জুমবাংলা ডেস্ক : বাংলাদেশের সরকারি-বেসরকারি সেরা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সর্বোচ্চ ডিগ্রি নিয়েও চাকরি পাচ্ছে না অনেক তরুণ-তরুণী। ফলে তাদের মধ্যে এক ধরণের হতাশা নেমে আসে। অথচ, দেশের বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোতে প্রতিবছর চাকরি নিয়ে আসে বিদেশিরা।
আমাদের উদ্যোক্তাদের অভিযোগ, বিশ্ববিদ্যালয় পড়া শেষ করা এসব চাকরিপ্রত্যাশীরা কর্মপোযোগী নয়। অর্থাৎ, তাদের মধ্যে ব্যবস্থাপনা দক্ষতাসহ অন্যান্য জ্ঞানের ঘাটতি রয়েছে। বেসরকারি খাতে শীর্ষ উদ্যোক্তাদের মতে, প্রচলিত প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষার পাশাপাশি কর্মপোযোগী করে শিক্ষার ব্যবস্থা করলে এ ঘাটতি দূর হবে।
এক্ষেত্রে উন্নত বিশ্বের বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থী ভর্তির ক্ষেত্রে যে নিয়মগুলো অনুসরণ করা হয়, লক্ষ্য করলেই প্রতীয়মান হয় যে, বাংলাদেশের বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার মান কোন অবস্থায়! অনেকেরই প্রশ্ন, তাহলে কী পড়ানো হচ্ছে এসব বিশ্ববিদ্যালয়ে?
বিশ্বের শীর্ষস্থানীয় বিশ্ববিদ্যলয়ে ভর্তির ক্ষেত্রে শিক্ষার্থীদের প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষার পাশাপাশি দেখা হয় চাকরি করাসহ অন্যান্য সামাজিক কাজের অভিজ্ঞতা; দেখা হয় পারিপার্শ্বিক পরিবেশে তারা নিজেদের কতটা মানিয়ে নিতে সক্ষম।
এক্ষেত্রে আমরা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে পড়াশোনা নিয়ে উদাহরণ দিতে পারি। শিক্ষা, স্বাস্থ্য, চিকিৎসা, সমরাস্ত্র, প্রযুক্তিসহ সব দিকেই শীর্ষে রয়েছে দেশটি। বিশেষ করে, যুগোপযোগী আধুনিক ও গুণগত উচ্চশিক্ষার জন্য দেশটির বিকল্প নেই। সেখানে উচ্চশিক্ষার জন্য আছে বিশ্বসেরা অনেক বিশ্ববিদ্যালয়।
দেশটির বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির জন্য চাওয়া হয় ভিন্ন ভিন্ন যোগ্যতা। কারণ এক একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে এক এক ধরনের লক্ষ্য-উদ্দেশ্য থাকে। তবে ভর্তির যোগ্যতা হিসেবে মোটামুটি কয়েকটি বিষয় সব বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির জন্য বিবেচনায় রাখা হয়। ভর্তির ক্ষেত্রে যে বিষয়গুলো বিবেচনা করা হয়, সেগুলো হলো-
১. শিক্ষার প্রতি ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি থাকতে হবে। শিক্ষার্থীদের অবশ্যই প্রদর্শন করতে হবে যে তারা কঠোর পরিশ্রমের জন্য প্রস্তুত। তারা কেবল সামাজিক জীবনের জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ে আবেদন করছে না, বরং তারা তাদের নির্বাচিত পাঠ্যক্রমের কাজের চাপ সহ্য করতে সক্ষম। সেই সঙ্গে সময় এবং কাজের চাপ পরিচালনা করার দক্ষতা-অভিজ্ঞতা প্রদর্শন করাও গুরুত্বপূর্ণ।
২. অবশ্যই নির্বাচিত বিষয়ের প্রতি বিশেষ আগ্রহ প্রদর্শন করতে হবে। আবেগ এবং অধ্যবসায় এমন গুণাবলী, যা গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।
৩. কোনও কিছু বোঝার সক্ষমতা ও স্বাধীনভাবে কাজ করার মানসিকতা প্রদর্শন করতে হয়। কারণ অনেক শিক্ষার্থীদের সামাজিক দক্ষতা এবং আরও উদ্বেগজনকভাবে সাধারণ জ্ঞানের অভাব রয়েছে। এটি দেখানো গুরুত্বপূর্ণ যে আপনি আপনার পড়াশোনার বাইরে সুদৃঢ় ব্যক্তি।
৪. যে কোনও কাজের প্রতি প্রতিশ্রুতিবদ্ধ এবং সংকল্প দেখাতে হবে। যে কোনো অভিজ্ঞতা তুলে ধরা। যেমন- কোনও স্পোর্টস দলের সদস্য হয়ে থাকলে, কোনও কমিটি বা স্কুল কাউন্সিলের সঙ্গে জড়িত থাকলে বা একটি খণ্ডকালীন কাজ করে থাকলে- এই বিষয়গুলো ব্যক্তিগত বিবৃতিতে উল্লেখ করতে হবে। এই সমস্ত ভূমিকাতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ এবং কাজের জন্য দায়িত্ব নেওয়ার ক্ষমতা প্রদর্শন করা হয়। আপনি যে কোনও নেতৃত্বের অভিজ্ঞতা অর্জন করেছেন বা আপনার যে অবদান রেখেছেন সে সম্পর্কেও কথা বলতে পারেন। আপনি কোনও অতিরিক্ত যোগ্যতা যেমন সঙ্গীত বা লাইফগার্ডিং বা প্রাথমিক চিকিত্সার মতো কোর্স অন্তর্ভুক্ত করতে পারেন। কারণ বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির ক্ষেত্রে এই গুণাবলীর প্রমাণ সন্ধান করে কর্তৃপক্ষ।
৫. দেশটির বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের আবেদনে অনুসন্ধিৎসু মনের প্রমাণ খোঁজা হয়।
৬. ভাষা দক্ষতা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এক্ষেত্রে শব্দের ব্যবহার, প্রয়োগ, বানান, ব্যাকরণগত শুদ্ধতা ইত্যাদি বিষয়ের প্রতি গুরুত্ব দিতে হয়। কারণ বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ এই বিষয়গুলো গুরুত্ব সহকারে দেখে। বিশ্ববিদ্যালয়গুলো ইংরেজি দক্ষতা কলেজের শিক্ষার্থী হিসেবে সাফল্যের পথে বাধা হয়ে দাঁড়াবে না তা নিশ্চিত করার জন্য শিক্ষার্থীকে ইংরেজিতে পড়ার এবং লেখার দক্ষতা প্রদর্শন করতে বলে। ভাষার দক্ষতা আবেদনের বিভিন্ন অংশে প্রতিফলিত হবে। তবে বেশিরভাগ আমেরিকান কলেজ এবং বিশ্ববিদ্যালয়গুলো শিক্ষার্থীকে টোফেল নিতে হয়।
৭. আবেদনকারীদের দলগতভাবে কাজ করার মানসিকতা রয়েছে কি না সে বিষয়গুলোর প্রতি গুরুত্ব দেয়া হয়। এক্ষেত্রে কোনও ক্রীড়া দল, কমিটি, ক্লাব বা অন্য কোনও দলের অংশ হয়ে থাকলে অন্যদের সঙ্গে কাজের বিষয়ে অন্তর্ভূক্ত করলে তা প্রকাশ পায়।
এ বিষয়গুলো ছাড়াও আরও বেশ কিছু বিষয়ে গুরুত্বারোপ করা হয়। সেগুলো হলো-
১. মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সময়কালে শিক্ষার্থীর একাডেমিক কৃতিত্ব আবেদনের সর্বাধিক উল্লেখযোগ্য অংশ। কারণ ভর্তি কমিটিগুলো শিক্ষার্থীর নেওয়া কোর্সের একাডেমিক স্তর বিবেচনা করে। শিক্ষার্থীর পাঠ্যক্রমের সবচেয়ে কঠিন ক্ষেত্রে শিক্ষার্থীর সাফল্যের দিকে বিশেষ মনোযোগ দেওয়া, তারা শিক্ষার্থীর একাডেমিক ব্যাকগ্রাউন্ড এবং তাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রোগ্রামগুলোর কতটুকু উপযুক্ত, মূল্যায়ন করার চেষ্টা করে।
২. বিভিন্ন শিক্ষার্থীদের দক্ষতা মূল্যায়নের জন্য সাধারণ মানদণ্ডের সঙ্গে মনোপযোগী পরীক্ষা নেয়া হয়।
৩. আবেদন সংক্রান্ত প্রবন্ধ এবং সুপারিশের চিঠিগুলো খুব গুরুত্বপূর্ণ হতে পারে। কারণ প্রবন্ধটি একটি ভর্তি কমিটিকে শিক্ষার্থীর ব্যক্তিত্ব, জীবনের প্রতি তার দৃষ্টিভঙ্গি এবং তার বিশেষ আগ্রহ এবং দক্ষতা বুঝতে সহায়তা করে।
৪. স্কুলগুলোর ক্রিয়াকলাপে শিক্ষার্থীর সম্পৃক্ততার একটি পর্যালোচনা ভর্তি কমিটিগুলোকে বুঝতে সহায়তা করে যে তিনি কীভাবে শ্রেণিকক্ষের বাইরে সময় কাটাচ্ছেন এবং কীভাবে তিনি সংগঠন, ক্রিয়াকলাপ এবং ক্যাম্পাসে দলগুলোতে অবদান রাখতে পারেন। অ্যাথলেটিক্স, সংগীত, শিল্প, থিয়েটার, বিতর্ক বা অন্য কোনও ক্ষেত্রে শিক্ষার্থীর যদি বিশেষ ক্ষমতা বা প্রতিভার প্রতি গুরুত্ব দেয়া হয়।
৫. পৃথিবীর যেকোনো দেশেই স্নাতকোত্তর কিংবা পিএইচডি পর্যায়ে পড়াশোনার ক্ষেত্রে বিশ্ববিদ্যালয়ের স্নাতক পর্যায়ে শিক্ষার্থীর গবেষণা ও নিবন্ধের দিকে গুরুত্ব দেওয়া হয়। যে বিষয়ে পড়ছেন বা গবেষণা করছেন তার ওপর নিবন্ধ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক জার্নালে প্রকাশের চেষ্টার দিকে খেয়াল রাখতে হবে। অনেকেই নিচু মানের জার্নালে নিবন্ধ প্রকাশের চেষ্টা করেন, যা কখনোই করবেন না। এতে ভবিষ্যতে বিপদে পড়বেন, ভর্তি বাতিল হয়ে যেতে পারে। গবেষণা নিবন্ধ প্রকাশের জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক বা প্রাক্তনীদের সঙ্গে যোগাযোগ করে সহায়তা নিন। বিভিন্ন কনফারেন্সে অংশগ্রহণের অভিজ্ঞতা, পোস্টার উপস্থাপনের অভিজ্ঞতা ভর্তির কার্যক্রমে ইতিবাচক হিসেবে কাজ করে।
৬. দেশভেদে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে স্টেটমেন্ট অব পারপাজ বা কেন পড়বেন, কোন বিষয়ে গবেষণা করতে চান সে সম্পর্কে লিখে জমা দিতে হয়। অন্যের প্রস্তাব কখনোই অনুকরণ করে জমা দেবেন না। নিজের আগ্রহ, লক্ষ্য ও উদ্ভাবনী ধারণা নিয়ে প্রস্তাব লিখতে হবে।
সূত্র : টাইমসহাইয়ার এডুকেশনডটকম ও কলেজএক্সপ্রেসডটকম
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।