লাইফস্টাইল ডেস্ক: মানুষের রক্তে হিমোগ্লোবিনের পরিমাণ স্বাভাবিকের তুলনায় কম থাকলে তাকে রক্তস্বল্পতা বা রক্তশূন্যতা বা অ্যানিমিয়া বলা হয়। নারীদের মধ্যে রক্তস্বল্পতার সমস্যা প্রকট। পুরুষেরাও কম বেশি এ সমস্যায় আক্রান্ত হয়।
শরীরে আয়রনের অভাব থেকেই এ সমস্যা বাড়তে থাকে। এজন্য রক্তস্বলপ্তার সমস্যা দূর করতে শরীরে আয়রনের ভারসাম্য বজায় রাখা জরুরি। আর এজন্য দরকার পর্যাপ্ত আয়রন সমৃদ্ধ খাবার। ক্লান্তি বা দুর্বলতা হল রক্তাল্পতার প্রাথমিক লক্ষণ।
এছাড়া শ্বাস প্রশ্বাসের স্বল্পতা, মাথা ঘোরা, মাথা ব্যথা, হাত পা ঠান্ডা হয়ে যাওয়া, গায়ের রঙ ফ্যাকাশে হয়ে যাওয়া, বুকে ব্যথাও রক্তাল্পতার উপসর্গ। এসব কোন লক্ষণ দেখা দিলে শরীরে হিমোগ্লোবিনের মাত্রা পরীক্ষা করে দেখা উচিত। স্বাভাবিকের চেয়ে কম হলে তখন খাবার দাবারের তালিকায় পরিবর্তন আনতে হবে।
রক্তাল্পতা বা অ্যানিমিয়ার সমস্যায় অনেকেই ভোগেন। এর ফলে ক্লান্তি বেড়ে যায়, শরীর দুর্বল লাগে। পরিস্থিতি জটিল হয়ে গেলে চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে ওষুধ খেতে হয় এবং খাদ্যাভ্যাসে বদল আনতে হয়। কিন্তু পরিস্থিতি খুব জটিল না হলে সাধারণ কয়েকটি খাবার নিয়মিত খেয়েই রক্তাল্পতার সমস্যা নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব।
শুকনো ফল
হিমোগ্লোবিনের পরিমাণ কমে গিয়েছে? দ্রুত বাড়াতে চাইলে শুকনো ফল খেতে পারেন। কিসমিস, কাজু, খেজুরে প্রচুর আয়রন রয়েছে। অ্যাপ্রিকটেও প্রচুর পরিমাণে আয়রন আছে। হিমোগ্লোবিনের ঘাটতি কমাতে খেতে পারেন ফলটি।
শাক-সবজি
শাক-সবজি খেলে আয়রনের ঘাটতি অনেক কমে। বিটের মতো আনাজ হিমোগ্লোবিনের পরিমাণ বাড়াতে সাহায্য করে। টমেটো, কুমড়ো, ব্রকোলি বা পালং শাকে প্রচুর আয়রন থেকে। এগুলি খেলেও রক্তাল্পতার সমস্যা কমতে পারে।
ফল
বহু খাবারেই আয়রন থাকে। কিন্তু শরীরে পর্যাপ্ত ভিটামিন সি না থাকলে সেই আয়রন শরীর ঠিক করে গ্রহণ করতে পারে না। ফলে এমন ফল নিয়মিত খাওয়া উচিত, যাতে প্রচুর ভিটামিন সি রয়েছে। আম, লেবু, আপেল, পেয়ারার মতো ফলে প্রচুর ভিটামিন সি রয়েছে। এই ভিটামিন সি অন্য খাবার থেকে আয়রন পেতে শরীরকে সাহায্য করে। এ ছা়ড়া, বেদানার মতো ফলও খেতে পারেন। তাতেও প্রচুর আয়রন রয়েছে।
ডিম
রক্তাল্পতার সমস্যার অব্যর্থ ওষুধ ডিম। যারা নিয়মিত ডিম খান, তাদের শরীরে আয়রনের ঘাটতি অনেকটাই কমে যায়।
ডার্ক চকলেট
হিমোগ্লোবিনের ঘাটতি কমানোর মোক্ষম দাওয়াই ডার্ক চকোলেট। মিল্ক চকোলেট বেশি পরিমাণে খেলে রক্তে শর্করার মাত্রা বাড়তে পারে। কিন্তু ডার্ক চকোলেটে সেই সমস্যা নেই। বরং এটি খেলে আয়রনের ঘাটতি অনেকটাই কমবে।
সামুদ্রিক মাছ
সামুদ্রিক মাছে প্রচুর আয়রন থাকে। যারা রক্তাল্পতায় ভুগছেন, তারা এই মাছ খেতে পারেন। তবে কারও কারও এই ধরনের মাছ খেলে অ্যালার্জির সমস্যা হয়। তাঁরা সামুদ্রিক মাছ খাওয়ার আগে চিকিৎসকের পরামর্শ নেবেন।
ডাল
রক্তস্বল্পতা দূর করতে প্রতিদিন মসুর, মুগ কিংবা মাসকলাইয়ের ডাল খেতে পারেন। কারণ এই খাবারগুলিতে প্রচুর ফোলেট পাওয়া যায়। ফোলেট রক্তের হিমোগ্লোবিনের মাত্রা ঠিক রাখতে সাহায্য করে। তাই আমাদের প্রতিদিনের খাদ্যতালিকায় ফোলেটসমৃদ্ধ খাবার রাখা অত্যন্ত জরুরি।
কলিজা
কলিজায় প্রচুর পরিমাণে আয়রন ও ভিটামিন বি আছে। রক্তস্বল্পতা রোগের প্রধান কারণ দেহে আয়রনের ঘাটতি। তাই রক্তশূন্যতায় ভুগছেন যারা তাদের নিয়মিত খাবার তালিকায় সম্ভব হলে কলিজা রাখা উচিত। খাসি বা গরুর কলিজায় রয়েছে প্রচুর পরিমাণে আয়রন। তবে যাদের উচ্চ রক্তচাপ রয়েছে তাদের অবশ্যই গরুর কলিজা থেকে দূরে থাকতে হবে।
দুধ
দুধ শরীরের জন্য প্রয়োজনীয় ভিটামিন ও প্রোটিন যোগাতে সাহায্য করে। দুধে খুব বেশি পরিমাণে আয়রন না থাকলেও এতে প্রায় সব রকমের ভিটামিন আছে। এছাড়াও দুধে আছে পটাশিয়াম ও ক্যালসিয়াম। এই খাদ্য উপাদানগুলো রক্তের হিমোগ্লোবিন বাড়িয়ে রক্তশূন্যতা দূর করতে সহায়তা করে। তাই রক্তশূন্যতার রোগীদের জন্য নিয়মিত দুধ খাওয়া উপকারী।
সয়াবিন
সয়াবিনে রয়েছে উচ্চমাত্রায় আয়রন এবং ভিটামিন। এর মধ্যে থাকা সাইটিক অ্যাসিড রক্তস্বল্পতার সঙ্গে লড়াই করে। সয়াবিনের রয়েছে কম পরিমাণ চর্বি ও অধিক পরিমাণে প্রোটিন। প্রোটিনও এনিমিয়া প্রতিরোধে উপকারী।
মধু
মধু আয়রনের একটি ভালো উৎস। আয়রন ছাড়াও মধুতে কপার ও ম্যাঙ্গানিজ আছে। এই উপাদানগুলো শরীরে হিমোগ্লোবিন প্রস্তুত করতে সহায়তা করে। তাই রক্তশূন্যতা দূর করতে প্রতিদিন ১ চামচ মধুর সাথে পরিমাণগত লেবুর রস মিশিয়ে পান করুন।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।