জুমবাংলা ডেস্ক : মাইগ্রেনের ফলে মাথার একদিকে তীব্র ব্যথা অনুভূত হয়। কখনও আবার এই ব্যথা মাথার দু’পাশেই তীব্রতর হয়ে ধরা দেয়। যার ফলে ঘন ঘন মুড সুইং যেমন হয়, তেমনি হতাশা আর একাকীত্ব ভর করে আক্রান্তের ওপর। এই ব্যথা টানা দুই থেকে তিন দিন ধরে চলতে পারে। এ কারণেই যারা মাইগ্রেনে ভোগেন তারা তাদের দৈনন্দিন জীবনযাপনে অনেক পরিবর্তন আনেন, খাবার-দাবাড়ের অভ্যাসে পরিবর্তন আনেন, যাতে করে মাইগ্রেন নিয়ে বসবাস কিছুটা সহজ হয়।
অনেকেই নিয়ম করে সকালের নাস্তা করেন কিংবা অনেকেই আবার কফি পানের অভ্যাস গড়ে তোলেন। আবার অনেকেই নিয়মিত ওষুধ খেয়ে থাকেন। তাই রমজান আসলে অনেকেই কিছুটা চিন্তায় পড়ে যান যে পরিবর্তিত রুটিনের সাথে কিভাবে তাল মিলিয়ে চলবেন। অনেকেই ব্যথা থেকে বাঁচতে রোজা এড়িয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিতেও বাধ্য হন।
নিউরোসার্জন ডা. আহমেদ আল-তামিমি বলেছেন, রমজানের সময় মাইগ্রেনের ব্যথা বেড়ে যাওয়া বা এতে আক্রান্ত হওয়ার সংখ্যাও বেড়ে যায়। এ কারণে এ সময় রোগীদের খাবার দাবার এবং জীবনযাত্রা সম্পর্কে সচেতন হতে হবে যাতে করে ব্যথা সহনীয় পর্যায়ে রাখা যায়।
অন্যদিকে পুষ্টিবিদ ফাতিন আল নাশাশ বলেছেন, রমজান শুরু হওয়ার আগে থেকেই যদি কিছু প্রস্তুতি নেওয়া যায় তাহলে রোজার সময় মাইগ্রেনের ব্যথা নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব।
রমজানে কিভাবে রোগীরা আক্রান্ত হতে পারেন?
অনেকেই এটা ভেবে চিন্তিত থাকেন, রোজার সময় যেকেনো মুহূর্তে মাইগ্রেনের ব্যথা শুরু হয়ে যেতে পারে এবং শুরু হলেও ওষুধ খেতে পারবেন না। আর এ কারণে ব্যথার তীব্রতা আরো বেশি বাড়তে পারে। ফলে তারা মাইগ্রেন অ্যাটাকে আক্রান্ত হওয়ার ভয়ে থাকেন।
নিউরো সার্জন ডা. আহমেদ আল-তামিমি বলেন, রমজানের সময় মাথাব্যথা হতে পারে দেহে পানি বা তরলের অনুপস্থিতির কারণে। রক্তে গ্লুকোজ ও ক্যাফেইনের পরিমাণ কমে যাওয়ার কারণে রক্তচাপও কমে যেতে পারে। আর এ কারণে দেখা দিতে পারে মাথাব্যথা।
চিকিৎসকরা বলেন, সেহরিতে যদি ওষুধ খাওয়া যায়, ইফতারের পর প্রচুর পরিমাণে তরল পান করা হয় তাহলে তা বিকল্প হতে পারে। একই সাথে বেশি রাত না জেগে পর্যাপ্ত পরিমাণ ঘুমাতে হবে।’
একজন মাইগ্রেন আক্রান্ত রোগীর জন্য সকালে উঠে কিছু না খাওয়াটাও ক্ষতিকর হতে পারে।
পুষ্টিবিদ ফাতিন আল নাশাশ বলেন, সকালের এই খাবার শরীরে গ্লুকোজের পরিমাণ ধরে রাখার জন্য গুরুত্বপূর্ণ। তবে এর কারণে মাইগ্রেন অ্যাটাক হওয়ার আশঙ্কা নেই। এটি রোধ করতে স্বাস্থ্যকর খাবার খাওয়াটা জরুরি। রমজানের শুরুর কয়েকটা দিন মাইগ্রেন আক্রান্তদের জন্য কিছুটা কষ্টকর হয় খাবার-দাবার ও জীবনযাপনে হঠাৎ করে পরিবর্তন আসার কারণে।
মাইগ্রেন আক্রান্তরা কিভাবে প্রস্তুতি নেবেন?
মাইগ্রেন আক্রান্তদের জন্য রমজান শুরুর আগে কিভাবে প্রস্তুতি নেওয়া যেতে পারে সে বিষয়ে বেশ কিছু পরামর্শ দিয়েছেন পুষ্টিবিদ আল-নাশাশ। তিনি বলেন, কফি এবং এ ধরনের উদ্দীপক খাবার ধীরে ধীরে কমিয়ে আনতে হবে। যাতে করে রমজানের সময় দেহে এদের উপস্থিতি কমে গেলেও সমস্যা না হয়। রমজান শুরুর আগে থেকে দিনের বেলা প্রধান খাবারের মাঝামাঝি সময়ে ছোটখাট কোনো খাবার বা নাস্তা না করা থেকে বিরত থাকতে হবে। পর্যাপ্ত পরিমাণ পানি পান করতে হবে যাতে দেহে পানিশূন্যতা তৈরি না হয়। একই সাথে রমজানের সাথে মানিয়ে নিতে পর্যাপ্ত পরিমাণ ঘুমানোটাও দরকারি।
ঋতুস্রাবের সময় নারীদের প্রচুর পরিমাণ ম্যাগনেসিয়ামযুক্ত খাবার খাওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়। এতে করে রক্তবাহী শিরা-উপশিরা শিথিল থাকে। একই সাথে বিভিন্ন ধরনের শাক-সবজি এবং স্বাস্থ্যকর ফ্যাটি অ্যাসিডযুক্ত মাছ খাওয়া যেতে পারে।
যদি কেউ মনে করে যে তার মাথাব্যথা হতে পারে, তাহলে যেসব খাবার খেলে তার মাথাব্যথা হয়, সেহরি ও সকালের নাস্তায় সেসব খাবার এগিয়ে চলার পরামর্শ দিয়েছেন তিনি। যেমন চকলেট, পনিরসহ দুগ্ধজাতীয় খাবার ইত্যাদি।
এর পরিবর্তে কার্বোহাইড্রেট বা শর্করা জাতীয় খাবার খাওয়া যেতে পারে। এর মধ্যে রয়েছে রুটি, শিম, ছোলা, ওটস ও যব দিয়ে বানানো রুটি, আঁশ সমৃদ্ধ খাবার, খেজুর, কলা এবং পটাসিয়াম রয়েছে এমন সব শাক-সবজি।
মাইগ্রেন বিষয়ক যুক্তরাজ্য ভিত্তিক দাতব্য সংস্থা দ্য মাইগ্রেন ট্রাস্ট এর তথ্য অনুযায়ী, কারো যদি মাইগ্রেন থাকে এবং এরপরও যদি তিনি রোজা রাখার প্রস্তুতি নিতে চান তাহলে তাকে যেসব বিষয় খেয়াল রাখতে হবে তা হচ্ছে-
১. ওষুধ
মুখে ওষুধ খেলে রোজা ভেঙে যেতে পারে। এর কারণে রোজা শুরুর আগেই চিকিৎসকের সাথে পরামর্শ করে নিতে হবে। তাহলে তিনি আপনাকে নির্দেশনা দিতে পারবে যে, আপনি চিকিৎসা নিচ্ছেন তার আওতায় আপনি রোজা রাখতে পারবেন কিনা। আর রাখলেও আপনি কখন ওষুধ খাবেন। এক্ষেত্রে সেহেরির সময় ওষুধ খাওয়ার পরামর্শ দেয়া হতে পারে।
তবে সেটিও রমজানের কমপক্ষে একমাস আগে থেকে শুরু করতে হবে যাতে শরীর এর সাথে মানিয়ে নেয়ার পর্যাপ্ত সময় পায়। এছাড়া মুখে খাওয়ার ওষুধের পরিবর্তে মাইগ্রেনের আরো অনেক ধরনের ওষুধ রয়েছে। সেগুলোও আপনাকে দেয়া হতে পারে। তবে এসবের আগে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।
২. ক্যাফেইন
যারা নিয়মিত ক্যাফেইন গ্রহণ করে থাকেন তাদের মনে হতে পারে যে, হঠাৎ করে ক্যাফেইন নেয়া বন্ধ করে দিলে হয়তো মাইগ্রেনের ব্যথা শুরু হতে পারে। আপনি যদি প্রচুর পরিমাণে কফি, চা বা কোকা-কোলা খেলে অভ্যস্ত হয়ে থাকেন তাহলে রমজানের সময় তা বন্ধ করে দিলে মাইগ্রেনের মাথাব্যথা আরো খারাপ হতে পারে। এর জন্য বিকল্প হচ্ছে, রমজান শুরুর আগে থেকেই ধীরে ধীরে ক্যাফেইন গ্রহণ বন্ধ করে দিতে হবে।
ধীরে ধীরে কমানোর ফলে এটি মাইগ্রেনের তীব্র ব্যথা হওয়ার আশঙ্কা কমিয়ে আনবে। এতেও কাজ না হলে রোজা শুরুর আগে অর্থাৎ সেহরিতে আপনি কিছু পরিমাণ ক্যাফেইন গ্রহণ করতে পারেন। তবে এর সাথে প্রচুর পরিমাণ পানি পান করতে ভুলবেন না।
৩. পানিশূন্যতা
সারাদিন রোজা রাখার পর পানিশূন্যতা পূরণ করাটা চ্যালেঞ্জিং হতে পারে। তাই এটি পূরণে রোজা ভাঙার পর ইফতারির পর প্রচুর তরল খেতে ভুলবেন না। একইভাবে সেহরিতেও পর্যাপ্ত তরল খাবার গ্রহণ করুন। মিষ্টি জাতীয় পানীয় গ্রহণ থেকে বিরত থাকুন। কারণ এটি আপনার পানির পিপাসা আরো বাড়াবে।
৪. খাবারের সময়ে পরিবর্তন
ঠিক সময়ে খাবার না খেলে যদি আপনার মাইগ্রেনের ব্যথা শুরু হয় তাহলে ভোর থেকে সারাদিন না খেয়ে থাকা নিয়ে হয়তো আপনি দুশ্চিন্তায় পড়তে পারেন। এটি কাটাতে সেহরিতে ভরপেট খাবার খান।
বিশেষ করে উচ্চ প্রোটিন যুক্ত খাবার যেমন মাংস, মাছ, ডিম, বাদাম ও বিভিন্ন ধরনের বীজ, পূর্ণ আঁশযুক্ত শর্করা জাতীয় খাবার যেমন বাদামী চাল, ওটস বা পূর্ণ আঁশযুক্ত রুপি খেতে পারেন। যতটা সম্ভব প্রক্রিয়াজাত খাবার বিশেষ করে যাতে বেশি পরিমাণ চিনি থাকে তা এড়িয়ে চলার চেষ্টা করুন।
৫. ঘুম
রমজানে যদি আপনার ঘুমের নিয়মে বেশি ব্যাঘাত ঘটে যেমন, এর জন্য যদি আপনাকে অনেক আগে-ভাগে ঘুম থেকে জেগে উঠতে হয় তাহলে মাইগ্রেনের ব্যথা শুরু হওয়ার একটা আশঙ্কা থাকে। এটি এড়াতে এবং আপনার শরীরকে অভ্যস্ত করে তুলতে রমজান আসার আগে থেকেই এই সময়ে অ্যালার্ম দিয়ে একই সময়ে ঘুম ভাঙানোর চেষ্টা করতে পারেন।
এ ছাড়া রমজানে একই সময়ে ঘুমাতে যাওয়া এবং একই সময়ে ঘুম ভাঙার অভ্যাস গড়ে তুললে তাও মাইগ্রেন এড়াতে সহায়ক হতে পারে।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।