জুমবাংলা ডেস্ক : বর্ষা মৌসুমের শুরুতেই ভাঙন শুরু হয়েছে যমুনা নদীতে। গত প্রায় এক মাস ধরে পাবনার বেড়া উপজেলায় এই ভাঙন অব্যাহত থাকায় দুশ্চিন্তায় পড়েছেন নদীপাড়ের বাসিন্দারা। ইতিমধ্যে নদীগর্ভে বিলীন হয়েছে অন্তত ২০টি বাড়িঘর। মাথা গোঁজার ঠাঁই হারিয়ে দিশাহারা এসব পরিবার। হুমকির মুখে রয়েছে একটি মসজিদ, একটি বিদ্যালয়সহ অন্তত শতাধিক পরিবার।
পাবনার বেড়া উপজেলার পুরান ভারেঙ্গা ইউনিয়নের চর বক্তারপুর গ্রামে কৃষক হানিফ শেখের স্ত্রী আক্তার বানু। দুই ছেলে ও এক মেয়েকে নিয়ে যমুনার পাড়ে বসবাস করেন প্রায় দুই যুগ। বর্ষা মৌসুম এলেই তাঁর কপালে দেখা দেয় চিন্তার ভাঁজ। সম্প্রতি সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, নদীপাড়ে বসে তিনি ভাবছিলেন কিভাবে পরিত্রাণ পাবেন ভাঙন থেকে।
আলাপকালে আক্তার বানু জানান, ‘গত তিন বছরে তিনবার তাদের ঘর হারিয়েছে যমুনার গর্ভে। এবারও একই চিন্তায় দিশাহারা তিনি। গেল কোরবানির ঈদের আনন্দ কেড়ে নিয়েছে ভাঙন আতঙ্ক। শুধু ভয়ে থাকেন- কখন না জানি আবার ভাঙন শুরু হয়, আর ঘর সরানোর জন্য চিৎকার করতে হয়।’
শুধু আক্তার বানু-ই নন, তার মতো একই কান্না নদীপাড়ের অন্য মানুষগুলোরও। বক্তারপুর, চর বক্তারপুর, চর বুড়ামারা, সিংহাসন, আগবাকশো গ্রামের কয়েক হাজার মানুষের দিন কাটছে ভাঙন আতঙ্কে। স্থানীয়রা জানান, ইতিমধ্যে গত এক মাসে অন্তত ২০টি বাড়িঘর ও অর্ধশত বিঘা ফসলি জমি বিলীন হয়েছে নদীগর্ভে। ভাঙন ঝুঁকিতে একটি মসজিদ, একটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়সহ শতাধিক পরিবার।
চর বক্তারপুর গ্রামের বাসিন্দা বেল্লাল শেখ, সেকেন বিশ্বাস জানালেন, ‘গেল কোরবানির ঈদের দিন নদীতে ভেঙে যায় কয়েকটি বাড়ি। বাধ্য হয়ে অন্যত্র আশ্রয় নিয়েছেন তারা। কেউ বা ঘর ভেঙে রেখেছেন, কিন্তু নতুন করে ঘর তৈরি করতে পারছেন না অর্থাভাবে। বর্ষা মৌসুম এলেই আতঙ্কে থাকতে হয়।’
শাজাহান আলী, নাদের শেখ, মামুন শেখ বলেন, ‘এই বয়সে তারা অন্তত ৬ বার এই নদীভাঙন দেখেছেন। বর্তমানে যেখানে বসবাস করছেন তারা, আগে নদীর প্রায় আধাকিলোমিটার দূরে বসতবাড়ি ছিল। নদী ভাঙতে ভাঙতে সেখান সরে এসেছেন। পানি উন্নয়ন বোর্ডের কাছে দাবি, ভাঙন রোধে দ্রুত ব্যবস্থা নিলে মানুষ বাঁচবে। তবে এবার একটা স্থায়ী ব্যবস্থা দরকার।’
ভুক্তভোগী রওশন বিশ্বাসের স্ত্রী জোসনা খাতুন বলেন, ‘শিশুসন্তান আর গবাদি পশু নিয়ে নির্ঘুম রাত কাটাতে হয়। কতবার ঘর ভাঙবে আর কতবার সরিয়ে নেব? গত কোরবানির ঈদের দিনও ভাঙন হয়েছে। এলাকার লোকজনকে ডেকে ঘর দ্রুত সরিয়ে নিতে হয়। ঈদের দিন আমাদের রান্নাবান্না, খাওয়া কিছুই হয়নি। এভাবে আর কত দিন।’
এ বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে বেড়া পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপবিভাগীয় প্রকৌশলী (ভারপ্রাপ্ত) হায়দার আলী বলেন, ‘কিছু ভাঙন দেখা দিয়েছে। ভাঙনকবলিত এলাকা পরিদর্শন করে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা সাপেক্ষে ভাঙন রোধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।