আন্তর্জাতিক ডেস্ক : যুক্তরাষ্ট্রের টেক্সাসে পাঁচটি গাড়ির সংঘর্ষে এক তরুণীসহ চার ভারতীয় তরুণ মুহূর্তের মধ্যে পুড়ে অঙ্গার হয়ে গেছেন। তারা সবাই একটি গাড়িতে ছিলেন। স্থানীয় সময় শুক্রবার (৩০ আগস্ট) যখন হৃদয়বিদারক ঘটনাটি ঘটে তখন তারা কারপুলিং অ্যাপের মাধ্যমে একত্রে ওই গাড়িটি ব্যবহার করছিলেন। তারা আরকানসাসের বেন্টনভিলে যাচ্ছিলেন। দুর্ঘটনার সময় তারা যে এসইউভিতে ছিলেন তাতে আগুন ধরে যায় এবং তারা গাড়ির মধ্যে পুড়ে মারা যান। কর্তৃপক্ষ তাদের পরিচয় নিশ্চিত করতে ডিএনএ পরীক্ষার উপর নির্ভর করছে।
নিহতরা হলেন আরিয়ান রঘুনাথ ওরামপতি, ফারুক শাইক, লোকেশ পালাচারলা এবং ধারশিনী বাসুদেবন। ওরামপতি এবং তার বন্ধু শাইক ডালাসে তার চাচাতো ভাইয়ের সঙ্গে দেখা করে ফিরছিলেন। লোকেশ পালাচারলা তার স্ত্রীর সঙ্গে দেখা করতে বেন্টনভিলে যাচ্ছিলেন। ধারশিনী বাসুদেবন নামের ওই তরুণী টেক্সাস বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতকোত্তর শেষ করে যুক্তরাষ্ট্রে কর্মরত ছিলেন। তিনি বেন্টনভিলে তার চাচার সঙ্গে দেখা করতে যাচ্ছিলেন। তারা একটি কারপুলিং অ্যাপের মাধ্যমে সংযুক্ত হয়েছে এবং এটি কর্তৃপক্ষকে তাদের পরিচয় শনাক্ত করতে সহায়তা করেছে।
দর্শিনী বাসুদেবনের বাবা তিন দিন আগে একটি টুইটার পোস্টে ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্করকে ট্যাগ করেছিলেন এবং তার মেয়েকে খুঁজে পেতে সাহায্য চেয়েছিলেন। তিনি বলেন, প্রিয় স্যার, আমার মেয়ে ধারশিনী বাসুদেবন ভারতীয় পাসপোর্ট নং-টি৬২১৫৫৫৯ নিয়ে গত ৩ বছর যুক্তরাষ্ট্রে রয়েছে। সে দুই বছর এমএস অধ্যয়ন এবং পরের এক বছর চাকরি করছে।
শুক্রবার সন্ধ্যায় তিনি অন্য ৩ জনের সঙ্গে একটি কার পুলিং নিয়েছিলেন বিকেল ৩টা থেকে ৪টা পর্যন্ত সক্রিয়ভাবে মেসেজিং করছিলেন এবং বিকেল ৪টার পরে ফোনে আর যোগাযোগ করা যায়নি। এবং তার সঙ্গে অন্য ৩ জনের সঙ্গে যারা ওই গাড়িতে ছিলেন তাদের সঙ্গে আর কোনও যোগাযোগ স্থাপন করা যায়নি,’ তিনি পোস্টে জানিয়েছেন।
ওরামপতির বাবা সুভাষ চন্দ্র রেড্ডি ম্যাক্স এগ্রি জেনেটিক্স প্রাইভেট লিমিটেড নামে হায়দ্রাবাদভিত্তিক একটি প্রতিষ্ঠানের কর্ণধার। আরিয়ান কোয়েম্বাটুরের অমৃতা বিশ্ব বিদ্যাপীঠমে তার ইঞ্জিনিয়ারিং ডিগ্রি সম্পন্ন করেছেন। তার বাবা-মা মে মাসে টেক্সাস বিশ্ববিদ্যালয়ে তার সমাবর্তনের জন্য যুক্তরাষ্ট্রে গিয়েছিলেন। সমাবর্তনের পরে, তারা তাকে ভারতে ফিরে যেতে বলেছিলেন, কিন্তু তিনি বলেছিলেন যে তিনি আরও দুই বছর যুক্তরাষ্ট্রে কাজ করতে চান। করুণ নিয়তি তাকে এভাবে শেষ করে দিলো, তার এক আত্মীয় বলেন।
ওরামপতির বন্ধু শাইকও হায়দ্রাবাদের বাসিন্দা এবং বেন্টনভিলে থাকতেন। তামিলনাড়ুর দর্শিনী টেক্সাসের ফ্রিস্কোতে থাকতেন। ফারুক শেখের বাবা মাস্থান ভ্যালি জানান, তিন বছর আগে তিনি যুক্তরাষ্ট্রে গিয়েছিলেন। তিনি তার এমএস ডিগ্রি শেষ করতে যুক্তরাষ্ট্রে গিয়েছিলেন। সম্প্রতি তা সম্পন্ন করেছেন।
মাস্থান ভ্যালি একজন অবসরপ্রাপ্ত বেসরকারী কর্মকর্তা এবং পরিবারটি বিএইচইএল হায়দ্রাবাদে থাকে। আমার মেয়েও যুক্তরাষ্ট্রে থাকে এবং পরিস্থিতি সামাল দিচ্ছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়, একটি দ্রুতগামী ট্রাক পিছন দিক থেকে এসইউভিটিকে সজোরে ধাক্কা দিলে গাড়িটিতে ধাউ ধাউ করে আগুন ধরে যায় এবং সব যাত্রী সম্পূর্ণ পুড়ে যান৷ কর্তৃপক্ষ পরিচয় নিশ্চিত করতে ডিএনএ ফিঙ্গারপ্রিন্টিং এবং দাঁত ও হাড়ের নমুনার উপর নির্ভর করছে। মৃতদেহ শনাক্ত করার জন্য ডিএনএ এবং ফিঙ্গারপ্রিন্টিং করা হবে, এবং নমুনাগুলো বাবা-মায়ের সঙ্গে মিলানো হবে,’ একটি স্থানীয় কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে।চলতি সপ্তাহে যুক্তরাষ্ট্রে কয়েক দিনের ছুটি থাকায় শনাক্তকরণ প্রক্রিয়া বিলম্বিত হয়েছে। এতে করে ভুক্তভোগী পরিবারের কষ্ট আরও দীর্ঘায়িত হয়।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।