আন্তর্জাতিক ডেস্ক : হোয়াইট হাউসে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ও ভাইস প্রেসিডেন্ট জেডি ভ্যান্সের সঙ্গে কথা কাটাকাটির পর লন্ডনে যান ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি।
সেখানে তাকে উষ্ণ সম্ভাষণ জানান যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী কিয়ার স্টারমার। শনিবার লন্ডনে ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় ১০ নম্বর ডাউনিং স্ট্রিটে জেলেনস্কির সঙ্গে সাক্ষাতের পর তিনি তাকে আশ্বস্ত করে বলেন, যুক্তরাজ্য তার পাশে আছে।
ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট তখন তাকে জানান, তার দেশের এমন বন্ধু আছে জেনে তিনি খুশি।
শুক্রবার হোয়াইট হাউসে প্রেসিডেন্টের কার্যালয় ওভাল অফিসে ইউক্রেন-রাশিয়ার চলমান যুদ্ধ সংক্রান্ত বৈঠকে ট্রাম্প ও ভ্যান্সের সঙ্গে কথা কাটাকাটি হয় জেলেনস্কির। একপর্যায়ে যুক্তরাষ্ট্র ও আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমের সামনেই ইউক্রেনের প্রেসিডেন্টকে মৌখিক আক্রমণ করে বসেন ট্রাম্প ও ভ্যান্স।
যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে এই প্রথম কোনও প্রেসিডেন্ট প্রকাশ্যে ক্যামেরার সামনে বিদেশি কোনও রাষ্ট্রপ্রধানকে অপদস্থ করেন।
বৈঠকে ট্রাম্প জেলেনস্কিকে বলেন, “আপনার কাছে এ মুহূর্তে আর কোনও বিকল্প নেই। আপনাকে শান্তি চুক্তি করতে হবে, নইলে আমরা আর থাকছি না। সেক্ষেত্রে আপনাকে একাই যুদ্ধ চালিয়ে যেতে হবে। আমার মনে হয় না, সেটা ভালো কিছু হবে।”
যুক্তরাষ্ট্রের ভাইস প্রেসিডেন্ট জেডি ভ্যান্সও সেসময় জেলেনস্কির সমালোচনা করেন। তিনি তাকে বলেন, “আপনি একবারও যুক্তরাষ্ট্রের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছেন না। আর আমাদের প্রস্তাবিত শান্তি চুক্তির শর্তও মানতে রাজি হচ্ছেন না।” ভাইস প্রেসিডেন্টের এ মন্তব্যে মাথা নেড়ে সায় দেন ট্রাম্প।
জেলেনস্কি তখন গলা চড়িয়ে তাদের বলেন, “আমেরিকার জনগণকে অনেকবার আমি ধন্যবাদ জানিয়েছি।”
দুই রাষ্ট্রপ্রধানের মধ্যে এই অপ্রীতিকর ঘটনার একপর্যায়ে ট্রাম্পের জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তারা জেলেনস্কিকে হোয়াইট হাউস থেকে বেরিয়ে যেতে বলেন বলে জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের সংবাদমাধ্যম।
জেলেনস্কি সেখান থেকে বের হওয়ার পর ট্রাম্প তার নিজের সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ট্রুথ সোশালে লেখেন, “শান্তিচুক্তির জন্য রাজি হলে তিনি (জেলেনস্কি) হোয়াইট হাউসে ফিরতে পারেন।”
হোয়াইট হাউসে শুক্রবার ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কির সঙ্গে বৈঠকে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ও ভাইস প্রেসিডেন্ট জেডি ভ্যান্স। হোয়াইট হাউস থেকে বেরিয়ে যাওয়ার কয়েক ঘণ্টা পর লন্ডনের উদ্দেশে রওনা দেন জেলেনস্কি।
বিবিসি জানিয়েছে, শনিবার ডাউনিং স্ট্রিটে জেলেনস্কি পৌঁছার পর চারপাশ থেকে উল্লাসের ধ্বনি ভেসে আসে।
সেই উল্লাসের দিকে ইঙ্গিত করে যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী স্টারমার ইউক্রেনের প্রেসিডেন্টকে বলেন, “যুক্তরাজ্যের মানুষ রাজপথে নেমে এসেছে এটা দেখাতে, তারা আপনাকে কতটা সমর্থন করে, ইউক্রেনকে কতটা সমর্থন করে।”
তিনি বলেন, “যতদিন প্রয়োজন আমরা আপনার ও ইউক্রেনের পাশে আছি।”
প্রত্যুত্তরে জেলেনস্কি বলেন, “আমি আপনাকে এবং যুক্তরাজ্যের জনগণকে ধন্যবাদ জানাচ্ছি যুদ্ধের শুরু থেকে আমাদের বিপুল সমর্থন দিয়ে যাওয়ার জন্য।”
এরপর ইউক্রেনকে সামরিক সরঞ্জাম কেনার জন্য ২ দশমিক ২৬ বিলিয়ন ডলারের একটি ঋণ চুক্তিতে স্বাক্ষর করেন স্টারমার।
রাশিয়ার জব্দ করা সম্পত্তি থেকে অর্জিত লাভের মাধ্যমে এই ঋণ পরিশোধ করা হবে।
জেলেনস্কির সঙ্গে বৈঠকের পর যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প ও ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁর সঙ্গে ফোনে কথা বলেন স্টারমার।
তিনি রবিবার লন্ডনে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ বন্ধ করার লক্ষ্যে ইউরোপীয় নেতাদের সঙ্গে বৈঠকে বসবেন। এসময় জেলেনস্কি ব্রিটেনের রাজা তৃতীয় চার্লসের সঙ্গে দেখা করবেন বলে জানিয়েছে বিবিসি।
জেলেনস্কির সঙ্গে বিতণ্ডা, পরিবারসহ বিক্ষোভের মুখে মার্কিন ভাইস প্রেসিডেন্ট
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।