রতারণার বিষয়টি বুুঝতে পারলে থানায় অভিযোগ করেন। সেই সূত্র ধরে প্রতারককে গ্রেফতার করা হয়েছে।
ডিবির হারুন জানান, আসামি এর আগেও একাধিকবার আইনশৃঙ্খলা বাহিনী কর্তৃক গ্রেফতার হয়েছেন। তিনি নিজেকে জিনের বাদশা বলেও পরিচয় দিতেন। তার বিরুদ্ধে অস্ত্র, ছিনতাই ও প্রতারণাসহ ৯টি মামলা রয়েছে।
প্রতারণার কাজে চুরি করা ফোন ব্যবহার করা হতো জানিয়ে ডিবিপ্রধান বলেন, তার সহযোগী মির্জা গত ৩ জানুয়ারি নীলফামারি জেলার ডিমলা থানা এলাকার একটি নির্বাচনি মিছিল থেকে প্রতারণায় ব্যবহৃত মোবাইল ফোনটি চুরি করে। পরে সেই ফোনটি তাকে দিলে সেটি দিয়েই প্রতারণা শুরু করেন সাইফুল।
ডিবি জানায়, গ্রেফতার সাইফুলের বাড়ী নীলফামারি জেলার ডোমার থানাধীন ভারত-বাংলাদেশ সীমান্ত এলাকার প্রত্যন্ত একটি গ্রামে। সেখানে অবস্থান করে তিনি প্রতারণার কাজটি সম্পন্ন করেন এবং পার্শ্ববর্তী লালমনিরহাট জেলার বিভিন্ন বিকাশের দোকান থেকে ক্যাশ আউটের মাধ্যমে টাকা তুলে নেন। পুরো নীলফামারি জেলায় তিনি জিনের বাদশা নামে ব্যাপকভাবে পরিচিত। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর উপস্থিতি টের পেলে তিনি সীমান্ত পাড়ি দিয়ে ভারতের অংশে চলে যান। তিনি প্রায় ১০ বছর ধরে প্রতারণা করে আসছিলেন। তার কয়েকজন সহযোগীও আছে। যাদের একটি গ্রুপ বিভিন্ন এলাকায় ঘুরে ঘুরে মোবাইল ফোন চুরি করে এবং আরেকটি গ্রুপ বিভিন্ন এলাকায় বিকাশের দোকান থেকে প্রতারণার মাধ্যমে অর্জিত টাকা ক্যাশ করে। তিনি ১০ বছর ধরে প্রতারণা করে আসছিলেন। তবে গত ৬ মাসের বিশ্লেষণে দেখা গেছে, তিনি প্রায় শতাধিক সিম ব্যবহার করে আড়াই হাজার ব্যক্তিকে প্রতারণার উদ্দেশে ফোন দিয়েছেন।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।