জাকির হোসেন, রংপুর প্রতিনিধি: জাতীয় পার্টির (জাপা) চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের মৃত্যুর পর তার আসনেই (রংপুর-৩) সংকটে পড়েছে দলটি। এই আসনে উপনির্বাচনে নিজেদের প্রার্থীর মনোনয়ন নিয়ে সংকট রয়েছে। আবার জোট সঙ্গী আওয়ামী লীগের ভোটে লড়াই করার ঘোষণা নতুন সংকটে ফেলেছে দলটিকে।
আসনটিতে ক্ষমতাসীনদের প্রার্থী দেওয়া থেকে বিরত রাখতে মরিয়া জাপার হাইকমান্ড। এ বিষয়ে দুই-এক দিনের মধ্যে আনুষ্ঠানিকভাবেও অনুরোধ জানানো হবে বলে দলের কেন্দ্রীয় একাধিক নেতার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে।
উপনির্বাচন প্রসঙ্গে জাপা মহাসচিব ও বিরোধীদলীয় চিফ হুইপ মসিউর রহমান রাঙ্গা জানান, জাপা চেয়ারম্যান এইচএম এরশাদের শূন্য আসনে বরাবরের মতোই জোটবদ্ধ নির্বাচন চাই। এ বিষয়ে দু-একদিনের মধ্যেই আওয়ামী লীগের কাছে আনুষ্ঠানিক প্রস্তাব জানানো হবে। রংপুর সদর আসনে ক্ষমতাসীন দলকে প্রার্থী না দেওয়ার জন্য অনুরোধ করব আমরা। কারণ এটি দলের চেয়ারম্যানের আসন। জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান এ আসনে দীর্ঘদিন নির্বাচন করে বিজয়ী হয়েছেন। তার অবর্তমানে আসনটিতে ছাড় দেওয়ার জন্য আওয়ামী লীগের নীতি নির্ধারকদের অনুরোধ করব। আশা করি, তারা জাতীয় পার্টির অনুরোধ রাখবেন এবং আমাদের সহায়তা করবেন। এর আগে কয়েকটি নির্বাচন জাতীয় পার্টি ও আওয়ামী লীগ জোটবদ্ধভাবেই করেছে।
দলীয় প্রার্থী মনোনয়ন প্রসঙ্গে জাপা মহাসচিব বলেন, আগামী ৬ সেপ্টেম্বর জাতীয় পার্টির প্রার্থীদের সাক্ষাৎকার গ্রহণ। এরপর চূড়ান্ত প্রার্থীর নাম ঘোষণা করা হবে।
জাতীয় পার্টির কেন্দ্রীয় যুগ্ম দপ্তর সম্পাদক এমএ রাজ্জাক খান বলেন, রংপুর সদর আসনের সঙ্গে আমাদের অস্তিত্বের প্রশ্ন জড়িয়ে আছে। এটা দলের প্রধানের আসন ছিল। আমরা এখনও আশা করছি এখানে আওয়ামী লীগ আমাদের ছাড় দেবে। কারণ ক্ষমতাসীনদের সঙ্গে জাতীয় পার্টির রাজনৈতিক সুসম্পর্ক রয়েছে।
তিনি জানান, সোমবার পর্যন্ত জাতীয় পার্টির মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করেছেন মহানগর জাপার সাধারণ সম্পাদক এসএম ইয়াসির আহমেদ, জেলা জাপার প্রেসেডিয়াম সদস্য শিল্পপতি ফখর উজ জামান জাহাঙ্গির ও এরশাদের ভাগ্নি মেহেজেবুন নেছা টুম্পা। আরও অনেকেই মনোনয়ন ফরম নেবেন বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন।
এদিকে জাপার মনোনয়ন প্রত্যাশীরা এখনও দ্বিধায় রয়েছেন। তাদের ধারণা, এরশাদের পরিবারের কাউকে এ আসনে মনোনয়ন দেওয়া হলে দলের নেতাকর্মীরা নিষ্ক্রিয় হয়ে পড়বেন। আবার আওয়ামী লীগ প্রতিদ্বন্দ্বিতা করলে আসনটি জাপার হাতছাড়া হওয়ার সম্ভাবনাই বেশি। যদিও জাতীয় পার্টির অনেক নেতা মনে করছেন, আওয়ামী লীগ শেষ পর্যন্ত জাপাকে এ আসনে ছাড় দেবে। একাদশ সংসদ নির্বাচনেও আওয়ামী লীগ এ আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেনি। ওই অবস্থায় জাপা চেয়ারম্যান এইচএম এরশাদ ভোট পান ১ লাখ ৪২ হাজার ৯২৬টি। অপরদিকে বিএনপি জোটের প্রার্থী রিটা রহমান পান ৫৩ হাজার ৮৯ ভোট। আসনটিতে মোট ভোটার ৪ লাখ ৪২ হাজার ১৪৯ জন। ভোটের সংখ্যাতত্ত্বের হিসেবে বিএনপি জোটের ফল খুব একটা খারাপ নয়। তাই এবার আওয়ামী লীগ প্রতিদ্বন্দ্বিতা করলে ভোটের সংখ্যাটা পাল্টে যাওয়াই স্বাভাবিক।
উপনির্বাচনে মনোনয়ন পাওয়া নিয়ে সদ্য প্রয়াত এইচ এম এরশাদের পরিবারের মধ্যেই দ্বন্দ্ব স্পষ্ট হয়ে উঠেছে। সোমবার (২ সেপ্টেম্বর) রাত ১০টার দিকে সদর উপজেলার পালিচড়া বাজারে রওশন এরশাদের ছেলে সাদ এরশাদের কুশপুত্তলিকা দাহ করা হয়েছে। এই ঘটনার জন্য এরশাদের আপন ভাতিজা হোসেন মকবুল শাহারিয়ার আসিফের সমর্থকদের দায়ী করা হচ্ছে। এ নিয়ে স্থানীয় জাপা নেতাকর্মীদের দুই গ্রুপের মধ্যে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়াও সংঘর্ষ হয়। খবর পেয়ে পুলিশ এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।
দল ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, নির্বাচনে জাপার মনোনয়ন পাওয়া নিয়ে এরশাদ পরিবারের মধ্যে বিভক্তি দেখা দিয়েছে। গত ৩১ আগস্ট এরশাদের কুলখানিতে রওশন এরশাদ ও তার ছেলে সাদ এরশাদ রংপুরে আসেন। সেখানে সাদ এরশাদ বলেন, দল তাকে মনোনয়ন দিলে তিনি নির্বাচন করতে চান। এদিকে উপনির্বাচনে মনোনয়ন পাওয়ার জন্য এরশাদের ছোট ভাই সাবেক এমপি প্রয়াত মোজাম্মেল হক লালুর একমাত্র ছেলে হোসেন মকবুল শাহারিয়ার আসিফ বেশ কিছুদিন ধরে নগরীতে শোডাউন ও নির্বাচনী এলাকায় গণসংযোগ করছেন।
অন্যদিকে দলীয় মনোনয়ন না পেলে স্বতন্ত্র হয়ে নির্বাচনের ঘোষণা দিয়েছেন এরশাদের ভাতিজা সাবেক এমপি হোসেন মকবুল শাহারিয়ার আসিফ। শেষ পর্যন্ত আসিফ ভোটের মাঠে থাকলে জাপা প্রার্থী বেকায়দায় পড়তে পারেন বলে অনেকেই মনে করছেন।
১৯৭৩ সালের পর থেকেই রংপুর সদর আসনটি আওয়ামী লীগের হাতছাড়া। এর মধ্যে ১৯৯১ সাল থেকে আসনটি জাতীয় পার্টির দখলে। এবার প্রার্থী দেওয়ার ঘোষণা দিয়ে আওয়ামী লীগ দলীয় মনোনয়ন ফরমও বিতরণ শুরু করেছে। প্রার্থী হতে রংপুর থেকে প্রায় ডজনখানেক নেতা বর্তমানে ঢাকায় অবস্থান করছেন। চালিয়ে যাচ্ছেন লবিংও।
তফশিল অনুযায়ী, মনোনয়ন দাখিলের শেষ তারিখ ৯ সেপ্টেম্বর, যাচাই-বাছাই ১১ সেপ্টেম্বর, মনোনয়ন প্রত্যাহার ১৬ সেপ্টেম্বর এবং ভোট ৫ অক্টোবর।
তাই অনেকে মনে করছেন, আসনটি জাতীয় পার্টির ধরে রাখতে হলে যেভাবেই হোক আওয়ামী লীগের সঙ্গে সমঝোতার মাধ্যমে জোটগত নির্বাচন করা। এটা করতে না পারলে জাপার ভরাডুবি অনেকটাই নিশ্চিত।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।