জুমবাংলা ডেস্ক : সম্রাট মার্কাস অরেলিয়াস ক্লডিয়াস ২১৪ থেকে ২৭০ সাল পর্যন্ত রোমান সাম্রাজ্য শাসন করেছেন। তার শাসনামলে তিনি সৈন্যদের বিয়ে করার ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছিলেন।
কেননা তিনি বুঝতে পেরেছিলেন, যে যোদ্ধার কোনো পারিবারিক বন্ধন নেই, সে ততো বেশি সাহসী। কারণ তখন ওই যোদ্ধা তার জীবনের ঝুঁকি নিতে কম ভয় পায়।
কথিত আছে যে ভ্যালেন্টাইন নামের একজন বিশপ, যিনি প্রেমে বিশ্বাস করতেন, তিনি সৈন্যদের বিয়ে দিয়ে তা উদযাপন করতেন, এভাবে তিনি তৎকালীন সাম্রাজ্যের ডিক্রিকে প্রত্যাখ্যান করেছিলেন।
ভ্যালেন্টাইন নামে আরেক ধার্মিক ব্যক্তিকে ঘিরে ভিন্ন ধরনের গল্প রয়েছে। ওই গল্প অনুযায়ী তিনি রাস্তায় রাস্তায় গোলাপ বিতরণ করতেন।
আরেকটি গল্প অনুসারে ভ্যালেন্টাইন নামে একজন কাগজে হৃদয় কেটে সৈন্যদের দিতেন, যাতে তারা সেই কার্ডগুলি দেখে তার প্রিয়জনকে মনে রাখতে পারে।
এমন গল্পও আছে যেখানে ভ্যালেন্টাইন নামে একজন ধর্মযাজক তার প্রভাবশালী আত্মীয়দের পরিকল্পনার বিরোধিতা করেছিলেন। তিনি প্রেমের প্রকৃত অনুভূতি উপলব্ধি করতে পেরেছিলেন।
সেই উপলব্ধি থেকে তিনি একজন খ্রিস্টান তরুণ এবং তার প্যাগান বান্ধবীর মধ্যে মিলনকে আনুষ্ঠানিক রূপ দিতে অর্থাৎ তাদের বিয়ে দিতে সম্মত হয়েছিলেন। প্যাগানরা মূলত বহু-ঈশ্বরে বিশ্বাস করতেন। যাদের সাথে খ্রিস্টানদের ব্যাপক বিরোধ ছিল।
ইংরেজিতে লেখা ভালোবাসা দিবসের প্রাচীনতম বার্তা। এটি ১৪৭৭ সালে লেখা হয়েছিল
ভ্যালেন্টাইন-নামে-একাধিক-সেইন্ট”ভ্যালেন্টাইন নামে একাধিক সেইন্ট
ক্যাথলিক সেইন্টদের রেকর্ড অনুযায়ী, ভ্যালেন্টাইন নামে মোট ১১ জন সেইন্ট আছেন। তাদের মধ্যে অন্তত তিনজন প্রেমের বার্তা ছড়ানোর জন্য প্রসিদ্ধ ছিলেন।
সেইন্টদের জীবনী বা হ্যাজিওগ্রাফি গবেষক, ফেডারেল ইউনিভার্সিটি অফ সাও পাওলো (ইউনিফেস্প) এর গবেষক এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের হ্যাজিওগ্রাফি সোসাইটির সহযোগী থিয়াগো মায়েরকি এই তথ্য দিয়েছেন।
“এই তিনটি চরিত্র নিয়ে প্রায়ই বিভ্রান্তি দেখা দেয়, একজনের সাথে আরেকজনকে গুলিয়ে ফেলা হয়”, তিনি বলেন।
“গির্জা বা চার্চে যে সেইন্ট ভ্যালেন্টাইনকে উদযাপন করা হয় তিনি, রোমের সেইন্ট ভ্যালেন্টাইন।”
“তার সাথে একজন ডাক্তারের গল্পও মিলে যায় যিনি পরবর্তীতে একজন ধর্মযাজক হয়েছিলেন এবং সম্রাটের আইনের বিরুদ্ধে গিয়ে সৈন্যদের বিয়ে দেয়া উদযাপন করেছিলেন।”
“কিন্তু তার আসলেই কোনো অস্তিত্ব ছিল কি না, সেটা নিয়ে বিতর্ক আছে”, গবেষক মায়েরকি উল্লেখ করেন।
যদি একজন ভ্যালেন্টাইনকে আরেকজন ভ্যালেন্টাইন থেকে আলাদা করা কঠিন হয় তবে এটা প্রমাণ করা আরও কঠিন হবে যে সত্যিই কী ঘটেছে।
সেইসাথে এই প্রশ্নও ওঠে যে শত শত বছর ধরে চর্চিত এই কিংবদন্তি চরিত্রের আদৌ কোনো অস্তিত্ব ছিল নাকি সবই মনগড়া?
যেহেতু ১৪ই ফেব্রুয়ারি উদযাপন করা চরিত্রটি নিয়ে ক্যাথলিক ধর্মে এতো বিতর্ক রয়েছে, ফলে বাস্তবতা কী এবং পৌরাণিক কাহিনী কী তা নিশ্চিত করতে না পারায় ক্যাথলিক চার্চ নিজেরাই তাদের প্রথাগত লিটার্জিকাল ক্যালেন্ডার থেকে ১৪ই ফেব্রুয়ারির উৎসবটিকে সরিয়ে দেয়।
১৯৬০ সালে দ্বিতীয় ভ্যাটিকান কাউন্সিলের পরে তা করা হয়।
তারপরও সেইন্ট ভ্যালেন্টাইনের সম্মানে কিছু কিছু সম্প্রদায় আজও এই উৎসব উদযাপন করে, যেখানে ঐতিহ্য বেশ শক্তিশালী।
খবর বিবিসি।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।