আন্তর্জাতিক ডেস্ক : রাশিয়ার দখল থেকে ছয় হাজার বর্গ কিলোমিটারের বেশি এলাকা ইউক্রেনের বাহিনী পুনরুদ্ধার করেছে বলে দেশটির প্রেসিডেন্ট ভলোদামির জেলেনস্কি সম্প্রতি দাবি করেছেন। তবে প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন থেকে শুরু করে অন্যান্য মার্কিন নেতারা বিজয় ঘোষণা না করার বিষয়ে সতর্কতা অবলম্বন করছেন। কারণ তারা বিষয়টি নিয়ে নিশ্চিত হতে পারছেন না।
পরিবর্তে, সামরিক কর্মকর্তা সামনের লড়াইয়ের দিকে নজড় রাখছেন এবং ইউক্রেনকে আরও অস্ত্র সরবরাহ ও প্রশিক্ষণ সম্প্রসারণের পরিকল্পনা তৈরি করছেন। তারা যুদ্ধক্ষেত্রের ক্ষতির জন্য রাশিয়ার প্রতিক্রিয়ার জন্যও সতর্কতার সাথে অপেক্ষা করছে। যদিও সপ্তাহান্তে ইউক্রেনের অগ্রযাত্রার দাবি সত্যি হলে যুক্তরাষ্ট্রের জন্য তা ব্যাপক উদযাপনের বিষয় ছিল, কিন্তু মার্কিন কর্মকর্তারা জানেন যে, পুতিনের এখনও যুদ্ধে নিয়োগ করার জন্য বিশাল সৈন্যবাহিনী ও অস্ত্র সংস্থান রয়েছে এবং তার বাহিনী এখনও পূর্ব ও দক্ষিণের বিশাল অংশ নিয়ন্ত্রণ করে।
‘আমি সম্মত যে, এ বিষয়ে নিশ্চিত হওয়া উচিত নয় কারণ রাশিয়ার কাছে এখনও কার্ড আছে যেটি তারা খেলতে পারে,’ মার্কিন বিমান বাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত জেনারেল ফিলিপ ব্রেডলভ বলেছেন, যিনি ২০১৩ থেকে ২০১৬ সাল পর্যন্ত ন্যাটোর শীর্ষ কমান্ডার ছিলেন, ‘ইউক্রেন এখন স্পষ্টতই টেকসই পরিবর্তন করছে৷ হয়তো তারা তাদের লাভ ধরে রাখতে সক্ষম হবে।’
যুক্তরাষ্ট্রের নেতারা অবশ্য দাবি করছে, তাদের পাঠানো অস্ত্রের কারণেই ইউক্রেন রাশিয়াকে মোকাবেলা করতে সক্ষম হচ্ছে। তারা বিশেষ করে হাই-মোবিলিটি আর্টিলারি রকেট সিস্টেম, বা হিমারসসহ ইউক্রেনকে যে, অত্যাধুনিক অস্ত্র এবং রকেট সিস্টেমগুলো সরবরাহ করেছে তা নির্দেশ করেছেন। মার্কিন কর্মকর্তারা স্বীকার করেছেন যে, ইউক্রেনের পাল্টা আক্রমণে সাহায্য করার জন্য মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র তথ্য সরবরাহ করেছিল। তবে তারা রাশিয়ার সেনা প্রত্যাহার ও ডোনেৎস্কে নতুন করে তাদেরকে মোতায়েনের বিষয়ে কিছু বলতে অস্বীকৃতি জানায়।
এদিকে, বিজেয়ের দাবি করলেও ইউক্রেনীয় নেতারা এখনও যুক্তরাষ্ট্রকে আরও নতুন নতুন অস্ত্র দেয়ার জন্য চাপ দিচ্ছেন। এর মধ্যে রয়েছে ফাইটার জেট এবং দূরপাল্লার আর্মি ট্যাকটিক্যাল মিসাইল সিস্টেম, বা এটিএসিএমএস, একটি সারফেস-টু-সার্ফেস ক্ষেপণাস্ত্র যা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এখন পর্যন্ত পাঠাতে অস্বীকার করেছে। বিশ্লেষকরা মনে করছেন, ইউক্রেনীয় বাহিনী কিছু এলাকা দখল করতে পেরেছে, কারণ সেগুলো রুশ সেনারা নিজেরাই পরিত্যাগ করেছে। রাশিয়া বিপুল এলাকায় সৈন্য রেখে খরচ বাড়ানোর পরিবর্তে ডনবাস এলাকার গুরুত্বপূর্ণ জায়গাগুলোর নিরপত্তা নিশ্চিত করতে চাইছে।
যুক্তরাষ্ট্র ও পশ্চিমাদের কাছ থেকে আরও অস্ত্র পাওয়ার জন্য ইউক্রেনীয় সরকার এসব প্রচারণা চালাচ্ছে। কারণ, তাদেরকে অস্ত্র দেয়া নিয়ে আমেরিকান এবং ইউরোপীয়ান জনসাধারণ মনে ক্ষোভ বাড়ছে। ইউক্রেন তাদের কাছে উপস্থাপণ করত চাইছে যে, অস্ত্র পেলে তারা যুদ্ধের গতিপথ পরিবর্তন করতে পারবে। সাম্প্রতিক দিনে ইউক্রেন যোদ্ধাদের সাফল্যের দাবি চলমান বিতর্ককে প্রভাবিত করবে কিনা, তা স্পষ্ট নয়। তবে হোয়াইট হাউস কংগ্রেসকে একটি সামগ্রিক সরকারি তহবিল পরিমাপের অংশ হিসাবে অতিরিক্ত ১১.৭ বিলিয়ন ডলার সহায়তা দেয়ার প্রস্তাব করেছে যা আইন প্রণেতাদের অবশ্যই মাস শেষ হওয়ার আগে অনুমোদন করতে হবে।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র – ন্যাটো সদস্যদের মধ্যে ইউক্রেনের যুদ্ধ প্রচেষ্টার প্রধান অবদানকারী – জানুয়ারি থেকে ইউক্রেনে ১ হাজার ৫০০ কোটি ডলারের বেশি অস্ত্র এবং অন্যান্য সামরিক সহায়তা ঢেলে দিয়েছে। বাইডেন সপ্তাহান্তে ইউক্রেনের জন্য যুদ্ধক্ষেত্রের লাভের কথা স্বীকার করেছেন তবে আরও কিছু বলতে অস্বীকার করেছেন। তিনি সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমি এখন এ বিষয়ে কথা বলতে যাচ্ছি না কারণ বিষয়গুলো প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।’
‘ইউক্রেনের জন্য তহবিল অব্যাহত রাখার জন্য, এখন পর্যন্ত আমি তাদের চাহিদার কোনো অভাব দেখিনি,’ বলেছেন মিশৌরির সিনেটর রয় ব্লান্ট, ‘আমি মনে করি তাদের যে সাহায্য দেয়া হয়েছে তা নেয়ার ক্ষমতা দেখানো এবং তারপরে তাদের কিছু প্রচেষ্টা সফল হয়েছে বলে দাবি করা, এ সবই আরও অস্ত্র চাওয়ার জন্য একটি অজুহাত।’ সূত্র: ইউএসনিউজ।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।