আন্তর্জাতিক ডেস্ক: সুপারমার্কেটের তাকগুলো একের পর এক খালি হয়ে গেছে। খাবার সরবরাহ করতে পারছে না রেস্তোরাঁগুলোও। পর্বতসম ঋণের চাপে দেউলিয়ার মুখে থাকা শ্রীলংকার খুব সাধারণ দৃশ্য এটি। তবে এ পরিস্থিতি ব্যবহৃত গাড়ি ব্যবসায়ীদের জন্য সৌভাগ্য হয়ে দেখা দিয়েছে। দেশটিতে ঘাটতির কারণে একটি ব্যবহৃত গাড়িও জনপ্রিয় অঞ্চলে একটি বাড়ির চেয়ে বেশি দামি হয়ে উঠেছে। খবর ইয়াহু ফাইন্যান্স।
২ কোটি ২০ লাখ জনসংখ্যার শ্রীলংকা দেউলিয়া হওয়ার দ্বারপ্রান্তে পৌঁছেছে। ক্রমবর্ধমান মূল্যস্ফীতি সব পণ্যের দামই রেকর্ড উচ্চতায় ঠেলে দিয়েছে। পাশাপাশি সরকার খাদ্য, ওষুধ ও জ্বালানি কেনার জন্য প্রয়োজনীয় ডলার সাশ্রয় করতে অতিপ্রয়োজনীয় নয় এমন আমদানি সংকুচিত করেছে। এতে দেশটিতে গাড়ি আমদানি বন্ধ হয়ে গেছে। দুই বছর ধরে চলা এ নিষেধাজ্ঞায় গাড়ির দাম লাফিয়ে লাফিয়ে বেড়েছে। এ অবস্থায় ব্যবহূত গাড়ি কিনতেও বিশ্বের সর্বোচ্চ দাম দিতে বাধ্য হচ্ছেন মরিয়া ক্রেতারা।
কয়েক সপ্তাহ ধরে কলম্বোর উপকণ্ঠে বিক্রয় কেন্দ্রগুলোয় ঘুরছেন অ্যান্টনি ফার্নান্দো। তিনি বলেন, মেয়ের জন্য প্রায় এক বছর ধরে একটি সাশ্রয়ী মূল্যের গাড়ি কেনার চেষ্টা করছি। প্রথমে ভেবেছিলাম, দাম কিছুটা হলেও কমবে। তবে এখন দেখছি অপেক্ষা করার কারণে আরো বেশি দাম দিতে হচ্ছে। বর্তমানে গাড়ির দাম সাধারণ মানুষের নাগালের বাইরে চলে গেছে।
In this picture taken on January 10, 2022, customers look at cars displayed for sale at a car dealership in Malabe, in the district of Colombo. – Supermarket shelves are bare and restaurants can’t serve meals, but Sri Lanka’s economic crisis is a bonanza for used car dealers, with vehicle shortages pushing prices higher than a house in a nice area. (Photo by ISHARA S. KODIKARA / AFP) / TO GO WITH SriLanka-economy-transport-auto,FOCUS
পাঁচ বছরের পুরনো একটি টয়োটা ল্যান্ড ক্রুজারের জন্য অনলাইনে ৬ কোটি ২৫ লাখ রুপি দাম হাঁকা হয়েছে। গাড়িটির দাম আমদানি বন্ধ হওয়ার আগের তুলনায় তিন গুণ। এ অর্থ কলম্বোর মধ্যবিত্ত অধ্যুষিত এলাকায় একটি বাড়ি কিংবা শহরে একটি নতুন বিলাসবহুল ফ্ল্যাট কেনার জন্য যথেষ্ট।
রাজধানীর সবচেয়ে বড় ডিলারশিপের মালিক শরৎ ইয়াপা বান্দারা বলেন, একটি গাড়ি ও একটি বাড়ি সাফল্যের প্রতীক। তাই বেশির ভাগ মানুষ উচ্চদামেও এগুলো কিনতে ইচ্ছুক।
কলম্বোর ট্রাফিকপূর্ণ রাস্তায় গাড়ির মালিকানার বিষয়টি খুব প্রয়োজনীয় হিসেবেই দেখছেন স্থানীয়রা। কারণ দেশটির রেল ও বাস নেটওয়ার্কেরও বিপুল চাহিদা রয়েছে। প্রতিদিন হাজার হাজার মানুষ ভিড় ঠেলে গণপরিবহনগুলোয় যাতায়াত করে। ব্যক্তিগতভাবে ব্যবহারের জন্য দেশটির ট্যাক্সির সংখ্যা দ্রুত কমে গেছে। অনেকেই বড় অংকের অর্থের বিনিময়ে সেগুলো বিক্রি করে দিয়েছেন। তবে এখনো যারা ট্যাক্সিচালক হিসেবে কাজ করছেন, তারাও চাহিদার সুযোগে ভাড়া দ্বিগুণ করে দিয়েছেন।
কভিড-১৯ মহামারী শ্রীলংকার অর্থনৈতিক অবস্থাকে আরো পঙ্গু করে দিয়েছে। কভিডজনিত বিধিনিষেধে মুখ থুবড়ে পড়েছে দেশটির পর্যটন খাত। পাশাপাশি বন্ধ হয়ে গেছে প্রবাসী আয়ও। ফলে দেশটি ভয়াবহ ডলার সংকটে পড়ে। এ অবস্থায় বিদেশী মুদ্রা সাশ্রয় করতে ২০২০ সালের মার্চে সরকার নতুন গাড়িসহ আমদানিতে একটি বিস্তৃত নিষেধাজ্ঞা জারি করে। যদিও কলম্বোর এ নীতি ডলার সংরক্ষণে খুব বেশি কাজে আসেনি। পরিবর্তে দেশটির নাগরিকরা গুরুত্বপূর্ণ পণ্য পেতে লড়াই করছে।
খুচরা বিক্রেতারা চাল সরবরাহ চালু রাখতে পারলেও রেস্তোরাঁগুলো বন্ধ হয়ে গেছে। কারণ সেগুলো রান্নার গ্যাস পাচ্ছে না। চাহিদার সঙ্গে সংগতি রেখে ফসল ফলানোর মতো সারও পাচ্ছেন না কৃষক।
বিশ্লেষকরা সতর্ক করছেন, শিগগিরই শ্রীলংকা ঋণখেলাপি হতে পারে। যদিও সরকারের পক্ষ থেকে প্রতিশ্রুতি পূরণের আশা দেখানো হচ্ছে। সম্প্রতি দেশটি চীনকে ঋণ পুনর্গঠনের আহ্বান জানিয়েছে।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।