সময়ের পরিমাপ হলো বিভিন্ন ঘটনাপ্রবাহের মধ্যে দূরত্বের একধরনের পরিমাপ। যেমন সকালে সূর্যোদয় ও সন্ধ্যায় সূর্যাস্তের মধ্যে দূরত্বের পরিমাপ। এভাবে বিভিন্ন ঘটনাপ্রবাহ অতীত থেকে বর্তমান ও ভবিষ্যতের দিকে যাচ্ছে। বলা যায়, অতীত থেকে বর্তমান ও ভবিষ্যতের দিকে ঘটনাপ্রবাহের পরিমাপকে সময়ের পরিমাপ বলা চলে।
সময়ের হিসাব রাখার জন্য আমরা সাধারণত ব্যাটারিচালিত দেয়ালঘড়ি বা হাতঘড়ি ব্যবহার করি। চাবি দিয়ে দেয়ালঘড়ি চালানোর একটি ধরনও ছিল। পেন্ডুলামের দোলনকাল হিসাব করে সময়ের হিসাব রাখার ব্যবস্থা। এসব ঘড়ি দিয়ে সাধারণ কাজ চলে, কিন্তু সময় পরিমাপের সূক্ষ্ম কাজের জন্য খুব নির্ভরযোগ্য নয়।
কারণ, এসব ঘড়ির দোলনকাল ধীরে ধীরে কয়েক সেকেন্ড করে কমে যায়। এ কারণে সূক্ষ্ম হিসাবের জন্য এখন অ্যাটমিক ক্লক ব্যবহার করা হয়। এ ঘড়ি সাধারণত অ্যাটম বা পরমাণুর নিয়মিত কম্পনের আবর্তনের সঙ্গে সম্পর্কিত। প্রশ্ন হলো, কোন্ পদার্থের পরমাণু ব্যবহার করে সবচেয়ে বেশি নির্ভরযোগ্য সময়ের পরিমাপ পাওয়া যাবে? ন্যাশনাল ব্যুরো অব স্ট্যান্ডার্ড প্রথম যে অ্যাটমিক ক্লক তৈরি করে, সেটা ছিল নাইট্রোজেন পরমাণুর কম্পনভিত্তিক।
এই পরমাণুর কম্পন–আবর্তনের মাত্রা সেকেন্ডে ২৩ হাজার ৮৭০ বার। এই অ্যাটমিক ক্লকটি অ্যামোনিয়া ক্লক নামে পরিচিত। আধুনিককালের অ্যাটমিক ক্লকের ভিত্তি হলো সিসিয়াম পরমাণু। এর রশ্মি বিকিরণমাত্রা হলো প্রতি সেকেন্ডে ৯১৯ কোটি ২৬ লাখ ৩১ হাজার ৭৭০ আবর্তন। সিসিয়াম ক্লকের হিসাব অনুযায়ী সিসিয়াম অণুর এই বিশালসংখ্যক কম্পনের আবর্তন ঘটলে ১ সেকেন্ড সময় বলে গণ্য হয়।
এই ঘড়ি খুব নির্ভরযোগ্য। প্রায় ৩ লাখ ১৬ হাজার বছরে ১ সেকেন্ড সময় কমে যায়। তাই তখন সেই ১ সেকেন্ড সময় সংশোধন করে নিলেই চলে। এখন অবশ্য আরও নিখুঁত অ্যাটমিক ক্লক ব্যবহার করা হয়। হাইড্রোজেন পরমাণুর রশ্মি বিকিরণের কম্পাঙ্ক ব্যবহার করে এই ঘড়ি সময়ের পরিমাপ করে। এটা হাইড্রোজেন মেজার ক্লক নামে পরিচিত। এই ঘড়ি এত নিখুঁত সময় দেয় যে ১৭ লাখ বছরে মাত্র ১ সেকেন্ডের হেরফের হয়।
এ রকম একটি ঘড়ি যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াশিংটন ডিসির ইউএস নেভাল রিসার্চ ল্যাবরেটরিতে রয়েছে। এ ধরনের ঘড়ির আরও উন্নতি সাধন করা সম্ভব। এমনকি অত্যাধুনিক ঘড়ি হয়তো ৩০ কোটি বছর চললে ১ সেকেন্ড সময়ের হেরফের হতে পারে।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।