রংপুর প্রতিনিধি: উত্তরের জেলা রংপুরের জনপ্রিয় ও বিখ্যাত হাড়িভাঙ্গা আম এবার পাড়ি জমাবে বিদেশেও। ভারত, ভুটান, শ্রীলংকা, সিঙ্গাপুর ও মালয়েশিয়াতে আমটি রপ্তানি করার সব ধরনের প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর।
রংপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের অতিরিক্ত পরিচালক মো. মাহবুবার রহমান জানান, রংপুরের মিঠাপুকুর উপজেলা থেকে এবার প্রথমবারের মতো এই আমটি রপ্তানি হবে।
তিনি বলেন, এতদিন বাংলাদেশ থেকে ল্যাংড়া, ফজলি, হিমসাগর এবং আশ্বিনা জাতের আম রপ্তানি হতো। আম্রপালি এবং ব্যানানা ম্যাংগোও বিদেশে রপ্তানি শুরু হয়েছে। রপ্তানির তালিকায় এ বছর যুক্ত হচ্ছে হাড়িভাঙ্গা আম।
বাংলাদেশ থেকে সাধারণতঃ ইউরোপ ও মধ্য প্রাচ্যের দেশগুলোতে আম রপ্তানি হয়ে থাকে। যুক্তরাষ্ট্রেও বাংলাদেশের আমের চাহিদা রয়েছে।
গত বছর ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিসহ বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্র ও সরকার প্রধানকে হাড়িভাঙ্গা আম উপহার পাঠিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। রংপুরের বিখ্যাত হাড়িভাঙ্গা আম উপহার হিসেবে পেয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ধন্যবাদ জানিয়ে চিঠিও দিয়েছিলেন বিভিন্ন দেশের সরকার ও রাষ্ট্রপ্রধানরা।
রংপুরে হাড়িভাঙ্গা আমের ফলন হচ্ছে প্রায় ৩০ বছর ধরে। কিন্তু দেশে এই আমের তেমন একটা পরিচিতি ছিল না। ২০১৫ সালে ঢাকায় অনুষ্ঠিত জাতীয় ফল মেলায় আশা দর্শনার্থীরা আমটির প্রথম পরিচয় পায়। এরপর থেকে আমটির সুনাম ছড়িয়ে পড়ে সারাদেশে।
বুধবার (১৫ জুন) থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে হাঁড়িভাঙা আম বাগান থেকে নামানো শুরু হয়েছে। বৃহস্পতিবার (১৬ জুন) থেকে বাজারে বিক্রি শুরু হয়েছে। এরই মধ্যে দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে আড়তদাররা ভিড় করেছেন রংপুরের মিঠাপুকুর উপজেলার খোড়াগাছ ইউনিয়নের পদাগঞ্জ এলাকায়। হাঁড়িভাঙা আমের জন্য খ্যাত পদাগঞ্জ এলাকা।
দেশের বিভিন্ন স্থানে আম নিয়ে যাওয়ার জন্য আম বাজারে ইতোমধ্যে ব্যাংকের অস্থায়ী বুথ, কুরিয়ার সার্ভিস ও মালবাহী ট্রাকসহ সব ধরনের ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে স্থানীয় প্রশাসন।
আম চাষী ও আড়তদাররা জানিয়েছেন, এবার ভারতের পশ্চিমবঙ্গ, আসাম, ত্রিপুরা থেকে এক হাজার টন আমের অর্ডার এসেছে। এছাড়া সৌদি আরব, কাতার ও কুয়েত থেকেও আমের জন্য যোগাযোগ করেছেন প্রবাসীরা।
রংপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর বলছে, রংপুরে এ বছর ১,৮৮৭ হেক্টর জমিতে হাড়িভাঙ্গা আম চাষ করা হয়েছে। ফলন আশা করা হচ্ছে প্রতি হেক্টর জমিতে ১৬ মেট্রিক টন। সেই হিসেবে উৎপাদন হবে ৩০ হাজার দুইশ মেট্রিক টন আম, যেটার বাজার মূল্য ধরা হয়েছে দেড়শ থেকে দুইশো কোটি টাকা।
হাড়িভাঙ্গা আমটি দেখতে সুঠাম ও মাংসালো, শ্বাস গোলাকার ও একটু লম্বা। আমের তুলনায় শ্বাস অনেক ছোট, ভিতরে আঁশ নেই। আকারের তুলনায় অন্য আমের চেয়ে ওজনে বেশী, গড়ে ৩টি আমে ১ কেজি হয়। কোন কোন ক্ষেত্রে একটি আম ৫০০/৭০০ গ্রাম হয়ে থাকে। পুষ্ট আম বেশী দিন অটুট থাকে। ছোট থেকে পাকা পর্যন্ত একেক স্তরে একেক স্বাদ পাওয়া যায়। তবে আমটি খুব বেশী না পাকানোই ভালো।
রংপুরের হাড়িভাঙ্গা আম দেশ বিদেশে সরবরাহ করার জন্য এখনই প্লাষ্টিকের ক্যারেট, সুতলি, খাঁচা, পেপারসহ আনুষাঙ্গিক জিনিষের কেনাবেচা শুরু হয়েছে। গতবছরের তুলনায় এবারের এসব প্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের দাম বেড়েছে। গতবছর এসময় বাঙলা ক্যারেট ৭০-৮০ টাকা হলেও এখনই ১০০ টাকা, ভালো মানের ক্যারেট গতবার ৯০-১১০ টাকা হলেও এবার ১২০-১৫০ টাকা। বেড়েছে সুতলী এবং পেপারের দাম।
মিঠাপুকুরের পদাগঞ্জের আম বাগানে গিয়ে দেখা যায়, ঢাকা-চট্টগ্রামসহ দূর-দূরান্ত থেকে অনেকেই এসেছেন আম কেনার জন্য। মৌসুমী আম ব্যবসায়ী কিংবা অনলাইনে যারা কেনাবেচা করেন তারাও এসেছেন। অনেকেই বাগান মালিকদের সাথে কথা বলে চূড়ান্ত করছেন হিসেব-নিকেশ।
সুমিষ্ট হাড়িভাঙ্গা আম এখন বাংলাদেশের মানুষের কাছে অত্যন্ত জনপ্রিয়। শুরুতে রংপুর জেলার মিঠাপুকুর উপজেলার পদাগঞ্জসহ কয়েকটি এলাকায় ব্যপক হাড়িভাঙ্গা আমের চাষ হতো। হাড়িভাঙ্গা আমের জনপ্রিয়তার কারণে এখন রংপুরের বদরগঞ্জ, তারাগঞ্জ, নীলফামারীর সৈয়দপুর, সদর, দিনাজপুরের পার্বতীপুর, খানসামা, চিরিরবন্দরসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় গড়ে উঠেছে এই আমের বাগান। ব্যক্তিগত ও বাণিজ্যিক ভিত্তিতে গড়ে উঠেছে এসব বাগান।
বৈরী আবহাওয়ার কারণে এ বছর এই আমের সাইজ কিছুটা ছোট ও ফলন তুলনামূলকভাবে কম হয়েছে বলে জানিয়েছেন চাষীরা।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।