এখন পর্যন্ত বিজ্ঞানীরা দশ লাখের বেশি প্রাণিপ্রজাতি শনাক্ত করে নামকরণ করেছেন। তবে পৃথিবীর ৭টি মহাদেশে এখনো আরও লাখ লাখ প্রাণী রয়েছে, যা আমরা শনাক্ত করতে পারিনি। অনাবিষ্কৃত এসব প্রাণীর মধ্যে থেকেই মাঝেমধ্যে বিজ্ঞানীরা নতুন প্রজাতির প্রাণী খুঁজে পান। কিন্তু যেসব প্রজাতি শনাক্ত করা গেছে, সেগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি প্রজাতির প্রাণী রয়েছে কোন মহাদেশে?
শত শত বছর ধরে বিজ্ঞানীরা বিশ্বজুড়ে বিভিন্ন প্রাণিপ্রজাতি তালিকাভুক্ত করেছেন। সেই সঙ্গে হিসাব রেখেছেন, ওসব প্রাণীর কোনটি পৃথিবীর কোন অঞ্চলে রয়েছে। এ সম্পর্কে ব্রাজিলের ফেডারেল ইউনিভার্সিটি অব মাতো গ্রোসোর পাখিবিদ ভিতর পিয়াচেন্তিনি বলেন, ‘আধুনিক যুগের আগে প্রজাতির এসব হিসাব ও তথ্য শুধু জাদুঘর থেকে আসত। তবে এখন সাধারণ মানুষও এতে অবদান রাখছেন।’
ফলে বোঝাই যাচ্ছে, বিজ্ঞানীদের পাশাপাশি সাধারণ মানুষও বিভিন্ন তথ্য দিয়ে সাহায্য করছেন। আর বিজ্ঞানী ও সাধারণ মানুষের যুগ্ম এ প্রচেষ্টায় সংগৃহীত সব তথ্য ব্যবহার করে একটা মানচিত্র তৈরি করার প্রস্তাব দিয়েছেন পিয়াচেন্তিনি। তবে ঠিক এরকম একটা কাজ ১৯৮০-এর দশকে করে গেছেন বিজ্ঞানী নরম্যান মায়ার্স।
পৃথিবীর কোন অঞ্চলে সবচেয়ে বেশি প্রাণী আছে, তা বোঝাতে ‘হটস্পট’ শব্দটি ব্যবহার করেছেন তিনি। পৃথিবীর যেখানে বেশি বেশি প্রাণী বাস করে, সেসব জায়গায়কে তিনি বলেছেন হটস্পট। এরকম ৩৬টি হটস্পটের কথা তিনি লিখে গেছেন, যার বেশির ভাগই রয়েছে উষ্ণ ও আর্দ্র জলবায়ুর মহাদেশগুলোতে।
যুক্তরাষ্ট্রের স্ট্যানফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশবিদ বারনাবাস দারো অবশ্য বলছেন, প্রাণীর সঙ্গে সঙ্গে উদ্ভিদের মানচিত্রও তৈরি করতে হবে। কারণ অনেক প্রাণীই উদ্ভিদের ওপর নির্ভর করে। গাছপালা সব ধরনের পরিস্থিতিতে বাঁচতে পারে বটে, তবে বেশির ভাগ গাছপালাই উষ্ণ ও আর্দ্র জায়গায় বেশি বাঁচে।
পাশাপাশি পোকামাকড় উষ্ণ অঞ্চলে বেশি স্বচ্ছন্দে থাকে। কারণ, সেখানে প্রাণীরা নিজেদের দেহের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারে। কোনো অঞ্চলে গাছপালা বেশি থাকা মানে সেখানে বেশি পোকামকড়-জাতীয় প্রাণী থাকবে। কারণ ওগুলো গাছের পরাগায়নে সাহায্য করে।
আবারও মূল প্রশ্নে ফেরা যাক। কোন মহাদেশে সবচেয়ে বেশি প্রাণিপ্রজাতি রয়েছে। বেশির ভাগ বিজ্ঞানী সম্মত হয়েছেন যে দক্ষিণ আমেরিকায় রয়েছে সবচেয়ে বেশি প্রাণিপ্রজাতি। এই মহাদেশে রয়েছে ব্রাজিল, কলম্বিয়া, আর্জেন্টিনা, পেরু, ভেনেজুয়েলা, চিলি, ইকুয়েডর ও বলভিয়ার মতো দেশ। এই মহাদেশেই রয়েছে আমাজন রেইন ফরেস্ট।
সব মিলে কমপক্ষে ৪০ হাজার প্রজাতির গাছ, ১০ হাজার প্রজাতির পোকামাকড়, ১ হাজার ৩০০ প্রজাতির পাখি, ৩৭৮ প্রজাতির সরীসৃপ ও ৪২৭ প্রজাতির স্তন্যপায়ী এবং ৪০০ প্রজাতির বেশি উভচর প্রাণী রয়েছে এ মহাদেশে। এগুলো সব আমাদের শনাক্ত করা প্রাণী। কিন্তু এর বাইরেও নাম না জানা কত হাজার হাজার প্রজাতির প্রাণী যে রয়েছে, তার কোনো হিসাব নেই। আমাজনের বাইরেও এই মহাদেশে রয়েছে আরও অনেক বন, যেখানে প্রাণীরা অবাধে বিচরণ করতে পারে।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।