আন্তর্জাতিক ডেস্ক : চলতি বছরের ২৪ ফেব্রুয়ারি ইউক্রেনে সামরিক অভিযানের ঘোষণা দেন রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। এরপর আজ শুক্রবার (২ ডিসেম্বর) পর্যন্ত সেই যুদ্ধ ২৮২ দিনে গড়িয়েছে। তবে যুদ্ধ বন্ধে এখন পর্যন্ত উল্লেখযোগ্য কোনো লক্ষণ পাওয়া যাচ্ছে না।
যুদ্ধ শুরুর প্রথম দিকে তা থামাতে পশ্চিমা দেশের অনেক নেতাদের দৌড়ঝাঁপ উল্লেখ করার মতো ছিল। বিশেষ করে ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রো-বেশ কয়েকবার ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে ফোনালাপ করেছেন। চেষ্টা চালিয়েছেন জার্মান চ্যান্সেলর ওলাফ শলৎস, তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েপ এরদোয়ানসহ অনেক নেতা। যুদ্ধ বন্ধে ইউক্রেন-রাশিয়ার প্রতিনিধিদের মধ্যে কয়েক দফায় টেবিল আলোচনাও হয়। কিন্তু শেষ পর্যন্ত কোনো কিছুই ফলফ্রসু হয়নি।
ইউক্রেনে এই আগ্রাসন চালানোর কারণে পশ্চিমা দেশগুলো রাশিয়ার ওপর নজিরবিহীন নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে। অন্যদিকে রাশিয়াও থেমে থাকেনি। তারাও পশ্চিমা দেশ ও কর্মকর্তাদের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে। তবে এসব কোনো কিছুই যুদ্ধের লাগাম থামাতে পারেনি।
সম্প্রতি মার্কিন সংবাদমাধ্যম ওয়াশিংটন পোস্ট এক প্রতিবেদনে বলেছে, রাশিয়ার সঙ্গে আলোচনায় বসতে ইউক্রেনের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। গোপনে ওয়াশিংটন এই প্রচেষ্টা চালাচ্ছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে আলোচনার বিষয়ে আগ্রহ দেখাতে ‘গোপনে’ ইউক্রেনের নেতাদের ‘উত্সাহী’ করছে যুক্তরাষ্ট্র। প্রেসিডেন্ট পুতিন ক্ষমতা থেকে সরে না দাঁড়ালে কিয়েভ শান্তি আলোচনায় বসবে না এমন অবস্থান থেকেও সরে আসার আহ্বান জানানো হয়েছে ওয়াশিংটনের পক্ষ থেকে।
ওয়াশিংটন পোস্ট লিখেছে, ইউক্রেনের কঠোর অবস্থানের কারণে তাদের প্রতি আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সমর্থন অব্যাহত নাও থাকতে পারে, এমন আশঙ্কা থেকেই এ আহ্বান জানানো হয়েছে। ওয়াশিংটন পোস্টে বেনামি সূত্রকে উদ্ধৃত করে বলা হয়েছে, মার্কিন কর্মকর্তাদের এই অনুরোধের লক্ষ্য ইউক্রেনকে রাশিয়ার সঙ্গে আলোচনার টেবিলে ঠেলে দেওয়া নয়। কিন্তু কিয়েভকে একটি পরিকল্পিত প্রচেষ্টায় নিয়ে যাওয়া, যাতে করে অপর দেশগুলোর সমর্থন তারা পেতে পারে।
যুক্তরাষ্ট্র ও ইউক্রেনীয় কর্মকর্তারা স্বীকার করেছেন, পুতিনের সঙ্গে আলোচনায় বসতে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কির জারি করা নিষেধাজ্ঞার বিষয়টি ইউরোপ, আফ্রিকা ও লাতিন আমেরিকার কিছু দেশে উদ্বেগের জন্ম দিয়েছে। এই দেশগুলোতে যুদ্ধের প্রভাবে খাদ্য ও জ্বালানির মূল্যবৃদ্ধির প্রভাব তীব্র।
তবে এই প্রতিবেদনের পর মার্কিন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বলেছে, মস্কো যুদ্ধের তীব্রতা বাড়াচ্ছে। শান্তি আলোচনাকে গুরুত্ব দিচ্ছে না মস্কো।
তবে একটু হলেও আশার কথা গতকাল বৃহস্পতিবার ওয়াশিংটনে এক অনুষ্ঠানে মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন বলেছেন, পুতিন সত্যিকার অর্থে ইউক্রেন যুদ্ধের অবসান ঘটাতে চাইলে তার সঙ্গে কথা বলতে প্রস্তুত তিনি।
বাইডেন বলেন, ‘আমি পুতিনের সঙ্গে কথা বলতে প্রস্তুত যদি তিনি সত্যিই সিদ্ধান্ত নিতে আগ্রহী হন যে তিনি ইউক্রেনের যুদ্ধ শেষ করার উপায় খুঁজছেন। কিন্তু তিনি এখনো তা করেননি। যদি তাই হয়, আমি আমার ফরাসি ও ন্যাটো বন্ধুদের সঙ্গে পরামর্শ করে পুতিনের মনে কী আছে তা দেখতে তার সঙ্গে বসতে পেরে খুশি হব।’
বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্র সফরে আছেন ফরাসি প্রেসিডেন্ট ম্যাক্রো। সেখানেই এক যৌথ সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেছেন বাইডেন। এদিকে ম্যাক্রোও বলেছেন, তিনি ওয়াশিংটন সফর শেষ করে পুতিনের সঙ্গে আবার কথা বলবেন।
মার্কিন প্রেসিডেন্টের এমন মন্তব্যের প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে রাশিয়া। ক্রেমলিনের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন রাশিয়ার স্বার্থ সুরক্ষিত করতে আলোচনার জন্য উন্মুক্ত, তবে আলোচনার জন্য পারস্পরিক ভিত্তি কঠিন কারণ যুক্তরাষ্ট্র তার ‘নতুন অঞ্চল’ স্বীকৃতি দেয় নি।
গত সেপ্টেম্বরে এক গণভোটের মাধ্যমে ইউক্রেনের দোনেতস্ক, লুহানস্ক, খেরসন এবং ঝাপোরিজিয়া নিজেদের অঞ্চল বলে দখল নেয় রাশিয়া। ইউক্রেন ও পশ্চিমাদেশগুলো রাশিয়ার এই গণভোটকে ভুয়া বলে নিন্দা জানায়।
তাই বিশ্লেষকদের ধারণা, সহসাই এই যুদ্ধ বন্ধের আপাতত কোনো আভাস পাওয়া যাচ্ছে না। তথ্যসূত্র: বিবিসি, সিএনএন, আল-জাজিরা, রয়টার্স।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।