জুমবাংলা ডেস্ক: রাজধানীতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হাতে উদ্বোধন হলো বহুল প্রতীক্ষিত মেট্রোরেলের। দেশের যোগাযোগ ব্যবস্থায় উন্নয়ন-অগ্রগতির আরেকটি মাইলফলক মেট্রোরেল। স্বপ্নের এই মেট্রোরেলের লোগো বানিয়েছেন নওগাঁর কৃতি সন্তান আলী আহসান নিশান। লোগো ছাড়াও মেট্রোরেলের স্টেশনগুলোতে থাকা সাইনগুলোও তার করা।
নিশানের বাড়ি নওগাঁ পৌরসভার ধামকুড়ি এলাকায়। বাবার নাম মৃত আব্দুস কুদ্দুস। তিনি ছিলেন যুদ্ধাহত বীর মুক্তিযোদ্ধা। সৈয়দপুরে রেলের লোকোমোটিভ ওয়ার্কসপের (ইঞ্জিন হল কারখানা) তত্ত্বাবধায়ক হিসেবে কাজ করতেন নিশানের বাবা।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদে গ্রাফিক ডিজাইন বিভাগ থেকে পাস করেন আলী আহসান নিশান। নিজের বানানো লোগো সম্পর্কে তিনি বলেন, এই লোগের মধ্যে তুলে ধরা হয়েছে পুরো বাংলাদেশকে। একটা লাল সূর্য উঠছে। নিচে বাংলার চিরচেনা সবুজের মাখামাখি। দুইয়ে মিলে বাংলাদেশ। মেট্রোর ‘এম’ অক্ষরটাও এমনভাবে বসানো মনে হবে যেন প্লাটফর্ম।
তিনি বলেন, রেলটির দিকে কিছুক্ষণ তাকালেই মনে হবে, ওটা স্থির নয়, ছুটে চলেছে। উন্নয়ন-অগ্রগতিতে বাংলাদেশের এগিয়ে যাওয়াকে ইঙ্গিত করছে ছুটে চলা রেল।
লোগো তৈরির পেছনের গল্প জানতে চাইলে নিশান বলেন, সম্প্রতি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পাস করে বেরিয়েছি। কোনো কাজ নেই। চলতি বছরের শুরুর দিকে একদিন বিভাগের এক শিক্ষকের কাছে যাই। তিনি আমাকে বললেন, মেট্রোরেলের লোগো নির্বাচনের জন্য প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হয়েছে। প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণকারীদের প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে জমা দিতে হবে। তুমি প্রতিযোগিতায় অংশ নাও। স্যারের আহ্বানে আমি তিনটি লোগো বানিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা বিভাগে জমা দিলাম। আরও অনেকেই লোগো বানিয়ে জমা দেন।
নিশান বলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পাঠানো তিনটি লোগোর মধ্যে আমার দুটো এবং অন্যজনের একটি পাঠানো হয়। এরপর জাতীয়ভাবে জমা হওয়া লোগোগুলোর মধ্যে থেকেও শর্টলিস্ট হয়। সেখান থেকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আমার লোগোটি চূড়ান্ত করেন।
লোগোর ব্যাখ্যা দিয়ে তিনি বলেন, বাংলাদেশের যে উন্নয়নের গতি, সেটা লোগোর দিকে তাকালে লক্ষ্য করা যাবে। সাধারণত লোগো স্থির প্রকৃতির হয়। এর রঙের ব্যবহারেও এক ধরনের ভারসাম্য রাখা হয় যেন চোখটা আটকে থাকে। কিন্তু এই লোগোতে সেটা ইচ্ছে করেই রাখা হয়নি। এতে এক ধরনের গতি আছে।
প্রতিযোগিতায় নিশানের বানানো লোগো নির্বাচিত হওয়ার পর তা নিয়ে আরও কয়েকবার কাজ করতে হয়েছে বলেও জানান নিশান। তিনি বলেন, এখন লোগোতে থাকা ‘এম’ অক্ষরটি লিখে যে প্লাটফর্ম বোঝানো হয়েছে, প্রথমে তা ছিল না। বিশ্বের ৩৫টি দেশে মেট্রোরেলের লোগোতে ‘এম’ রয়েছে। ওটাকে যুক্ত করার সময় একটু নতুনত্ব আনা হয়েছে। এ ছাড়া লোগো যখন বানানো শুরু করি, তখন মেট্রোরেল দেখতে কেমন সেটাও জানা ছিল না। তাই প্রথম যে রেলটা ব্যবহার করেছিলাম সেটি দেখতে বুলেট ট্রেনের মতো ছিল। পরে যখন মেট্রোরেলের ইঞ্জিন দেখলাম তখন কিছুটা পরিবর্তন করে দেওয়া হয়।
নিশান আরও বলেন, পুরো কাজ শেষ করতে ছয় মাসের মতো লেগেছে। চলতি বছরের মে মাসে যখন কাজটি শেষ হলো আমি ভীষণ উত্তেজিত ছিলাম। অনেক প্রতিষ্ঠানে লোগো করেছি, কিন্তু এতটা ভালোলাগা কাজ করেনি। বাংলাদেশের ইতিহাসের অংশ হওয়ার আনন্দ অবশ্যই অন্য রকম।
মেট্রোরেলের স্টেশনে যে সাইনগুলো থাকবে, সেগুলোও নিশানের করা। এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, সাইনের কাজ করতে গিয়ে দেশের সব স্তরের মানুষ যেন চিহ্নগুলো দেখেই বুঝতে পারেন যে, কোনদিকে যেতে হবে, টয়লেট কোনদিকে, টিকিট কোথায় পাবেন; এসব ভাবতে হয়েছে।
মেট্রোরেলের লোগো ও স্টেশনের সাইন বানানোর অনুভূতি প্রকাশ করে নিশান বলেন, দেশের মানুষ যে জিনিসগুলো ব্যবহার করবেন সেখানে যদি আপনার সম্পৃক্ততা থাকে, তাহলে সেটার একটা অন্য রকম অনুভূতি হবেই।
নিশানের লক্ষ্য আরও অনেক দূর এগিয়ে যাওয়া। ইতোমধ্যে নিশান বহু স্মৃতিফলকের সঙ্গে যুক্ত থেকেছেন। চারুকারুর নান্দনিকতায় নিজেকে মেলে ধরেছেন বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি কাজে। চাকরি নয়, নিজেই কিছু করার অদম্য স্পৃহা নিয়ে ছুটছেন এই তরুণ মেধাবী উদ্যোক্তা।
এ ব্যাপারে আলী আহসান নিশান বলেন, যুগ যুগ বেঁচে থাকার মতো কিছু করতে চাই। এখনও তেমন কিছু করতে পারিনি। পাশাপাশি যাপিত জীবনে নিজের গড়া প্রতিষ্ঠান নিয়ে মানুষের জন্য কিছু করতে চাই।
নিশান নিজেই গড়ে তুলেছেন একটি চারুকারু স্কুল। যেখানে শিশুরা এসে ছবি আঁকা শিখে। তাদের ছবি আঁকা নিশানকে প্রতিদিন অনুপ্রাণিত করে। নিশান অক্সিজেন পান নিজ কর্মস্পৃহায়।
মেট্রোরেলের লোগো বানিয়ে ইতিহাসের অংশ হওয়া নিশানকে নিয়ে গর্বিত নওগাঁর মানুষ। নওগাঁ পৌরসভার ধামকুড়ি এলাকার বাসিন্দা ও বাংলাদেশ মুক্তিযোদ্ধা সংসদ নওগাঁ জেলা ইউনিটের সাবেক কমান্ডার সিরাজুল ইসলাম বলেন, স্বপ্নের মেট্রোরেলের লোগো বানিয়েছে আমাদের গ্রামের সন্তান নিশান। দোয়া করি, ইতিহাসের অংশ হওয়ার মতো নিশান যেন আরও ভালো কাজ করতে পারে।
নওগাঁর সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠন একুশে পরিষদ নওগাঁর সভাপতি ডি এম আব্দুল বারী বলেন, নিশানের মধ্যে যে শিল্পী সত্ত্বা আছে, আশা করি ভবিষ্যতে তার আরও অনেক ভালো কাজ দেখতে পারব। তার দ্বারা দেশ ও জাতি উপকৃত হবে।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।