মানছুর আলম অন্তর কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় : আমার সব কিছু তো বাবায়ই করছে, বাবারে নিয়াই আমার সব আশা ভরসা ছিল, আল্লায় হেরেও এখন উঠায়া নিয়া গেছে। আমার বাবার স্মৃতিগুলান ভুলবার পারতাছি না। ও শেষবার যখন বাসা থেকে বের হয় আমার গালে একটা চুমু দেয়, আমিও দেই। তখন ওরে বলেছিলাম বাবা তুই যাইস না। ও বলে, মা মসজিদে গিয়ে আমি আগে নামাজ পড়বো তারপর যাবো। যদি আমি মারা যাই, আমার জন্য তুমি কাইন্দো না।
কান্নাজড়িত কণ্ঠে কথাগুলো বলছিলেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে শহীদ হওয়া কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী আব্দুল কাইয়ুমের মা।
কাইয়ুম বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যাকাউন্টিং অ্যান্ড ইনফরমেশন সিস্টেমস বিভাগের ২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী ছিলেন। তিনি সাভারের সিআরপি হাসপাতালের পাশের টগরমুড়া এলাকার বাসিন্দা মোহাম্মদ কফিল উদ্দিনের ছেলে। দুই ভাই ও এক বোনের মধ্যে কাইয়ুম ছিলেন সবার ছোট। বাবা আর বড় ভাইয়ের আয়ের কোনো উৎস না থাকায় নিজেই সংসারের হাল ধরেন আব্দুল কাইয়ুম।
বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের ‘লংমার্চ টু ঢাকা’ কর্মসূচিতে অংশ নিতে গেলে সাভারের নিউমার্কেট এলাকায় ৫ আগস্ট গুলিবিদ্ধ হন। তারপরের দিন সাভারে এনাম মেডিক্যাল কলেজে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান।
আদরের সন্তানকে হারিয়ে বর্তমানে দিশেহারা অবস্থায় আছেন কাইয়ুমের মা কুলসুম। সন্তান শোকে নৃত্য আহাজারি করা এই মায়ের সাথে কথা হয় দৈনিক নয়া দিগন্তের।
কাইয়ুমের স্মৃতিচারণ করে মা কুলসুম বলেন, ‘আমার বাবার স্মৃতিগুলান ভুলবার পারতাছি না। ও শেষবার যখন বাসা থেকে বের হয় আমার গালে একটা চুমু দেয়, আমিও দেই। তখন ওরে বলেছিলাম বাবা তুই যাইস না। ও বলে, মা মসজিদে গিয়ে আমি আগে নামাজ পড়বো তারপর যাবো। যদি আমি মারা যাই, আমার জন্য তুমি কাইন্দো না।’
কেঁদে কেঁদে তিনি বলেন, ‘আমার বাবায় সংসারের জন্য অনেক কষ্ট করছে। কোচিং আর টিউশনি করায়া কোনো রকম সংসারটা চালাইতো। বাবায় টাকা বাঁচানোর জন্য রাত জাইগা কাঁচামালের গাড়িতে করে কুমিল্লা যাইতো, তারে আমি আর ওর বাপে আগায়া দিয়া আসতাম। আবার নিয়া আসতাম। গতবছরের এমন দিনে বাবায় আমারে কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ে নিয়া গেছিল। ঘুরায়া, ঘুরায়া কোথায় থাকছে, খাইছে সব দেখাইছে। এখন আমার বাবায় নাই। আমার স্বপ্নগুলান শেষ।’
কাইয়ুমের বড় ভাই কাউসার আহমেদ বলেন, এত অল্প বয়সে আমার ভাইটা এভাবে চলে যাবে তা আমরা এখনো বিশ্বাস করতে পারছি না। পড়াশোনার পাশাপাশি ও পরিবারের খরচ বহন করতো। কিন্তু এখন তো আমরা সেই সাপোর্টটাও পাচ্ছি না।
কাইয়ুমের মা নয়া দিগন্তকে আরো বলেন, ‘বাবা, পুলিশ দেখলে আমার এহনো গা কাঁপে। কোনো দিন আমরা কোর্টকাছারিতে যাই নাই। আত্মীয়স্বজনরা বলায় এই প্রথম থানায় যাইয়া মামলা করছি। এহন সরকার আর আপনেরা যেইটা ভালো মনে হয় করেন। আমার কোনো চাওয়া-পাওয়া নাই।’
শোকে কাতর আব্দুল কাইয়ুমের বাবা কফিল উদ্দিন কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, পৃথিবীতে সবচেয়ে ভারী বস্তু হলো বাবার কাঁধে ছেলের লাশ। আমি সেই হতভাগ্য পিতা যে নিজের ছেলের লাশ কবরস্থ করেছি। আমাদের বাবা-ছেলের সম্পর্ক ছিল অত্যন্ত সুমধুর। আমরা সব কিছুই নিজেদের মধ্যে শেয়ার করতাম। অত্যন্ত পরহেজগার আব্দুল কাইয়ুম ছিল অত্যন্ত ভালো মনের। জামাতের সাথে পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ আদায় করতো। পরিবার ও এলাকাবাসীসহ সকলের প্রিয়পাত্র ছিল। কারো কিছু হলে উপকারের জন্য ছুটে যেত। আপ্রাণ চেষ্টা করতো উপকার করার। আজ ছেলেটি নেই একমাস হলো। আমাদের সকলের সুখ কেড়ে নিয়েছে আব্দুল কাইয়ুমের মৃত্যু।
কুবির একমাত্র শহিদ ও মেধাবী শিক্ষার্থী কাইয়ুমের পরিবারকে সহায়তার বিষয়ে সমন্বয়ক মোহাম্মদ সাকিব হোসাইন বলেন, কাইয়ুমের পরিবার সরকারি ভাবে যেন সহায়তা পায় তা আমরা নিশ্চিত করবো। পাশাপাশি বিশ্ববিদ্যালয় থেকেও যেন সহায়তা পায় তার জন্যেও আমরা চেষ্টা করবো।
সাংবাদিক জিল্লুরকে যে সাক্ষাৎকার প্রকাশ করতে দেননি শেখ হাসিনা (ভিডিও)
রেজিস্ট্রার মো: মুজিবুর রহমান মজুমদার বলেন, শিক্ষার্থী ও সমন্বয়করা যদি কোনো দাবি উত্থাপন করেন নতুন ভিসি আসলে ইনশা আল্লাহ আমরা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে চেষ্টা করব সহযোগিতা করার। সূত্র : নয়া দিগন্ত
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।