নিয়ান্ডারথালদের কথা আমরা প্রথম জানতে পারি ১৮৫৬ সালে। সেই সময় জার্মানির নিয়ান্ডার ভ্যালির খনিশ্রমিকেরা কাজ করছিলেন। এ সময় তাঁরা পুরোপুরি মানুষের খুলির মতো নয়, দেখতে অন্য রকম এক অদ্ভুত খুলির খোঁজ পান। নিয়ান্ডার উপত্যকায় পাওয়া গেছে বলে প্রত্নতত্ত্ববিদেরা এর নাম দিয়েছিলেন ‘হোমো নিয়ান্ডারথালেনসিস’। শুরুর দিকে গবেষকেরা নিয়ান্ডারথালদের বর্বর মনে করলেও ১৫০ বছরের বেশি প্রত্নতাত্ত্বিক ও জিনগত প্রমাণ এটা স্পষ্ট করেছে যে আমরা প্রথমে যা ভেবেছি, তারা এর চেয়ে বেশি উন্নত ছিল।
নিয়ান্ডারথালরা হাতিয়ার তৈরি করতে পারত। সম্ভবত তারা শিল্পকর্মেও দক্ষ ছিল। পালক বা গয়না দিয়ে শরীর সাজাত। কবর দিত মৃতদের। যোগাযোগের জন্য ভাষাও ব্যবহার করত, যদিও তা ছিল আধুনিক মানুষের চেয়ে আরও প্রাথমিক, আদিম ধরনের ভাষা। এ ছাড়া তারা উত্তর ইউরোপ ও সাইবেরিয়ার প্রতিকূল আবহাওয়ায় হাজার হাজার বছর ধরে টিকে থাকার কৌশল রপ্ত করেছিল।
রাশিয়া থেকে আইবেরিয়ান উপদ্বীপের অনেকগুলো জায়গায় প্রত্নতাত্ত্বিক প্রমাণ থেকে আমরা জানতে পারি, আধুনিক মানুষ ও নিয়ান্ডারথালরা ইউরোপে অনেক বছর ধরে একসঙ্গে বাস করেছিল। এরপরই তারা হারিয়ে যায়। ফলে আধুনিক মানুষ তাদের হত্যা করেছে কি না, সেই প্রশ্ন উঠেছে।
নিয়ান্ডারথালদের জীবন ও বিলুপ্তির গল্প বলতে গিয়ে ভিয়েনা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রত্নতত্ত্ববিদ টম হিগাম বলছেন, আধুনিক মানুষ ইউরোপের এমন অনেক জায়গায় এসেছিল, যেখানে কোনো নিয়ান্ডারথাল ছিল না। আবার এমন অনেক জায়গায় এসেছে, যেখানে নিয়ান্ডারথালরা ছিল। আধুনিক মানুষ তাদের সঙ্গে মিলেমিশে বসবাস করেছে। এখন আমরা এ–ও জানি, তাদের মধ্যে পারস্পরিক প্রজননও ঘটেছে।
সেই আন্তপ্রজননের প্রথম প্রমাণ মেলে ২০১০ সালে, একজন নিয়ান্ডারথালের জিনোম সিকোয়েন্স থেকে। এরপর জেনেটিক বা জিনগত বিশ্লেষণ থেকে আরও জানা যায়, ভৌগোলিক এলাকা ভাগের চেয়ে নিয়ান্ডারথাল ও আধুনিক মানুষ অনেক বেশি জিনগত সম্পর্ক গড়ে তুলেছিল। আজকের প্রত্যেক আধুনিক মানুষের শরীরেই কিছুটা নিয়ান্ডারথালের জিন রয়েছে। (এ গবেষণার জন্যই ২০২৩ সালে জীববিজ্ঞানে নোবেল পুরস্কার দেওয়া হয়েছে।)
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।