চাঁদের মহাকর্ষ পৃথিবীর সবকিছুকে প্রভাবিত করে। এর সবচেয়ে ভালো উদাহরণ জোয়ার-ভাটা। চাঁদের কক্ষপথের সঙ্গে মিল রেখে পৃথিবীতে প্রতিদিন দুবার করে জোয়ার ও ভাটা হয়। সূর্যের চেয়ে চাঁদ আমাদের অনেক কাছে। তাই, চাঁদের আকর্ষণে সমুদ্রের পানি ফুলে ওঠে বা বেড়ে যায়। এ অবস্থাকে বলে জোয়ার।
পৃথিবী ও চাঁদের ঘূর্ণনের কারণে এই ফুলে ওঠা পানির নেমে যাওয়াকে বলে ভাটা। কিন্তু মজার ব্যাপার হলো, চাঁদের এভাবে পৃথিবীর কাছে আসা বা দূরে সরে যাওয়া আমাদের শরীরকে প্রভাবিত করে। আমাদের ঠিক মাথার ওপরে থাকলে চাঁদের মহাকর্ষ শক্তি পৃথিবীর বিপরীতে কাজ করে। ফলে নিজেকে হালকা মনে হয়। তবে এটা খুবই সামান্য। আমাদের ওজনের ১০ লাখ ভাগের এক ভাগ মাত্র হালকা মনে হয়। এই পরিবর্তনের প্রভাব মানুষের ঘুমের ওপর পড়ার সম্ভাবনা খুবই কম।
কিন্তু চাঁদ অন্য উপায়ে আমাদের ঘুমের ব্যাঘাত ঘটাতে পারে। যুক্তরাষ্ট্রের কানেকটিকাটের ইয়েল ইউনিভার্সিটি, ওয়াশিংটন ডিসির ইউনিভার্সিটি অব ওয়াশিংটন এবং আর্জেন্টিনার দ্য ন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি অব কুইমসের একদল গবেষক ২০২১ সালে মানুষের ঘুম নিয়ে একটি গবেষণা চালান। গবেষণাটি নানা ধরনের পরিবেশে চালানো হয়। যুক্তরাষ্ট্রের সিয়াটল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা যেমন এর অংশ ছিলেন, তেমনি ছিলেন আর্জেন্টিনার প্রত্যন্ত গ্রামাঞ্চলের মানুষও। দেখা গেছে, বিদ্যুৎ থাকা বা না থাকার মতো বিষয়গুলো এক্ষেত্রে ফলাফলে কোনো ভূমিকা রাখছে না।
এই গবেষকদের মতে, চাঁদের দশা আমাদের ঘুমকে প্রভাবিত করে। তাঁদের ধারণা, চাঁদের আলোর তীব্রতা পরিবর্তনের ফলে আমাদের ঘুমের কিছুটা সমস্যা হয়। চাঁদের আলো তীব্র হলে এটি আমাদের শরীরের কর্টিসল ও মেলাটোনিন নামের দুটি হরমোন নিঃসরণে প্রভাব ফেলে।
এই হরমোন দুটি আমাদের সার্কাডিয়ান ছন্দ নিয়ন্ত্রণ করে। সার্কাডিয়ান ছন্দকে আক্ষরিক অর্থেই বলা যায় ‘দেহঘড়ি’। এটি আমাদের ঘুম নিয়ন্ত্রণ করে। সার্কাডিয়ান ছন্দ বদলে গেলে ঘুম আর স্বাভাবিক হয় না। ফলে চাঁদের কৃষ্ণপক্ষ থেকে শুক্লপক্ষের মাঝের সময়টিতে রাতে পুরুষদের ২১ মিনিট ও নারীদের ১২ মিনিটের মতো ঘুম কম হয়।
তবে সুইডেনের ইউনিভার্সিটি অব গোথেনবার্গের তিন গবেষক, মিখায়েল স্মিথ, ইলোনা ক্রয় ও কার্সটিন পারসন ওয়ে এ নিয়ে আরেকটি গবেষণা করেছেন। তাঁদের প্রকাশিত গবেষণাপত্রে উঠে এসেছে, পূর্ণ চাঁদরাতে মানুষের ঘুম প্রায় ২৫ মিনিট কম হয়। আর নতুন চাঁদের রাতে রেম স্লিপ, অর্থাৎ ঘুমের যে গভীর পর্যায়ে মানুষ স্বপ্নে দেখে, সে পর্যায়ে প্রবেশ করতে অন্য সময়ের চেয়ে গড়ে ৩০ মিনিট বেশি সময় লাগে। অর্থাৎ, মোটা দাগে বলা যায়, নতুন চাঁদ হোক বা পূর্ণ চন্দ্র, দুটোই মানুষের ঘুমে খানিকটা ব্যাঘাত ঘটায়।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।