আন্তর্জাতিক ডেস্ক : জাপানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী শিনজো আবেকে গুলি করার ঘটনা ছড়িয়ে পড়তেই প্রশ্ন উঠতে থাকে, শান্তিপ্রিয় ও কঠোর আগ্নেয়াস্ত্র আইনের দেশটিতে কীভাবে এমন ঘটনা ঘটতে পারে।
শিনজো আবে সাবেক প্রধানমন্ত্রী হলেও জাপানের জনজীবনে এখনও বেশ প্রভাব রয়েছে তার। তিনিই সম্ভবত গত তিন দশকে দেশটির সবচেয়ে পরিচিত রাজনীতিবিদ। তাই কে তাঁকে হত্যা করতে চাইবে, কেনই বা চাইবে সে প্রশ্ন ওঠা স্বাভাবিক।
সহিংস অপরাধের ঘটনা খুব একটা না থাকায় জাপানের মানুষ নিরাপত্তা নিয়ে সাধারণত উদ্বিগ্ন থাকে না। ইয়াকুজা নামের এক সহিংস গোষ্ঠী অবশ্য আছে। কিন্তু খুব মানুষকেই তাদের মুখোমুখি হতে হয়েছে। এমনকি ইয়াকুজারা বন্দুক থেকে দূরে থাকে। কারণ কোন অবৈধ জিনিস রাখার শাস্তি জাপানে খুব বেশি।
জাপানে আগ্নেয়াস্ত্র রাখার অনুমোদন পাওয়াও খুব কষ্টকর। কেউ বন্দুক রাখতে চাইলে আগে তাঁর অপরাধের নজির আছে কিনা ও আবেদনের কারণ কী তা যাচাই করা হয়। আবেদনকারীকে বাধ্যতামূলক প্রশিক্ষণ, মনস্তাত্ত্বিক মূল্যায়নের মধ্য দিয়ে যেতে হয়। এছাড়া তাঁর প্রতিবেশীদেরও পুলিশ জিজ্ঞাসাবাদ করে থাকে।
আগ্নেয়াস্ত্রের মালিকানা খুব কম বলে জাপানে বন্দুক হামলাও নেই বললেই চলে। দেশটিতে প্রতিবছর গড়ে মাত্র ১০ জন বন্দুক হামলায় নিহত হয়। ২০১৭ সালে নিহতের সংখ্যা ছিল মাত্র তিন।
এ কারণেই শিনজো আবের ওপর হামলা সম্পর্কে এত বেশি আলোচনা হচ্ছে। জাপানের মিডিয়া জানিয়েছে, ৪১ বছর বয়সী হামলাকারী দেশটির সেনাবাহিনীর সমমানের প্রতিরক্ষা বাহিনীর প্রাক্তন সদস্য। তিনি তিন বছর নৌবাহিনীতে কাটিয়েছেন। তাঁর ব্যবহূত বন্দুক আরও বেশি কৌতুহলের জন্ম দিয়েছে। হামলার ঘটনার ছবিগুলো দেখে বন্দুকটিকে মনে হয় নিজ হাতে তৈরি করা।
তাই প্রশ্ন উঠছে এটা কি কোন রাজনৈতিক আক্রমণ নাকি একজন হুজুগে লোকের কাজ, যে স্রেফ বিশিষ্ট কাউকে গুলি করে বিখ্যাত হতে চেয়েছিল? এ প্রশ্নে উত্তর তাত্ক্ষণিকভাবে পাওয়া যায়নি।
জাপানে রাজনৈতিক হত্যাকাণ্ডের ইতিহাস আছে। সবচেয়ে আলোচিত ছিল ১৯৬০ সালে সোশালিস্ট পার্টির নেতা ইনেজিরো আসানুমার হত্যাকাণ্ড। তাঁকে সামুরাই তলোয়ার দিয়ে আঘাত করেছিল এক উগ্র ডানপন্থী। এখনো জাপানে ডানপন্থী চরমপন্থীরা থাকলেও আবের মতো ডানপন্থী জাতীয়তাবাদী তাদের লক্ষ্যবস্তু হওয়ার কথা নয়।
সাম্প্রতিক সময়ে জাপানে এক ভিন্ন রকমের অপরাধ বেড়ে গেছে। তা হলো কারো বা কিছু বিষয়ের ওপর ক্ষুব্ধ শান্ত, নিঃসঙ্গ পুরুষদের ঘাতক হয়ে ওঠা। ২০১৯ সালে এক ব্যক্তি জাপানের কিয়োটাতে একটি জনপ্রিয় অ্যানিমেশন স্টুডিও ভবনে আগুন লাগিয়ে ৩৬ জনকে হত্যা করে। এমন ভয়ঙ্কর কাণ্ডের পেছনের কারণ হিসেবে সে লোকটি বলেছিল, ওই স্টুডিও তাঁর ‘কাজ চুরি করেছে’।
এর আগে ২০০৮ সালে এক যুবক টোকিওর আকিহাবারা এলাকায় বাজারে ক্রেতাদের ভিড়ের মধ্যে একটি ট্রাক চালিয়ে দেয়। তারপর ট্রাক থেকে বেরিয়ে এসে ছুরিকাঘাত শুরু করে। এ ঘটনায় সাতজন নিহত হয়। হামলা চালানোর আগে যুবকটি অনলাইনে একটি বার্তা পোস্ট করে বলেছিল, ‘আমি আকিহাবারায় মানুষজনকে মেরে ফেলব। আমার কোন বন্ধু নেই। কারণ আমি কুিসত। আমি আবর্জনার চেয়েও নিচু স্তরের। ’
ওপরের ঘটনাগুলো জাপানের জনজীবনে বড় কোনো পরিবর্তন আনেনি।
তবে অনুমান করা হচ্ছে, হত্যার কারণ যাই হোক না কেন শিনজো আবের ঘটনা জাপানকে চিরতরে বদলে দিতে পারে। দেশটিতে নিরাপত্তা ব্যবস্থা এখন পর্যন্ত খুবই শিথিল। জাপানের নির্বাচনী প্রচারণায় রাজনীতিবিদরা রাস্তাঘাটে দািঁড়য়ে বক্তৃতা দেন এবং সাধারণ মানুষের সঙ্গে হাত মেলান। এজন্যই আবের হত্যাকারী এত সহজে তাঁর কাছে গিয়ে বন্দুক বের করতে পেরেছিল। অবশ্যই দেশটিতে আগামী দিনে এমন সুযোগ থাকবে না। নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে কঠোর হয়ে উঠবে জাপান। সূত্র: বিবিসি।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।