স্পোর্টস ডেস্ক: কিংবদন্তি মুষ্টিযোদ্ধা মোহাম্মদ আলি। তাকে চেনেন না এমন মানুষ খুব কমই হয়তো খুঁজে পাওয়া যাবে। ক্রীড়া জীবনের শুরুর দিকেই কিংবদন্তি মুষ্টিযোদ্ধা মোহাম্মদ আলী রিংয়ের ভেতরে ও বাইরে অনুপ্রেরণাদায়ী ব্যক্তি হিসেবে পরিচিত ছিলেন। স্পোর্টস ইলাস্ট্রেটেড তাকে শতাব্দীর সেরা খেলোয়াড় ও বিবিসি তাকে শতাব্দীর সেরা ক্রীড়াব্যক্তিত্ব হিসেবে সম্মানিত করেছে। খ্রিষ্টান ধর্ম ছেড়ে ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেন মোহাম্মদ আলি।
তার ধর্মান্তরিত হওয়ার সিদ্ধান্ত তার ব্যক্তি ও কর্মজীবনে রেখেছে সুদূরপ্রসারী প্রভাব। আমেরিকান মুসলমানদের কাছে তিনি হয়ে ওঠেন আইকন। তবে কিংবদন্তি মুষ্টিযোদ্ধা মোহাম্মদ আলির ইসলাম ধর্মে ধর্মান্তরিত হওয়া নিয়ে রয়েছে অনেক জল্পনা। ঠিক কী কারণে তিনি ইসলাম গ্রহণ করেছিলেন এমন অনেক প্রশ্ন। আর সেটার অবশ্য খানিকটা উত্তর মিলেছে আলির লেখা এক চিঠি এবং বিভিন্ন সময়ে দেওয়া তার বক্তব্য।
সময়টা ১৯৬৪ সাল। মাত্র কয়েক বছর আগেই ধর্মান্তরিত হন তিনি। হঠাৎই একদিন তুচ্ছ ব্যাপারে স্ত্রীর সঙ্গে ঝগড়ায় জড়িয়ে পড়েন আলি। স্ত্রী বেলিন্ডার ভাষায়, তর্কের এক পর্যায়ে নিজের ওপর নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলেছিলেন আলি। মানবিকতা আর বিনয়ের সব চিহ্ন যেন তার ভেতর থেকে হারিয়ে যাচ্ছিল। অনেকটা সর্বশক্তিমানের মতো আচরণ করছিলেন তিনি। এমন পরিস্থিতির মুখে বেলিন্ডা তাকে বললেন, “তুমি নিজেকে সর্বশ্রেষ্ঠ বলতে পারো, কিন্তু তুমি কখনই আল্লাহ’র চেয়ে বড় হতে পারবে না।” এরপর আলিকে শান্ত হয়ে বসতে বললেন বেলিন্ডা; সেইসঙ্গে একটি চিঠিও লিখতে বললেন। কেন তিনি মুসলিম হলেন সে সম্পর্কে তাকে লিখতে বলেছিলেন বেলিন্ডা।
আলি বাধ্য ছেলের মতো বসলেন, কয়েক টুকরো সাদা কাগজ এবং একটি নীল রঙের কলম বের করে লিখতে শুরু করলেন। মোহাম্মদ আলি কেন ইসলাম গ্রহণ করেছিলেন, সেই ব্যাখ্যা বেলিন্ডার জন্য লেখা ওই চিঠিতেই পাওয়া যায়। ইসলামের প্রতি আলি কেন আকৃষ্ট হয়েছিলেন, তার কোনো আধ্যাত্মিক ব্যাখ্যা চিঠিতে নেই। বরং বাস্তবতার আলোকেই বিষয়টি ব্যাখ্যা করেছেন তিনি। তিনি জানান, পত্রিকার এক কার্টুন তার বিবেককে জাগিয়ে তুলেছিল। তিনি উপলব্ধি করতে পেরেছিলেন, খ্রিষ্টধর্ম তার পছন্দ নয়। পত্রিকায় প্রকাশিত কার্টুনটিতে ছিল এক শ্বেতাঙ্গ মালিক তার কৃষ্ণাঙ্গ দাসকে মারধর করছেন এবং যিশুর কাছে প্রার্থনা করার জন্য তাকে বাধ্য করছেন। শ্বেতাঙ্গরা তাদের দাসদের ওপর খ্রিষ্টধর্ম চাপিয়ে দিচ্ছে জোর করে। ওই কার্টুন ছবিটিই আলির মনে দাগ কেটেছিল।
এছাড়াও নিজের নাম সম্পর্কে আলি একবার বলেছিলেন, “ক্যাসিয়াস ক্লে একটি দাসত্ব বোধক নাম। আমি তা ঠিক করিনি এবং রাখতেও চাই না। আমি মোহাম্মদ আলি; একটি স্বাধীন নাম- এর অর্থ সৃষ্টিকর্তার প্রিয়; এবং আমি চাই মানুষ যখন আমার সঙ্গে বা আমার সম্পর্কে কথা বলবেন, সবাই এই নামটিই ব্যবহার করুন।” ১৯৬৪ সালে ২২ বছর বয়সে বিশ্ব হেভিওয়েট চ্যাম্পিয়নশিপ জিতে নেওয়ার পর, তিনি জনসমক্ষে নিজের খ্রিষ্টধর্ম ত্যাগ, ইসলাম গ্রহণ ও নিজের স্বাধীনতার ঘোষণা দেন। পরবর্তী বছরগুলোতে আলি তার ধর্মীয় দৃষ্টিভঙ্গি অন্বেষণ করতে থাকেন। যদিও সবসময় তার দর্শন স্পষ্ট ছিল না।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।