রক্তের রং কেন লাল, এই প্রশ্নটি ধরে এগিয়ে গেলে তার শেষ মাথা একদম নক্ষত্রে গিয়ে ঠেকবে। কীভাবে, তা জানতে প্রশ্নের পিঠে প্রশ্ন করে এগিয়ে যাই। রক্ত কেন লাল? কারণ, তাতে হিমোগ্লোবিন নামে একধরনের লাল রঙের কণিকা আছে। হিমোগ্লোবিন কেন লাল হবে? কারণ তাতে লোহা আছে। লোহা থাকলেই লাল হতে হবে? না, লোহার সঙ্গে অক্সিজেন আছে। অক্সিজেন ও লোহা একত্রে মিলে হিম নামে একটি রাসায়নিক যৌগ তৈরি করে।
এটি লাল আলো প্রতিফলিত করে। প্রতিফলিত লাল আলো আমাদের চোখের রেটিনায় সাড়া ফেলে বলে রক্তকে লাল দেখি। রক্তে লোহা এল কোথা থেকে? খাদ্য থেকে প্রক্রিয়াজাত হয়ে দেহে মেশার মাধ্যমে। খাদ্যের মধ্যে লোহা এল কোথা থেকে? মাটি ও পানিতে থাকা বিভিন্ন উপাদান থেকে। বলা যায়, পৃথিবীর এখানে-ওখানে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে থাকা পদার্থ থেকেই এসেছে লোহার জোগান। পৃথিবীতে লোহা এল কোথা থেকে?
সৌরজগৎ যখন গঠিত হয়, তখন অনেক ধুলা ও গ্যাসের পাশাপাশি লোহাও ছিল। সূর্য ও সূর্য-পরিবারের অন্যান্য গ্রহ বিস্তৃত এলাকাব্যাপী ধুলা ও গ্যাসের বিশাল মেঘের সন্নিবেশে তৈরি হয়। এদের মাঝে ‘বহিরাগত’ হিসেবে লোহা প্রবেশ করে। সৌরজগতের সৃষ্টির সময় লোহা কোথা থেকে এল? সুপারনোভা বিস্ফোরণ থেকে। সুপারনোভা কী? বিশেষ ধরনের ভারী নক্ষত্রের বিস্ফোরণ। সুপারনোভাতে লোহা এল কোথা থেকে? অন্য কোনো স্থান থেকে আসেনি, সুপারনোভার পেটের ভেতরেই লোহা সৃষ্টি হয়েছে।
সুপারনোভাতে কীভাবে লোহা সৃষ্টি হয়? নক্ষত্র হিসেবে সুপারনোভা যখন গঠিত হয়, তখন প্রাথমিক অবস্থাটি হাইড্রোজেন গ্যাস থেকেই শুরু হয়। হাইড্রোজেন হচ্ছে সবচেয়ে হালকা মৌল। প্রচুর পরিমাণ গ্যাস যদি একত্র হয়, তাহলে এত বেশি মহাকর্ষীয় চাপ দেয় যে নক্ষত্রের ভেতরের হাইড্রোজেন পরমাণুগুলো নিউক্লিয়ার ফিউশন বিক্রিয়ার মাধ্যমে পরস্পর একত্র হয়ে হিলিয়াম পরমাণু তৈরি করে। হিলিয়াম হাইড্রোজেনের চেয়ে তুলনামূলকভাবে বেশি ভারী মৌল। ভেতরের সব হাইড্রোজেন যখন শেষ হয়ে যায়, তখন হিলিয়ামগুলো একত্রে মিলে আরও ভারী মৌল কার্বন তৈরি করতে থাকে।
হিলিয়াম শেষ হয়ে গেলে কার্বনের পরমাণু মিলে আরও ভারী মৌল অক্সিজেন তৈরি করে। এভাবে বাড়তে বাড়তে লোহা পর্যন্ত যায় এবং একসময় প্রচণ্ড শক্তিশালী ঊর্ধ্বমুখী চাপে নক্ষত্রটি বিস্ফোরিত হয়ে টুকরা হয়ে চারদিকে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে পড়ে। বিস্ফোরণের মাধ্যমে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে এ রকমই কোনো সুপারনোভার ধ্বংসাবশেষ এসে ঠাঁই করে নিয়েছিল সৌরজগতের শিশুকালে।
তাদের সঙ্গে নিয়েই পৃথিবী গঠিত হয়েছিল এবং তাদেরই আশীর্বাদ হিসেবে ধরে নিয়ে অনেক অনেক প্রাণের রক্তের বহমান ধারা তৈরি হয়েছে। মানুষও তাদের মধ্যে একটি প্রজাতি। মানুষের শরীরের শিরায় শিরায়ও নক্ষত্রের তাপীয় গান বাজে। রক্তের প্রতি মিলিমিটার লাল রং বলে দেয় মানুষের ভেতরে নক্ষত্র বসবাস করছে। মানুষ নক্ষত্রেরই অংশ।
আকাশের বিলিয়ন বিলিয়ন নক্ষত্রের মাঝে সূর্য আসলে খুবই নিরীহ ও শান্তিপ্রিয় একটি নক্ষত্র। নক্ষত্র যত ভারী হবে তার শক্তি তত বেশি হবে। সুপারনোভার মতো বিস্ফোরিত হতে কিংবা লোহা তৈরি করতে হলে যে পরিমাণ শক্তির দরকার, সূর্যের মাঝে তা নেই। সূর্যের বুকে হাইড্রোজেনগুলো পুড়ে হিলিয়াম হবে। তারপর হিলিয়ামগুলো পুড়ে কার্বন হবে। এরপরই সূর্য তার ক্ষমতা হারিয়ে প্রায় মরে যাবে (নিষ্ক্রিয় হয়ে যাবে)।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।